মধ্যরাত : পর্ব-১১

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত পর্বের পর): ক্যামেলিয়া মাথা নীচু করে সব শুনল। এরপর থেকে ক্যামেলিয়া অনেক অনেক দূরে সরে যেতে লাগল। আমার আর সুশান্তর তখন এম. এ. পরীক্ষা চলছিল। শুনলাম ক্যামেলিয়া দিল্লিতে ওর দাদুর কাছে বেড়াতে গেছে। ওর দাদু সেখানকার ব্যারিষ্টার, ওরা থাকত কোলকাতায়। ওর ঢাকায় এক মাসিমা ছিল, ওর কাছে থেকে পড়াশুনা করত। ছুটি-ছাটায় কলকাতায় মা-বাবার কাছে যেত। ওর বাবা ডাক্তার ছিল। ক্যামেলিয়া খুব বড় ঘরের মেয়ে ছিল। বড় উদার প্রকৃতির মেয়ে, জাতে ব্রাহ্মণ। বড় অনাড়ম্বর প্রকৃতির ছিল। ও খুব ভাল ভজন গাইতে পারত।
আমাদের পরীক্ষার পর আমি আর সুশান্ত ক্যামেলিয়ার খবর নিলাম। শুনলাম ওর মাসির মুখে, ও ওর দাদুর কাছে দিল্লিতেই পড়াশুনা করবে। আর এখানে আসবে না। ক্যামেলিয়ার মাসী ভিকারুন্নেছা হাই স্কুলের টিচার ছিলেন। আমাদের চা নাস্তা দিল। ভদ্র মহিলার এক ছেলে, এক মেয়ে। তখন দেশ স্বাধীন হয়ে পাকিস্তান হিন্দুস্তান নাম বহন করে, দু’দেশের কৃষ্টি-কালচারের সমৃদ্ধি ছাড়াচ্ছে।
মহাত্মা গান্ধীকে নাথুরাম গড়সে গুলী করে মেরেছে। দেশ নিরব, নিঝুম, নিস্তব্ধ, দেশ অবাক। এরকম একজন মহাত্মাকে শেষ করে দিল ? মহাত্মার মৃত্যু হিন্দু-মুসলমান কেউ চায়নি। স্বাধীন হিন্দুস্তানের পিতা তাকে সকলেই ভাল বাসত। মহাত্মার একটি গান, ঐ গানটি ওনি নিজেও খুব ভালবাসত। আমার গানটি মনে পড়ে গেল।
রঘুপতি রাবন রাজা রাম-
পতিত পাবন হে (হে সীতারাম)
ঈশ্বর-আল্লা-তেরে নাম
সবকো হিম্মতি দে-ভগবান।
মহাত্মা সব সময়ে বলে এসেছেন হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই। মহাত্মার অনুমতি ক্রমেই পাকিস্তান হিন্দুস্তানের জন্ম হয়েছিল বলে শুনেছি। জনিনা তা কতটুকু সত্য। মুসলমান হিন্দুর কলকাতাতে ভীষণ দাঙ্গা হল। নাথুরাম গড়সে মহাত্মাকে গুলি করে হত্যা করল। যুগে যুগে এসব মহা মানবের জন্ম হয়েছিল। আর মহাত্মা গান্ধীর মত লোক পৃথিবীর বুকে আবির্ভাব হবে কি না সন্দেহ। ক্যামেলিয়া আর পাকিস্তানে ফিরে আসেনি। আমি আর সুশান্ত পাকিস্তানে ছিলাম। বাংলাদেশ হওয়ার পর আমাদের বাবা দাদারা এখানে ছিলেন। আমরা ভাগ্যের অন্বেষণে মন্ট্রিল কানাডায় চলে এসেছি।
আমরা ভালবাসি আমার মাতৃভূমিকে। সুশান্তর বাবাও খুব সংসারী ছিলেন। তিনি তার জমি-জমা ছেড়ে হিন্দুস্তান যাননি। এই সোনার বাংলার মাটি আকড়ে ধরে পড়ে ছিলেন। মেয়ে দুটির ভালোই বিয়ে হল, দু’জামাই ব্যবসায়ী। মেয়ে দু’টি দেখতেও ভাল ছিল। পড়াশুনা করেছিল। গান-বাজনা শিখেছিল, ভাল পাত্রেই পড়েছে। ছোট ছোট দুটি ছেলে ‘ল’ পাশ করে পাবনা সদরেই কোর্টে প্রাকটিস করে। ওর বাবা বেঁচে থাকতেই সুশান্তকে পাবনার এক সমৃদ্ধিশালী জমিদারের মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে যান। ওর বাবা এখন নেই, তিনি অনেক দিন হয় পরলোক চলে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশতঃ সুশান্তর আজ পর্যন্তও কোন ছেলে মেয়ে হয়নি। সুশান্তর বউ শুনেছি খুব লক্ষ্মী। দেখতেও নাকি খুব ভাল। যদিও আমি এখন পর্যন্ত দেখিনি।
(চলবে———–)