সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-১৫

ড. তাইবুন নাহার রশিদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : আজ আমি যেমন ওকে ভালবাসি ও নিশ্চয় আমাকে ভালবাসে। অথচ আমরা কেউ কারোর কাছে প্রকাশ করছি না। আশ্চর্য ডোরা আজ পর্যন্তও বিয়ে করল না। আর আমি ? কেন কার জন্য করলাম না ? সেকি ডোরার জন্য ? মন বলল-হ্যাঁ। আমার সে প্রেমের উচ্ছলতা ছিল না, ব্যকুলতা ছিল না, গভীর প্রেম ধীর স্থিও, নিরব নিথর পবিত্র। হ্যাঁ ডোরাকে আমি ভালবাসি। তবে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করিনি কেন ? মনকে প্রশ্ন করলাম। জানিনা কেন জানি সেসব কথা আবছা আবছা মনে পড়ে। পড়াশুনার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করেছি, মান প্রতিপত্তি যশের মধ্যে ঘুরে বেড়িয়েছি। যৌবন ? কখন যে হাঁটি হাঁটি পায় থেকে চলে গেল বলতে পারব না। আজও আমার যৌবন আছে, তাকে যেন ব্যকুলতার কাছে পেতে ইচ্ছে করে না। ভালবাসতে ইচ্ছে করে, স্পর্শ করতে ইচ্ছে করে না।
সুশান্ত বলল- কিরে প্রশান্ত তোর আজ হোল কি ? উমা বলল- তুই নাকি খুব গল্প করিস ? বললাম, শরীরটা ভাল নেই। সুশান্ত বলল- শরীর না মন ? হাসলাম। বললাম- দু’টোই। আমরা সকলেই নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। তখন বিকেল হয়ে আসছে, শুক্ল পক্ষের বড় চাঁদটা নদীর ওপাড়ে পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে আমার দিকে চেয়ে চেয়ে হাঁসছে। সত্যি দেশে থাকতে যেমন মনে হত জ্যোৎ¯œা রাতকে স্বপ্নপুরী, আলোয় ঝলমল করত। কত কবিতা লিখেছি, গান গেয়েছি, নৌকা করে উজান গাংয়ে গান গেয়ে দাঁড় টেনেছি। জ্যোৎ¯œা রাতে পানসী নৌকার মাঝিরা ভাটিয়ালীর গান, করুণ সুরে বাঁশী বাজিয়ে নদীর নিস্তব্ধতাকে খান খান করে টুকরো টুকরো করে দিত। সে এক অপূর্ব সুর লহরীর ঐক্যতান। সমস্ত পৃথিবী যেন সেই জ্যোৎ¯œা রাতের বাঁশীর সুরে আর নৌকার মাঝির ভাটিয়ালী গানের মাতমজরীতে, নিস্তব্ধ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ত নিবিড় আবেশে।
আজ এইসব বড় বড় মহাধনীর দেশে এসে বড় বড় মহানগরীর বুকে সত্যিকার রূপকে, সত্যিকার ভালবাসাকে উপলব্ধি করতে পারি না। জ্যোৎ¯œা রাত, কোথায়——– ? সুন্দর সুন্দর নিয়মের আলোয় সেই জ্যোৎ¯œা আজ মরে গেছে। কোথায় আজ সেই তারায় ভরা আকাশ ? সোনালী বুটিতে ঝকঝক করত, মধ্য রাতে আকাশেল চাঁদ নীচে নেমে দীঘির বুকে ছায়া লেত। দীঘির রক্তলাল শাপলা নতুন বৌয়ের মত রক্ত চেলী পরে লাজুক লাজুক চোখে মধ্য রাতের প্রহর ঘোষণা করত। কোথায়, কোথায় সেই সুন্দর দিনগুলি ?
মনে পড়ল শরৎকালে কথা, ঝরঝরে পথ-ঘাট। কাঁশ বনে কাঁশ ফুলে হেসে হেসে চামর দোলাত। ম্যধরাতে শেফালির মৃদু মৃদু গন্ধ প্রাণ আনচান করত। প্রাতে বাড়ীর উঠোনে ঝরা শেফালির মেলা। কতদিন মধ্য রাতে জেগে বসে থাকতেম, পাড়ার বন্ধুরা ডাকতে আসবে। বাড়ী বাড়ী থেকে বকুল, শিউলী, গোলাপ, পদ্ম, জুই ফুল কুড়াতে যাওয়ার জন্য। এসব যেন আজ সিনেমার ছবির মত, হেমিল্টনের নদীর পাড়ে আমার চোখের সামনে আজ হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আমার মাতৃভূমির কাছে এইসব বিশাল বিশাল নগর এই ধনীদের দেশ তুচ্ছ। আস্তে আস্তে বেলা গড়িয়ে এল। আমরা গাড়ীতে উঠলাম টরেন্টো ফিরে আসার জন্য। পথে আর কোন কথা হয়নি। সুশান্ত ড্রাইভ করছিল। উমা পিছনের সিটে বসেছিল। তার পরের দিন আমি মন্টিলের পথে পাড়ি জমালাম। সারা পথে ক্লান্তি শ্রান্তিতে নেতিয়ে পড়েছিলাম। উমার আদর যতেœর কথা সারা পথে আমার বার বার মনে হয়েছে। বাসায় এসে ঘর খুলে লেটার বক্সে চিঠি দেখলাম। অনেক অনেক চিঠি এসে পড়ে আছে। একটি পরিচিত অক্ষরের চিঠি আমাকে অভিভূত করে ফেলল। তাড়াতাড়ি খামটা খুলে পড়ে অবাক হয়ে গেলাম। এযে ডোরার চিঠি। লিখেছে—-

(চলবে——)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।