ভোলায় নিউমোনিয়া রোগীর প্রকোপ:হাসপাতালের বিছানায় ঠাঁই পাচ্ছে না শিশুরা:চিকিৎসা নিচ্ছে মেঝেতে

ভোলায় হঠাৎ করেই দেখা দিয়েছে নিউমোনিয়া রোগীর প্রকোপ। শিশুরা জ্বর, সর্দি কাশি ও নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনীত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভোলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বিছানা সংকটের কারণে শিশু রোগীরা মেঝেতে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

বুধবার দুপুরে ভোলা সদর উপজেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, এক বিছানায় ২-৩ জন শিশু গাদাগাদি করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে বিছানা সংকট থাকায় অনেক শিশু আবার শিশু ওয়ার্ডে ঠাঁই না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে। তাদের অধিকাংশরাই জ্বর, সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনীত রোগে ভুগছে। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে ১১ মাসের শিশু সন্তান শাওনকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন একজন সরকারি চাকরিজীবি বাবা পলাশ। জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, জ্বর ও কাশি নিয়ে গত মঙ্গলবার তার ছেলেকে এ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করাই। কিন্তু এ হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসার কোন পরিবেশ নেই। এক বিছানায় ৩ জন করে শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। বিছানা সংকট। বিদ্যুৎ নেই। জেনারেটরের কোন ব্যবস্থা নেই। অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ অসুস্থ্য শিশুরা যেন আরও অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছে। জ্বর, কাশি ও ঠান্ডাজনীত রোগের জন্য গত তিন দিন আগে সাড়ে ৪ মাস বয়সী শিশু নুহাকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করান তার বাবা নাছির মাঝি। তিনি বলেন, এক বেডে ৩ জন করে শিশু বসাইয়া দেয়। শিশুকে ক্যানোলা দেওয়ার জন্য নার্সকে ডাকলে সারা পাওয়া যায়না। ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নবীপুর এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী বিবি মরিয়ম জানান, ঠান্ডাজনীত কারণে তাদের ২ মাস ৭ দিনের শিশু সন্তান ছানীকে ভর্তি করান গত ৪ অক্টোবর সোমবার। কিন্তু তাদের সেই অসুস্থ্য শিশু সন্তানকে এক বিছানায় দুই জন অসুস্থ্য শিশুসহ চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
এদিকে বিছানায় ঠাঁই না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের শান্তির হাট এলাকার ৩ মাসের শিশু তাবিয়া সুলতানা। তার মা আরজু বেগম জানান, নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হলে গত তিন দিন আগে তার সন্তানকে এ হাসপাতালে ভর্তি করান। শিশুর মা জানান, শিশু ওয়ার্ডে বিছানা সংকটের কারণে শিশুকে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে করে আমাদের শিশু সন্তানটি আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। শুধু শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতে নয়। শিশু ওয়ার্ডের বাইরেও বহু শিশুকে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। একদিকে, গরম অন্যদিকে, গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে গিয়ে উল্টো অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশু রোগীরা। এতে করে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীর স্বজনরাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৬ দিনে ৩০ জন শিশু নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ছাড়া ঠাণ্ডাজনিক কারণে আরো ১৫৬ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিশু ওয়ার্ডে হঠাৎ রোগীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় অনেক সময় তাদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিশ খেতে হচ্ছে ডাক্তার ও নার্সদের। বুধবার ভোলা জেনারেল হাসপাতালে নতুন করে আরও ৮ জনসহ ৮০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপতালের শিশু ওয়ার্ডে ৩১টি বেডের বিপরীতে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছে ৮০ জন রোগী।
এ বিষয়ে শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্স রোজিনা ইসলাম জানান, শিশু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে বেডের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই একটি বেডে গড়ে ২/৩ জন করে শিশু রোগী গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছে।
ভোলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. নিরুপম সরকার সোহাগ বলেন, প্রচণ্ড গরম এবং ঠাণ্ডার কারণে শিশুদের নিউমোনিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। জনবল সংকট থাকায় চিকিৎসা দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে, পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের কার্যক্রম। হাসপাতালে কোন জেনারেটরের ব্যবস্থা নেই। জনবলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

 

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।