তিন মাসের এমপিও হারালেন ভোলাসহ দেশের ১৩১ প্রতিষ্ঠান প্রধান

এনটিআরসিএর দ্বিতীয় চক্রের শিক্ষক নিয়োগে শূন্যপদের ভুল তথ্য দিয়েছিল কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান। ফলে, শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ পেয়েও কয়েক হাজার প্রার্থী যোগদান ও এমপিওভুক্ত হতে জটিলতায় পড়েছিলেন। মহিলা কোটা, নবসৃষ্ট পদে নিয়োগ, প্যাটার্ন জটিলতাসহ নানা সমস্যায় তারা এমপিওভুক্ত হতে পারছিলেন না। এসব জটিলতার মূলে ছিলেন শূন্যপদের ভুল তথ্য পাঠানো প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষক নিয়োগের ভুল তথ্য পাঠানো এমন আরও ১৩১ জন প্রতিষ্ঠান প্রধানের ৩ মাসের এমপিও কেটে রাখার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে দায়ীদের এমপিও কেটে রাখার নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে।
এর আগে একই দায়ে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান প্রধানের ৩ মাসের এমপিও কেটে রাখার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগের ভুল তথ্য পাঠানো এরকম ৯ শতাধিক প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমপিও বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছিল।
এ দফায় তিন মাসের বেতন হারানো ১৩১ শিক্ষকের তালিকায় আছেন- ভোলার সদর উপজেলার ওবায়দুল হক মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এবিএম এনামুল হক, বোরহানউদ্দিন উপজেলার উদয়পুর জুনিয়র হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: ফয়জুল হক, লালমোহন উপজেলার মহেষখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইয়াসিন, চরফ্যাশন উপজেলার বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিলারা বেগম, পূর্ব ওসমানগঞ্জ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক।
আরো আছেন- ঢাকার নাহার একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুর রহমান, চাঁদপুরের মতলব উপজেলার নন্দলালপুর ছামাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সারওয়ার হোসেন, চট্টগ্রামের হাটহাজারীর নাজির হাট কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ এমরান হোসেন, পিরোজপুরের নাজিরপুরের নাজিরপুর কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের কিশোরগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম আজম, রংপুরের পীরগঞ্জের লালদিঘী গার্লস একাডেমির প্রধান শিক্ষক আবু ইমাম মো. রাশেদুন্নবী, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার মতিয়ন নেছা জুনিয়র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েল সহকারী শিক্ষক মো. আশরাফ আলী।
এ তালিকায় আরও আছেন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মহতোছিন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফয়জুর রহমান, শরীয়পুরের ভেদরগঞ্জের মনোয়ারা সিকদার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রাশেদুল ইসলাম, রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার মৌয়াগাছ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বকুল চন্দ্র রায়, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার মুনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল মিত্র চাকমা।
তিন মাসের এমপিও হারিয়েছেন, সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জের মাহমুদ উস সামাদ ফারজানা চৌধুরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কিরীট ভূষণ আচার্য, পাবনাার ভাঙ্গাড়ার ময়দানদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান, রাজবাড়ীর কালুখালী সাউলতলা হরুননেছা স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো হাফিজুর রহমান খান, বরিশালের হিজলা মাউতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোবারক হোসেন খাঁন, নীলফামারীরর সৈয়দপুরের খালিশা বেলপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ মো. আমিরুল ইসলাম, নিরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার খিদিরপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফারুকুজ্জামান, বাগের হাট সদর উপজেলার কোমরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের খাদিজা খাতুন এবং নেত্রকোনা সদরের কুনিয়া ফজরেন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মতিউর রহমান আকন্দ।
এ তালিকায় আরও আছেন, হবিগঞ্জের মির্জাপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সেবিকা রায়, ভালুকার মিরকা হাসিনা বানু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এস কে নুরুন্নাহার বেগম, ভান্ডারিয়ার মধ্য চড়াইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম জোমাদার, লালমোহনের মহেষখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইয়াসিন, ঝিনাইদহের মহেশপুর পৌর মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মোমিমুল হক, রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুরটুন অরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক আহমেদ হোসেন শাহ, গাইবান্ধার লক্ষ্মীপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. লক্ষ্মীপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মতিন, ফেনীর মাহবুবুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মাহমুদবাগ ইসলামিয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সামাদ, চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামাল হোসেন, যশোরের নতুন খয়েরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ এহসানুর রহমান, খাগড়াছড়ির দিঘীনালার পাবলাখালী শান্তিপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত বরণ বড়ুয়া এবং ময়মনসিংহের ফুলপুরের পাগলা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ছাইদুল ইসলাম। এছাড়াও সর্বমোট ১৩১ প্রতিষ্ঠান প্রধান এমপিও হারিয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন জারি হওয়া এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে কিছু নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। বিধান ছিল, এসব পদে নিয়োগে মন্ত্রণালয় আলাদা আদেশ জারি করবে। এ পদগুলো নবসৃষ্ট পদ নামে বহুল পরিচিত। এসব প্রতিষ্ঠান প্রধান আদেশ জারির আগেই ২য় চক্রে শিক্ষক নিয়োগের চাহিদা হিসেবে সে পদগুলোকে শূন্য দেখিয়েছিলেন। ফলে, সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা এমপিওভুক্ত হতে পারছিলেন না। পরে অবশ্য এসব শিক্ষকের জটিলতা নিরসন করেছে সরকার। এনটিআরসিএর মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েও প্রার্থীদের এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ চাহিদার জন্য। তাই প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই, গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর দায়ী প্রতিষ্ঠান প্রধানদের তিন মাসের এমপিও কর্তন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে।

সুত্র : দৈনিক শিক্ষা ডটকম।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।