ভোলায় অন্যের জায়গায় থাকেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মনির ॥ একটি সরকারি ঘরের আকুতি

একদিন জায়গা জমি, বাড়ি-ঘর সবই ছিল। মেঘনার ভাঙ্গনে এখন সর্বহারা শারীরিক প্রতিবন্ধি মোঃ মনির হোসেন। স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে নিয়ে ৫ জনের সংসার। তিনি জন্ম থেকেই পঙ্গু। তার বাম পা ডান পা থেকে আলাদা। এক পায়ের উপর ভর করে তার চলা। শারীরিক প্রতিবন্ধি হওয়ায় তিনি কোন কর্ম করতে পারেননা। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হয়ে তার তিল পরিমান মাটি নাই, নাই মাথা গোজার স্থান। থাকেন অন্যের জায়গায় যাযাবরের মত। যখন সরকার ভূমি ও ঘরহীনদের ঘর দিবেন তখন ভেবেছিলেন তিনি প্রথমেই ঘর পাবেন। যখন জমিসহ ঘর দেয়া হল, তখন দেখলেন সরকারী ঘরে তালিকায় তার নামই নাই। শারীরিক প্রতিবন্ধি মোঃ মনির (২৮) ঘর না পেয়ে অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন। সব জায়গায় তিনি হোচট খেয়েছেন। তাকে একটি সরকারী ঘর দেয়ার জন্য প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে আকুতি জানান।
মনির ভোলা সদর উপজেলার ৬নং ধনিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড তুলাতুলি গ্রামের মৃত মোশারেফ হাদের ছেলে। তার নিজের কোনো জায়গা-জমি না থাকায় প্রতিবেশী নাঈম গোলদারের রাস্তার পাশের জায়গায় পলিথিন দিয়ে ছারপা করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। এমন একটি জরাজীর্ণ ঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন এই হতদরিদ্র শারীরিক প্রতিবন্ধী মনির। বাহিরে বৃষ্টি পরার আগে তার ঘরে পানি পরে পুকুরে পরিনত হয়।
বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, একটি জরাজীর্ণ পলিথিন দিয়ে বানানো ছাপরা ঘরে আছেন অসহায় হতদরিদ্র মোঃ মনিরের পরিবার। ৩ মাসের তাইয়েরা নামের একটি শিশু ক্ষুদার যন্ত্রণায় অজোরে কাদছেন। তার কাছে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই মনির বলেন, আমি পঙ্গু। খুবই কষ্টে দিন কাটাই। আগে পরিচিতজনরা কিছু টাকা-পয়সা দিত। আর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের দেয়া কিছু টাকায় কোনো রকম চলছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাস আসার পর থেকে এখন আর পরিচিত কেউ আসেওনা, আর কিছু সাহায্যও করেনা। ৩ মাসের শিশুটির খাবারের কিছুই নাই, তাই খাবারের জন্য কাঁদে। তার মা অন্যেও বাড়িতে কাজে গেছে, সেখান থেকে কিছু পেলে খাওয়াইতে পারুম।
তিনি আরও জানান, একটি সরকারি ঘরের জন্য আশায় ছিলাম। কিন্তু ঘরের তালিকায় আমার নামই নাই বলে ঘর পাননি। আমার জন্য একটু লেখেন, আমি যেন সরকারের কাছ থেকে একটি ঘর পাই। আর এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, করোনার কারণে স্ত্রীও কোন বাসায় কাজ পায়না। প্রতিবেশি কেউ তাদেরকে খাবার দিলে খেতে পান। আর খাবার না দিলে উপোষ দিন কাটাতে হয়।
ইউপি সদস্য মোঃ জামাল মিয়া জানান, পঙ্গু মনির মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পাবেনা এটা কল্পনাও করা যায়না। যে তালিকা হয়েছে সেগুলো করেছে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তারা।
ধনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন কবির জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। ঘর পাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, আমরা মনিরের সাথে দেখা করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও ঘরের ব্যবস্থা করবো।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।