ভোলায় দুশ্চিন্তায় পুস্তক ব্যবসায়ীরা

করোনা মহামারীতে দেশে টানা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল বইয়ের লাইব্রেরীগুলে। মার্চের শুরু থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। এতে কম বেশি সব খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে, এর মধ্যে পুস্তক ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তারা বলছে, করোনায় ওষুধ ও আর্থিক খাতের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভাল ছিল। বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়েছে পুস্তক ব্যবসায়ীদের। এ খাতে চলতি বছর দুটি ঈদ আর একটি নববর্ষ গেছে বাণিজ্যহীন। সাধারণত বছরের জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত স্কুল-কলেজের পরীক্ষাকে ঘিরে তাদের বেচাকেনা বেশি হয়ে থাকে সেটি এবার আর সম্ভব হয়নি। করোনাকালীন সময়ে অনেক ব্যবসায়ীরা কম বেশী তাদের ব্যবসা চালাতে পারলেও দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পুস্তক ব্যবসায়ীরা মারাত্মক লোকসানের মুখে পড়েছেন। ফলে অনেক পুস্তক ব্যবসায়ী তাদের পুঁজি হারিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপে গত দেড় বছরের বেশী সময় ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা ছিল। এ সময়ে আয় না থাকলেও ব্যয় করতে হয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের খরচ, শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন, দোকানপাটের ভাড়া, পরিবহন ব্যয়, হিসাব কষে সময়মতো ভ্যাট-কর-শুল্ক কড়ায়গণ্ডায় পরিশোধ করতে হয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ সহায়তা পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুতকরণে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। তারা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা পাওয়ার প্রক্রিয়া বেশ জটিল। ফলে করোনাকালীন সময়ে অনেক পুস্তক ব্যবসায়ী তাদের পুরনো পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরেও শিক্ষাঙ্গনে পুরোপুরিভাবে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত না হওয়ায় এখনো লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেন নি পুস্তক ব্যবসায়ীরা। তারা এখনো দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তবে, কিছুটা হলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বাভাবিক ধারা ফিরে আসতে শুরু করেছে। এর জন্য সরকারের সহযোগিতাও কামনা করছেন তারা। বিশেষভাবে রাজস্বের ভার কমানো ও সহজ শর্তে ঋণসুবিধা ও প্রনোদনার দাবি জানিয়েছেন পুস্তক ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার মা বই বিতানের সত্বাধিকারী ও উপজেলা পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ মাকসুদুর রহমান আসাদ বলেন, করোনায় ব্যবসায়ীকভাবে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুস্তক ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, স্কুল খুললেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো পুরোপুরি ক্লাস শুরু হয়নি। জমে উঠেনি শিক্ষাঙ্গন। তাই, পুস্তক ব্যবসায়ীরা এখনো তাদের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি বলেন, এ উপজেলায় মোট ৩৭ জন পুস্তক ব্যবসায়ী রয়েছে। এর মধ্যে পৌর এলাকায় রয়েছে ৭ জন। করোনাকালীন সময়ে পৌর এলাকার ৭ জন পুস্তক ব্যবসায়ীর মধ্যে ২ জন ব্যবসায়ী অনবরত লোকসানের মুখে পড়ে তাদের এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। করোনার আগে যেখানে প্রতিদিন ৩০-৪০ হাজার টাকার বই বিক্রি হতো সেখানে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খোলার পর এখন ৩-৪ হাজার টাকার বই বিক্রি হচ্ছে। কিছুটা হলেও বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে, লোকসান কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।

দৌলতখান উপজেলার পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও দিগন্ত লাইব্রেরী সত্বাধিকারী মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, গত বছর আমার লাইব্রেরীতে যখন বই উঠিয়েছি তখন ৫-৭ লাখ টাকার বই বাদ হয়ে গেছে। এখন এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে যে, আবার ব্যবসা শুরু করবে সেই ধরনের কোন পুঁজি পুস্তক ব্যবসায়ীদের নেই। করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন এনজিওদের কাছ থেকে যে ঋন নিয়েছে সেই ঋনই পরিশোধ করতে পারেনি অনেকে। তাই, স্কুল খুললেও পুস্তক ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায় বিগত বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

চরফ্যাশন উপজেলার মর্ডান বুক হাউসের মালিক মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও এখনো নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষাঙ্গনে গতি ফিরে আসেনি। আর করোনাকালীন সময়ে সরকার সবাইকে প্রনোদনা দিলেও সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত পুস্তক ব্যবসায়ীদের প্রনোদনা দেয়নি। তিনি আরও বলেন, সমিতির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সরকারের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। তিনি সরকারের পক্ষ থেকে প্রনোদনা ও সুদ মুক্ত ঋণ প্রদানের দাবি জানান।

এ ব্যাপারে ভোলা সদর উপজেলার প্যারাডাইস বুক ডিপোর সত্বাধিকারী মোঃ মাহবুব মোর্শেদ বাবুল বলেন, করোনায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বইয়ের লাইব্রেরীগুলোর মালিকরা। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগবে। এর জন্য সরকারের সহযোগিতা চাইছেন তিনি।

এ ব্যাপারে ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মামুন আল ফারুক শুক্রবার ভোলার বাণী কে বলেন, করোনাকালীন সময়ে সরকার বিভিন্ন খাতে প্রনোদনা দিয়েছে। কিন্তু পুস্তক ব্যবসায়ীদের জন্য প্রনোদনা দিয়েছে কিনা। আর দিলেও ভোলার পুস্তক ব্যবসায়ীরা পেয়েছে কিনা এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত না।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।