ভোলায় ২২ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ:গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ
ভোলায় গত শুক্রবার মধ্য রাত ১২ টা থেকে শনিবার রাত ১০ টা পর্যন্ত ২২ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। এতে তারা ক্ষুব্ধ হন। যদিও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগ জানিয়েছে, ভোলার গ্যাসভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াট রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের জরুরী বাৎসরিক মেরামত কাজের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। তবে, বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ চালু থাকবে। কিন্তু, বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখতে পারেনি বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগ। শুক্রবার মধ্য রাত ১২ টার পর থেকে পরদিন শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। শনিবার সকাল ৯টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ এসে আবার চলে যায়। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয় শনিবার রাত ১০টার দিকে। সারারাত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। তারা গরমের মধ্যে বিদ্যুৎহীন থাকায় রাতে ঘুমোতে পারেনি। ফলে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাদের অনেকেই আবার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। এদের মধ্যে ভোলা সদর উপজেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি ও বিদ্যুৎ গ্রাহক মাহমুদুল হাসান ফাহাদ বলেন, ভোলায় বিদ্যুৎ নিয়ে তালবাহানা! সন্ধার পর থেকে অকারণে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং মেনে নেয়া যায়না।
অপর বিদ্যুৎ গ্রাহক ও এনজিও কর্মকর্তা মোঃ মর্তুজা খালেদ বলেন, নিকট অতীতে ভোলা পৌর এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল না। শনিবার থেকে তা মহাসমারোহে শুরু হয়েছে! কিন্তু কেনো?
শহরের যুগিরঘোল এলাকার গৃহিণী মুজিযা রহমান পূণ্য বলেন, ভাইরে ভাই এটাকে কি লোডশেডিং বলে নাকি কারেন্ট না থাকা বলে। এরা শীতের দিনে কি করে। যত কাজ গরমের দিনেই।
বিদ্যুৎ গ্রাহক মোঃ ইব্রাহিম শাকিল বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে তামাশা শুরু করছে!! পুরো ভোলাবাসি অতিষ্ঠ গরমে। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি!!
ফয়সাল রহমান বলেন, সন্ধা হতে শুরু হল বিদ্যুৎ এর কানামাছি খেলা। যার শুরু টা হয়েছিল গতকাল গভীর রাত হতে। আর কত?
মোঃ আরিয়ান আরিফ বলেন, ভোলায় বিদ্যুৎ নিয়ে তামাশা, সন্ধ্যা ৬ টার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার ঘোষনা থাকলেও লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
এদিকে শুক্রবার মধ্য রাত ১২ টা থেকে শনিবার রাত ১০ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকার পর রোববার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ফের বিদ্যুৎ চলে যায়। আসে সকাল পৌনে ১০ টায়। আবার চলে যায় দুপুরের দিকে। কয়েক ঘন্টা পর আবার ফিরে আসে। গত ৩ দিন ধরে বিদ্যুতের এ ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগ ওজোপাডিকো তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে এক জরুরী নোটিশের মাধ্যমে জানানো হয়, রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের জরুরী বাৎসরিক মেরামত কাজের জন্য ২৮-০৮-২০২১ইং তারিখ রোজ শনিবার রাত ১২:০১ মিনিট থেকে বিকাল ৬:০০ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
উক্ত সময়ে ভোলা বিদ্যুৎ সরবরাহ, ওজোপাডিকোর আওতাধীন এলাকায় বিকল্প ব্যবস্থা বিদ্যুৎ চালু থাকবে, যার কারনে কিছু কিছু এলাকায় উক্ত সময়ে লোডশেডিং হতে পারে। গ্রাহকের সাময়িক অসুবিধার জন্য ওজোপাডিকো, ভোলা আন্তরিকভাবে দু:খপ্রকাশ করছে।
ভোলায় গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত বিদ্যুতের ব্যাপক লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ভোলা সদর উপজেলাসহ পুরো জেলা রাতে অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। রোববারও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৩-৪ বার বিদ্যুৎ এসেছে আর চলে গেছে। এতে করে সরকারি ও বেসরকারি অফিস-আদালতে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে গত ৩ দিন ধরে অনলাইনে ঠিকভাবে কোন মিটিং করতে পারছি না। গত ৩ দিন ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে জেলার শিল্প ও কল-কারখানায় উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মেসার্স খান ফ্লাওয়ার মিলস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জামাল খান বলেন, গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত ৩ দিন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে আমাদের মিলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে এক ঘন্টা মিল বন্ধ রাখতে হয়। আর এক ঘন্টা মিল বন্ধ রাখলে কর্মচারির বেতনসহ প্রায় ৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়। অথচ প্রতিমাসের বিদ্যুৎ বিল জমা দিতে যদি একদিন বিলম্ব হয়, তাহলে ৫% সুদ ধার্য্য হয়। অর্থাৎ কোন গ্রাহকের এক মাসের বিদ্যুৎ বিল এক লাখ টাকা জমা দিতে একদিন বিলম্ব হলে তাকে সুদআসলে এক লাখ ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এটা খুব দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগ ওজোপাডিকো ভোলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী দুলাল চন্দ্র রোববার সকালে বলেন, রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের জরুরী বাৎসরিক মেরামত কাজের জন্য ২২ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। মেশিনের কাজ করতে গিয়ে হয়ত সময় একটু বেশী লেগেছিল। এখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।