সর্বশেষঃ

ভোলায় স্কুল খুললেও বাল্যবিয়ের শিকারে ক্লাসে অনুপস্থিত অনেক শিক্ষার্থী

১৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে স্কুল পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছেন তার স্বামী। এ নজর এড়ায়নি ওই ছাত্রীর সহপাঠীসহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্রীদের। এক কান-দু’কান করে এ খবর জেনে যান বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। তারা দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে সে প্রথমে বিয়ের কথা অস্বীকার করে। পরবর্তীতে ছাত্রীর অভিভাবককে খবর দেওয়া হয়। দুপুর ১ টার দিকে তার অভিভাবক (বাবা) স্কুলে এলে তিনি প্রধান শিক্ষকের কাছে তার মেয়ের বিয়ের কথা স্বীকার করে বলেন আমি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। বিয়ের বয়স না হলেও মেয়ের বাল্য বিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি বলে দুঃখ প্রকাশও করেন বাবা। তিনি জানান, তার মেয়ে সুন্দরী হওয়ায় এবং এলাকার কিছু লোক মেয়েকে উত্যক্ত করায় গত প্রায় এক বছর আগে করোনাকালীন সময়ে ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর এলাকার এক ছেলের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দেন। ওই ছেলে ভোলা পৌরসভায় চাকরি করেন। বাবার সামনেই বিয়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে দশম শ্রেণির সেই ছাত্রী বাবা ও শিক্ষকদের সামনেই জানায়, সে ওই বাল্য বিয়েতে রাজি ছিল না। কিন্তু তার অভিভাবকরা তাকে একরকম জোর করেই বাল্য বিয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে ছাত্রীর বাবা বলেন, মেয়ে অসুস্থ্য। তাকে জ্বীনে ধরেছে। এর জন্য চিকিৎসাও করা হচ্ছে। ঘন্টাব্যপী প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রধান শিক্ষক ছাড়াও বিদ্যালয়ের তিনজন সহকারী শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম ছালেহউদ্দিন বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলা হয়েছে। ৯০ শতাংশেরও বেশী ছাত্রী স্কুলে উপস্থিত থেকে নিয়মিত ক্লাস করছে। তবে, এর মধ্যে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির দুই জন ছাত্রীর বাল্য বিয়ে হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এর মধ্যে একজন মুসলমান ও একজন হিন্দু ছাত্রী রয়েছে। ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো করোনাকালীন সময়ে ভোলা সদর উপজেলার নলিনী দাস বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বোরহানউদ্দিন উপজেলার কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রীর বাল্য বিয়ে হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিনের কুতুবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার জানান, এর আগে যখন স্কুল খোলা ছিল তখন বাল্যবিবাহের খবর জানতে পেরে আমরা উপজেলা নির্বাহি অফিসারের সহযোগিতায় দু’ দুটো বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু করোনার মধ্যে বাল্যবিবাহ হয়ে থাকলে তা জানা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে বোরহানউদ্দিন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তপন কুমার বলেন, বোরহানউদ্দিনের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাল্য বিয়ে হওয়ার খবর পেয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। কিন্তু বাল্যবিয়ের কোন সঠিক তথ্য প্রমান পাইনি। তিনি আরও বলেন, এ উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা কম। বিশেষ করে মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতির সংখ্যা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। এ অনুপস্থিতির কোন সঠিক কারন জানাতে পারেন নি শিক্ষকরা। এটা কি বাল্যবিয়ের কারনে নাকি অন্য কোন কারন তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে ভোলা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা মোঃ নুরে আলম সিদ্দিকী শুক্রবার সকালে এ প্রতিবেদক কে বলেন, দীর্ঘদিন পর স্কুল খোলার পর স্বতঃস্ফূর্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসছে এটা যেমন সত্য। ঠিক তেমনি আবার অনেক স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতিও কম দেখা গেছে। শিক্ষকদের মাধ্যমে জানা গেছে বাল্যবিবাহ এর প্রধান কারন। তিনি আরও বলেন, অনুপস্থিতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় একটা অংশ বাল্যবিয়ের কারন।শুধু তাই নয়, অনেক শিক্ষার্থীদের আবার বাচ্চাও হয়েছে বলেও শিক্ষকরা খোঁজ নিয়ে আমাদেরকে জানিয়েছে।এর মধ্যে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীই বেশী। করোনাকালীন সময়ে তারা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।এদের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খুললেও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনেক স্কুলে শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকতে পারেনি। কারন হিসাবে জানা গেছে, কেউ বাল্যবিবাহের কারনে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।