মধ্যরাত : পর্ব-১৪

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : দুপুরের লাঞ্চের সময় হয়ে এল। উমা টেবিলে খাবার নিয়ে গেল। উমার হাতের রান্না খুব ভাল লাগছে। ছোট বেলা মা-কাকিমা’র হাতের রান্না এত ভাল খেয়েছি। মা-কাকিমা’র মতই পরম ¯েœহে, আদরে আমাকে এটা খাও বলে পাতে তুলে দিচ্ছে। উমার ¯েœহশীতল মুখের পাশে যেন আমার মায়ের মুখখানা ভেসে উঠছে। কত বছর এত আদর করে, এত ¯েœহে, এত ভালবাসায় আমাকে এমনি করে কাছে বসে কেউ খাওয়ায়নি। খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। বহুদিন পর যেন কার মধুর পরশ পেয়ে আমি শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

বিকাল হোল। সুশান্ত ইউনিভার্সিটি থেকে এল। কিরে এখনও ঘুমুচ্ছিস ? বললাম, তাই অনেক দিন পরে একটু ঘুমিয়ে নিলাম। বলল, উঠে পড়, চল চা খাই। বাথরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে এলাম। দেখলাম টেবিলে চা হাজির। সিঙ্গারা ছানা, নিমক পারা। এতক্ষণ আমি ঘুমিয়েছি, উমা বসে বসে আর এসব চায়ের আয়োজন করেছে। সত্যি মেয়েরা বড় ত্যাগী। বড় আদর্শ, ত্যাগী পরকে ভালবাসতে জানে। অন্যকে যতœ করে নিজে খুশী হয়। মেয়েরা মায়ের জাত। সাধে কবি, একথা বলেছেন।
সুশান্তকে আমি বললাম, আমি কাল ডোরেই মণ্ট্রিল চলে যাচ্ছি। ছুটি ফুরিয়ে এল। সুশান্ত বলল সেকি ? এত তাড়াতাড়ি চলে যাবি ? তোকে নিয়ে একটু ঘুরতেও পারলাম না। বললাম, অনেকত দেখলাম। উমার হাতের ভালো রান্না, আর থাকার কি প্রয়োজন ? সুশান্ত বলল, টরেন্টো অনেক বড় শহর। তোকে একটু ঘুরিয়ে দেখিয়ে নিই। তারপর উমাকে নিয়ে তোর ওখানে যাব। তার পরদিন সুশান্তের ছুটি ছিল। ভোরে উঠে চা-নাশতা সঙ্গে নিয়ে, আমাকে উমাকে নিয়ে হেমিন্টনের পাথে পাড়ি জমাল। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা হেমিল্টন এসে গেলাম। হেমিল্টন বিরাট লোহা-লক্করের ব্যবসা কেন্দ্র। বিরাট নদীর উপর দিয়ে বিরাট বিরাট ব্রীজ। একটা রেষ্ট এরিয়াতে আমাকে নিয়ে ওরা নেমে পড়ল। সেখানে অনেক লোকের মনের কথা লয়ে বয়ে যাচ্ছে দেশহতে দেশান্তরে প্রিয়ার কাছে।
আমি ডোরার কথা ভাবছিলাম। এখন ডোরা আমার পাশে থাকলে কেমন হত ? নিজের মনকে বার বার শুধোলাম। আচ্ছঅ ওর সাথের প্রফেসাররা কি বলল যেন, ডোরা একটা উপন্যাস লিখেছে। আকাশের কত রং, তাতে কি আমার কথা আছে ? ডোরাত আমাকে কিছু বলেনি। বোধ হয় ওর লজ্জা লেগেছে, ওকে আমিও এ সমৃদ্ধে যেকান প্রশ্ন করিনি। আমারও তখন একটু অভিমান হল। ডোরা এতকথা বলল আমাকে কিন্তু উপন্যাসের কথা বললনা কেন ? সুশান্ত বলল, কিরে প্রশান্ত কবি হয়ে গেলি নাকি ? আচ্ছা এক সময়ে তুইত ভাল লিখিয়ে ছিলি। এখন কি ছেড়ে দিয়েছিস ? না অভ্যাস রেখেছিস ? আমি বললাম, ঐ নিয়েই আমি এখন ভগবানের কৃপায় বেঁচে আছি। ঐ আমার মানস প্রিয়া। সুশান্ত বলল, আয় চা খা, উমা প্রশান্তকে চা খাও। চা খেতে যেন ডোরার কথা আমার বেশী করে মনে পড়ছে। ডোরা বোধ হয় আমার কথা ভাবছে, এত চাপা মেয়ে বাবা। নিজের দুর্বলতা কিছুতেই প্রকাশ করবে না।

(চলবে———–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।