সর্বশেষঃ

ভোর রাত ৩টা থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ॥ এরপর সারাদিন লুকোচুরি খেলা

ভোলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরমে ॥ ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা

ভোলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম আকার ধারণ করেছে। গতকাল রোববার বেলা ৩টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত টানা ৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। এতে তারা ক্ষুব্ধ হন। যদিও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগ জানিয়েছে, ভোলার গ্যাসভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াট রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। তবে, বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ চালু থাকবে। কিন্তু, বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখতে পারেনি বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগ। রোববার বেলা ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। রাত ১০ টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। প্রায় ৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। ফলে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাদের অনেকেই আবার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।
বিদ্যুৎ গ্রাহকরা বলেন, ভোলায় বিদ্যুৎ নিয়ে তালবাহানা চলছে। ভোলায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থাকলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট মেনে নেওয়ার মতো নয়। তারা আরও বলেন, পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে সাড়ে ৩৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র চালানোর কারণে কিছু দিন পর-পর বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। সন্ধ্যার পর থেকে অকারণে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং মেনে নেয়া যায়না। এদিকে বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ সাধারণ গ্রাহকরা ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগ ওজোপাডিকো তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে এক জরুরী নোটিশের মাধ্যমে জানানো হয়, রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টে ত্রুটির কারণে রোববার কয়েক ঘন্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। উক্ত সময়ে ভোলা বিদ্যুৎ সরবরাহ, ওজোপাডিকোর আওতাধীন এলাকায় বিকল্প ব্যবস্থা বিদ্যুৎ চালু থাকবে, যার কারণে কিছু কিছু এলাকায় উক্ত সময়ে লোডশেডিং হতে পারে। গ্রাহকের সাময়িক অসুবিধার জন্য ওজোপাডিকো, ভোলা আন্তরিকভাবে দু:খপ্রকাশ করছে।
ভোলায় বিদ্যুতের ব্যাপক লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে রোববার ভোলা সদর উপজেলাসহ পুরো জেলা রাতে অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। রোববার বেলা ৩টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত টানা প্রায় ৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এতে করে সরকারি ও বেসরকারি অফিস-আদালতে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কাজ করতে সমস্যা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অনলাইনে ঠিকভাবে কোন মিটিং করতে পারছি না। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে জেলার শিল্প ও কল-কারখানায় উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মেসার্স খান ফ্লাওয়ার মিলস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জামাল খান বলেন, রোববার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে আমাদের মিলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে এক ঘন্টা মিল বন্ধ রাখতে হয়। আর এক ঘন্টা মিল বন্ধ রাখলে কর্মচারির বেতনসহ প্রায় ৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়। অথচ প্রতিমাসের বিদ্যুৎ বিল জমা দিতে যদি একদিন বিলম্ব হয়, তাহলে ৫% সুদ ধার্য্য হয়। অর্থাৎ কোন গ্রাহকের এক মাসের বিদ্যুৎ বিল এক লাখ টাকা জমা দিতে একদিন বিলম্ব হলে তাকে সুদআসলে এক লাখ ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এটা খুব দুঃখজনক। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবাও।
এ বিষয়ে শাহবাজপুর জেনারেল হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও ইউনিটি ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) মোঃ এরশাদুল ইসলাম আজাদ জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অপারেশন চলাকালীন সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলে অপারেশন থিয়েটারের সকল যন্ত্রপাতি বন্ধ হয়ে গেলে রোগীর জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়। এতে চিকিৎসক/সার্জনরা রোগীর জীবন বাচাঁতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এ ছাড়া বহির্বিভাগে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে রিপোর্ট ডেলিভারি দিতে বিলম্ব হওয়ার কারণে ডাক্তার দেখিয়ে রোগীরা যথাসময়ে চিকিৎসা সেবা না নিয়েই বাসায় চলে যান। যার কারণে রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। এ ছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আর্থিক ক্ষতি তো রয়েছেই।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগ ওজোপাডিকো ভোলার নির্বাহি প্রকৌশলী মোঃ মামুন রোববার রাতে ভোলার বাণীকে বলেন, রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টে ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তবে, বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বিকেলে আকস্মিক ঝড়ে বিদ্যুতের লাইনে সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।