সর্বশেষঃ

এক মাসে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন

ভোলার তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে ভেদুরিয়া

উপকূলীয় জেলা ভোলার প্রমত্তা তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে ভেদুরিয়া ইউনিয়ন। গত এক মাসে ওই ইউনিয়নের চর ভেদুরিয়া ও মধ্য ভেদুরিয়া গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অর্ধ শতাধিক ঘরবাড়ি তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা। এতে তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ব্যাংকের হাটের টেক্সটাইল কলেজসহ গ্যাস কূপটিও।

গত বুধবার ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর তীরবর্তী ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙনের মুখে রয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়ে অনেক পরিবার তাদের ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেছেন। নদীর পাড়ে শুধু ভিটামাটি পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, এই তেঁতুলিয়া নদীর তীরবর্তী ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট ও ব্যাংকের হাট থেকে চর চটকিমারা খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকা দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ। তারা জানান, গত এক মাসে অর্ধশতাধিক ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই ভাঙনের মুখে পড়ে নুরে আলম মোল্লা, ইসমাইল মোল্লা, শাহে আলম মোল্লা, দুলাল বেপারী, আমির হোসেন, হাসেম বেপারী, খলিল বেপারী, জলিল বেপারী ও মোতলেব বেপারীর ঘরবাড়ি নদীর পাড় থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছেন। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছরের ও বেশি সময় ধরে তেঁতুলিয়ার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তেঁতুলিয়া নদীর সংস্কার না হওয়ায় আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে তেঁতুলিয়া নদী। আর দিন দিন ছোট হয়ে আসছে ভেদুরিয়া এলাকা।ইতিমধ্যে এখানকার অসহায় মানুষগুলো হারিয়েছে তাদের বসতভিটাসহ আবাদি জমি। বর্তমানে নদীর তীরবর্তী যে সব পরিবার বসবাস করছে তাদের দিন কাটচ্ছে চরম আতংকের মধ্যে। তেতুলিয়া নদীর ভাঙনের ফলে নদী সংলগ্ন রাস্তা, মসজিদ, বসতবিটা ও ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীনের পথে। অনেক পরিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে সহায় সম্পত্তি হারিয়ে অসহায়ত্ব জীবন যাপন করছেন।


চর ভেদুরিয়া গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ষাটোর্ধ কৃষক সরকত আলী বলেন, তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে আমাদের অনেক ফসলী জমি। এখন আবার ভাঙনের হুমকির মধ্যে রয়েছি। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পঞ্চাশোর্ধ জেলে হালান মোল্লা বলেন, আমি তিন বার তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছি। আমার অনেক ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
হারুন মোল্লা বলেন, আমিও একবার তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে এখন এখানে বসবাস করছি। কিন্তু এখানেও ভাঙনের আতঙ্কে আছি। তিনি বলেন, আমাদের সোয়া কানি জমি তেঁতুলিয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। গৃহবধূ মমতাজ বেগম বলেন, তেঁতুলিয়া নদী আমাগোরে ৩ ভাঙা দিছে। অহন থাহনের জায়গা নাই। তাই, একখন্ড জায়গা নিয়া তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ে আছি। এহানেও নদী ভাংতাছে। তিনি প্রশ্ন করে বলেন হেরপর আমরা কই যামু ?


মমতাজ আক্তারও এ পর্যন্ত তিন বার নদী ভাঙনপর শিকার হয়েছেন। মমতাজ বলেন, তেঁতুলিয়া নদী ভাঙতে ভাঙতে আমাগোরে শেষ করে দিয়েছে। আমরা অহন শেস হয়ে গেছি। কাদের মেল্লার স্বামী আয়াতুন নেছা বলেন, আমাগোরে তিন বার নদী ভাঙার পর অহন থাকতে কষ্ট হইতাছে। তিনডা মাইয়া বিয়া দিছি। জামাইয়া টাহা-পয়সা দেয়। হেইয়া দিয়া খাইয়া চলি। এরপর নদী ভাঙলে আর যাওনের জায়গা থাকবোনা। তিনি আরও বলেন, যারা জমি কিনতে পারছে হেরা এহান থাইক্যা চইল্যা গেছে। আমরা জমি কিনতে পারি নাই আর এহান থাইক্যা ঢ়াইতেও পারি নাই।
স্থানীয় বাসিন্দা মনজুর ইসলাম বলেন, মোল্লা বাড়ি থেকে ভেদুরিয়া লঞঘাট হয়ে ব্যাংকের হাট এবং চর চটকিমারা খেয়াঘাট পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এখনো হুমকির মুখে তিন শতাধিক পরিবার। তিনি বলেন, গত এক মাসে অর্ধশতাধিক ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই ভাঙনের মুখে পড়ে ১০-১২ পরিবার তাদের ঘরবাড়ি নদীর পাড় থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছেন।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ কামাল হোসেন বলেন, মোল্লা বাড়ির সামনে থেকে তেঁতুলিয়া নদী বেশী ভাঙছে। তিনি বলেন, প্রায় ১০০ পরিবার ভাঙনের মুখে রয়েছে। এলাকায় ভাঙনের ফলে স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।


৬ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ তেঁতুলিয়ার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। স্থায়ীভাবে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ না হওয়ায় বর্তমানে ভেদুরিয়া ইউনিয়ন হুমকির মুখে। তিনি বলেন, এখানে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ব্যাংকের হাটে টেক্সটাইল কলেজসহ একটি গ্যাস কূপ রয়েছে। যা এখন নদী ভাঙনের হুমকির মুখে। বর্তমানে তেঁতুলিয়ার ভাঙন আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অসহায় মানুষগুলো সহায় সম্পত্তি হারিয়ে অসহায়ত্ব জীবন যাপন করছে। তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনকে ব্লকের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করে ভেদুরিয়া বাসিকে তেঁতুলিয়ার হাত থেকে রক্ষা করার দাবি জানান তিনি।
তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনের কথা স্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভোলার নির্বাহি প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন রোধে এবং চর ভেদুরিয়া ও মধ্য ভেদুরিয়া এলকা রক্ষাকল্পে ইতিমধ্যেই ঢাকা থেকে পাউবোর কর্মরতারা সরেজমিনে এসে সম্ভাব্যতা সমিক্ষা করে গেছেন। সেটা অনুমোদন হলে আমরা স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধ করতে পারবো। এ ছাড়া জরুরী ভিত্তিতে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ মিটার এলাকায় জিওব্যাগ ফেলার কাজও ঢাকার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন পেলে কার্যক্রম শুরু করা হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।