আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস:ভোলায় কমছে করোনা, বাড়ছে পর্যটক

মহামারী করোনার থাবায় দেশের একমাত্র উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্রে যেন অনেকটা ভাটা পড়েছে। করোনার আগে ভোলার সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেলার সর্ব দক্ষিণের উপজেলা চরফ্যাশনের চর কুকরি-মুকরি, বেতুয়া লঞ্চঘাট, তাড়ুয়ার দ্বীপ ও মনপুরায় পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকত। এসব এলাকায় একসঙ্গে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, চিত্রা হরিণসহ নানা প্রজাতির প্রাণী, লাল কাকড়া ও বিশাল সমুদ্র সৈকত দেখতে ভ্রমনপিপাসু মানুষের ঢল নেমেছিল। সেখানে পর্যটকদের উপস্থিতি কিছুটা কমে গেছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, করোনা সংক্রমণ অনেকটা কমে যাওয়ায় এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার পর ভোলার সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে। বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। তারা ধারণা করছেন, সামনে শীত মৌসুমে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ফের পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে। “একপাশে বঙ্গোপসাগর, অন্যপাশে নিবিড় বনভূমি”। উত্তাল ঢেউ, বৈরী বাতাস আর জলোচ্ছ্বাসের গর্জন, সবুজ দ্বীপ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এখানে পর্যটকদের দিবে নিবিড় ভালোলাগার এক চিরসবুজ প্রশান্তি। চোখ ধাঁধানো সবুজের সমারোহ আর শান্ত নিশ্চুপ প্রকৃতি যে কোন পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। এখানে দেখতে পাওয়া যাবে নানা প্রজাতির পশু-পাখি ও প্রাণী। শিয়ালের দল,হরিণের পাল, আর বন্য মহিষের বিশাল বাহিনীগুলো নিজ চোখে দেখতে বিশেষ কোন ভাগ্য না নিয়ে গেলেও অনায়াসে চোখের আঙিনায় চলে আসবে এরা। নাম না জানা হরেক রকমের গাছের সাথে সারি সারি নারিকেল গাছ আর বিশাল বালুকাময় চর দেখে মনে হবে কোন এক সৈকত পাড়। শীতকালে দেখা মিলবে হাজার হাজার অতিথি পাখির। অপরূপ সৌন্দর্যের প্রাকৃতিক নিদর্শনের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা তাড়ুয়া দ্বীপ অন্যতম। এটি অনেকের কাছে লাল কাঁকড়ার দ্বীপ নামেও পরিচিত। দ্বীপের এক প্রান্ত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে পরিবেষ্টিত, অপর প্রান্তে সমুদ্র সৈকতের নয়নাভিরাম দৃশ্য। ভোলার চরফ্যাশনের সর্বদক্ষিণে তাড়ুয়া দ্বীপে যাতায়াতের নেই সুব্যবস্থা। এ দ্বীপকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা কাজে লাগাতে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে স্থানীয়রা।

জেলার মুল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক অপরুপ সৌন্দর্যের সী-বিচ আর হরিণের চারনভুমি খ্যাত রূপালী দ্বীপ মনপুরা সম্ভাবনাময় আকর্ষনীয় পর্যটনকেন্দ্র। এখানেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তানিবাস গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
চর্তুদিকে মেঘনা নদীবেষ্টিত সবুজ শ্যামল ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মনপুরা। সু বিশাল নদী-নালা ,চতুর্দিকে বেড়ীবাঁধ, বিভিন্ন ধরনের ধানের ক্ষেত, বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগনে সমৃদ্ব মনপুরা। এটি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের কাছে যেমন আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় জায়গা তেমনি বিদেশীদের কাছেও। যেসব জেলার বা বিভাগের লোকজন মনপুরা ভ্রমনে বা কাজের জন্য এসেছেন বা অবস্থান করেছেন এখানকার মানুষকে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন এবং ভালবেসেছেন। এখানে না আসলে বোঝাই যাবেনা সবুজের দ্বীপ মনপুরায়  কি সৌন্দর্য লুকায়িত আছে। পর্যটনের কি অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে পুরানো এ দ্বীপে। পর্যটক আর ভ্রমন পিপাসু মানুষকে মুগ্ধতার বন্ধনে আটকে দেওয়ার বহু উপকরন রয়েছে এ দ্বীপে।
এখানে সকাল বেলার সুর্য যেমন হাঁসতে হাঁসতে পুর্বদিকে ডিমের লাল কুসুমের মত উদিত হতে দেখা যায়, তেমনি বিকেল বেলাতেও আকাশের সিঁড়ি বেয়ে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে পশ্চিম আকাশে মুখ লুকায়। মনপুরাতে এসেই কেবল সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করা যায়। মনপুরায় এখন নতুনভাবে গড়ে উঠেছে মনপুরা দখিনা হাওয়া সী-বীচ। যা পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষন করবে।
ভোলা জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিন পুর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেষে অবস্থিত মনপুরার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ম্যনগ্রোভ প্রজাতির সারিসারি বাগান। এখানে ছোট বড় ৮-১০ টি চর ও বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ বিপ্লব। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজির বিশাল ক্যাম্পাস মনপুরাকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে। শীত মৌসুমে শতশত পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে এসব চর। এখানে না আসলে বোঝাই যাবেনা কি সৌন্দর্য ও পর্যটনের অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে পুরানো এ দ্বীপে। পর্যটক আর ভ্রমন পিপাসু মানুষকে মুগ্ধতার বন্ধনে আটকে দেওয়ার বহু উপকরন রয়েছে মনপুরায়।
এখানকার পর্যটন সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয় মনপুরা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, মনপুরা পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে প্রাকৃতিকভাবে একটি সি-বিচ জেগে উঠেছে। স্থানীয়রা সেখানে পর্যটকদের আকর্ষনে নানাবিধ কাজ করে যাচ্ছেন। বছরের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শত শত পর্যটক ঘুরতে আসে। নদী ভাঙনের হাত থেকে মনপুরাকে রক্ষা করে পর্যটনউপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র মনপুরা থেকে সদ্য ঘুরে আসা দৈনিক ভোলার বাণীর সম্পাদক মোঃ মাকসুদুর রহমান জানান, মনপুরা অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সেখানকার মানুষগুলো অসাধারণ, আতিথেয়তাপরায়ন। পর্যটকদের জন্য যথেষ্ট সুযোগ আছে। করোনার কারনে এতোদিন পর্যটক নেই বললেই চলতো। তবে, এখন পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে চলেছে।
মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিম মিঞা ও মনপুরা উপজেলা চেয়ারম্যান শেলিনা আকতার চৌধুরী গতকাল রোববার এ প্রতিবেদককে বলেন, এ দ্বীপটি ভোলা জেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও নানা উপকরন ছড়িয়ে আছে এ দ্বীপে। মনপুরার অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা, ভাল মানের হোটেল, যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নতিসহ বিভিন্ন সুবিধা বাড়াতে পারলে মনপুরা হতে পারে পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান।
এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতাও কামনা করছেন তারা।
কক্সবাজারের মতো দিগন্ত প্রসারিত বালুকাময় সৈকত, আর সুন্দরবনের মতো গহীন অরন্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরি-মুকরি। সবুজের সমারোহে সমৃদ্ধ এ দ্বীপ চরেও শীতকালে শত শত ভ্রমনপিপাসু আসে ঘুরতে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।