সর্বশেষঃ

মধ্যরাত : পর্ব-০৪

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন) :

 (গত পর্বের পর) : ডোরা বলল, আমার ভয় করছে। তখন গাড়ীটা চাঁদের রাজ্য ছেড়ে আবার নশ্বর পৃথিবীতে পাড়ি জমিয়েছে। আমার খালি মনে হচ্ছিল আমরা আকাশ থেকে পড়ে যাচ্ছি। ডোরাকে বলতে সাহস হচ্ছে না। মনে মনে রাখলাম। ডেরা আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। ঘেমে ¯œান করার মত হয়ে গেছে। নরম পেবল কোমল হাতটা বলির পাঠার মত কাঁপছে।
ডোরাকে আমি কোনদিন স্পর্শ করে দেখিনি। এক সঙ্গে পড়েছি, ক্লাস করেছি, নোট নিয়েছি, নোট দিয়েছি, নাটক করেছি। ভাল লাগত ডোরার সান্নিধ্য। কামনা করতাম তাকে কাছে পাওয়ার জন্য। ভালবাসতাম তাকে দুর থেকে। কাছে যেতে ভয় পেতাম। ডোরার ব্যক্তিত্ব স্বত্ত্বা ছিল ভিষণ প্রখর। ভীষণ গভীর প্রকৃতির। কথা বার্তা কম বলত। সকল ছেলেই তাকে সম্ভ্রম করত। ভয় করত তার ব্যক্তিত্বকে। দেখতে খুব সুন্দরী ছিল বলে বোধ হয় তার একটু দেমাগ ছিল। পড়া শুনায় খুব ভালছিল। বরিশাল বি.এম. কলেজের তখনকার দিনের নাম করা ছাত্রী ছিল। গরীবের মেয়ে ছিল, কিন্তু তাকে আমি কোনদিন ছোট হতে দেখিনি। সব সময়ে মাথা উঁচু করে চলতে দেখেছি। সেই ডোরা যেন আজ অসহায় শিশুর মত আমার কাছে আত্মসমর্পণ করতে চায়। ভয়ে আতঙ্কে তার চেহারা পাল্টে গেছে।
আমরা আস্তে আস্তে আবার নীচে নেমে এলাম। লাইট জ্বলে উঠল। সবাইকে দেখে খুশী হলাম। মুখের ভয় ভীতি সরে গিয়ে সেমুখে আবার আশা আনন্দের খুশীর উচ্ছলতা ভরে উঠেছে। ডোরার চোখ দু’টো ভয়লেশহীন। আমি ডোরাকে বললাম, আর কোথাও যাবে ? ও বলল, তুমি যদি নিয়ে যাও, তবে যেতে পারি। আমি বললাম, চল সমুদ্র দেখে আসি। সাত সমুদ্র ডোরাকে নিয়ে আমি অনেক দূর পথ হেঁটে হেঁটে এসে লিফটে উঠলাম। লিফ্ট থেকে নেমে আমরা একটি জাহাজে উঠলাম। জাহাজ এ রকমভাবে তৈরী যে সমুদ্রের বড় মাছ, ছোট ছোট মাছ সব দেখতে পেলাম। মাছেরা সব জাহাজের কাছ দিয়ে ঘোরাফিরা করছে। প্রকান্ড জাহাজ। জাহাজে একটি সাত সমুদ্রের ছবি দেখলাম। আবার লিফটে চড়লাম। লিফট আমাদের একেবারে ডিজনী ওয়ালর্ড এর দোকানের সামনে নামিয়ে দিল।
ডবয়াল্লিশ মাইল ব্যাপী এই ডিজনী ওয়ালর্ড। বিরাট, বিপুল, বিরাটত্বেও ব্যাপকহাতে এর প্রচার। ওয়ালট ডিজনী ওয়ালর্ড। এর কাহিনী মুখরোচক ভাবে গল্প করে বেড়ায়। সত্যই অপুর্ব বিস্ময় ওয়ালট ডিজনী ওয়ালর্ড। ওয়ালর্ড ডিজনী যে এই বইটি লিখেছে, তাহার লেখা অনুসারে বা তার কল্পনায় এই ডিজনী ওয়ালর্ডের রূপ দেওয়া হয়েছে। তার রূপ বর্ণনা করা হয়েছে। এই মহা পরিকল্প মহাচিন্তা করে, যে এই বইটি লিখেছে, জানিনা সে মরে গেছে, না বেঁচে আছে। তার প্রতি মনের গভীর থেকে শ্রদ্ধা এনে দিল। যুগ যুগ ধরে বৃদ্ধ-যুবক-শিশু তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

(চলবে———)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।