বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভোলার বেতুয়া-মনপুরাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ
আদালত ও এলাকায় পলাতক, তবুও নিয়মিত স্কুলের বেতন নিচ্ছেন ভাস্কর
ভোলার লালমোহনে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ ও মানুষের কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়ে বিপুল টাকা আত্মসাত করে আড়াই বছর আগে পালিয়েছেন ভাস্কর চন্দ্র হাওলাদার নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী। ব্যবসার পাশাপাশি লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করতেন তিনি। এই আড়াই বছর লালমোহনে তার কোন অস্তীত্ব না থাকলেও স্কুলের খাতায় তিনি হাজির ছিলেন। নিয়েছেন প্রতি মাসে বেতনও। কিন্তু বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় এক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভাস্কর চন্দ্র হালদারের বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই মামলায় আদালতে ভাস্কর চন্দ্র হাওলাদার পলাতক হিসেবে আছেন বলে ব্যাংক ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন।
জানা গেছে, লালমোহন অগ্রণী ব্যাংক, ইসলামি ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা ঋণ নেন ভাস্কর। এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও টাকা ধার নেন। এসব টাকা নিয়ে ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল লালমোহন থেকে গা ঢাকা দেন ভাস্কর। লালমোহন মহাজন পট্টি এলাকায় মেসার্স সাজ জুয়েলার্স নামে একটি জুয়েলার্স এর দোকান চালাতেন ভাস্কর চন্দ্র হাওলাদার। পাশাপাশি শিক্ষকতা করতে প্রথমে পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডে মায়ানগর নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। পরে লালমোহন মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এই বিদ্যালয়ে ইনডেক্স নং- ১০৩০৫৮৪।
হঠাৎ করে ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল থেকে ভাস্কর লালমোহন থেকে উধাও হয়ে যায়। তার দোকানে এখন অন্য ব্যবসায়ী ব্যবসা করে। বিদ্যালয়ের সহ প্রধান শিক্ষক মো. আবু তৈয়ব ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল থেকে বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অনুমোতিবিহীন ভাস্কর চন্দ্র হাওলাদার বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত বলে নিজের ফেসবুকে স্টাটাসও দেন।
যদিও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হেলাল উদ্দিন শুধু করোনার বন্ধের জন্য ভাস্কর বিদ্যালয়ে আসেনি বলে উল্লেখ্য করে বলেন, “তার আগে সে নিয়মিত ছিল। একজন শিক্ষক দুই বছর মেডিকেল ছুটি নিতে পারে। সে কিছুদিন আগেও ডাকযোগে মেডিকেল ছুটি পাঠিয়েছে।” গত ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হলেও এখনো ভাস্কর অনুপস্থিত। এ কয়দিন তাকে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক জানান। কিন্তু প্রতি মাসে ভাস্কর এর বেতন একাউন্টে জমা হয়েছে।
লালমোহন থেকে গা ঢাকা দেওয়ার পূর্বে ভাস্কর বিদ্যালয়ের চেক রেখে লালমোহন অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নেন দুই লাখ টাকা। দোকানের জন্য বাড়ির দলিল রেখে ঋণ নেন ওই ব্যাংক থেকে আরো ৪ লাখ টাকা। এই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. জামাল উদ্দিন জানান, চেক রেখে ভোগ্যপণ্য ঋণ বাবদ দুই লাখ টাকা নিয়ে না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ভোলার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় ভাস্কর পলাতক রয়েছে। গত বুধবারও আদালতে মামলার শুনানী হয়েছে। শুনানীতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাবস্থাপক হিসেবে তিনি নিজে হাজির ছিলেন। কিন্তু ভাস্কর হাজির হননি। এছাড়া ৪ লাখের ঋণে এখন পোনে ৬ লাখ টাকা পাবে ব্যাংক। এ টাকার জন্যও আরেকটি মামলা হবে বলে তিনি জানান।
রূপালী ব্যাংক এর ব্যবস্থাপক মো. জহির উদ্দিন জানান, তার ব্যাংক থেকে ১৮ লক্ষ টাকা সিসি নেন। এছাড়া শিক্ষক ঋণ নেন সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এসব টাকা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যদিকে একই বাড়ির দলিল রেখে ইসলামী ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়েছেন ৬ লাখ টাকা। এ টাকাও না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংক থেকেও ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। এসব টাকা না দিয়ে পলাতক থাকায় দুই ব্যাংক থেকে ভাস্করের বাড়িতে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে।
লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পল্লব কুমার হাজরা জানান, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির বিষয়টি জানা ছিল না। আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।