নানান সমস্যায় জর্জরিত বিচ্ছিন্ন রামদাসপুরের কয়েক হাজার মানুষ
ভরা মৌসূমেও ভোলায় জেলেদের জালে মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ

বর্ষার এই ভরা মৌসূমেও ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্খিত ইলিশ। ফলে চরম হতাশায় দিন কাটছে তাদের। যে সময় জেলে পল্লীতে ইলিশের সরগরম থাকার কথা থাকলেও মৎস্য আড়ৎগুলো শূন্য। এর ফলে অভাব অনটন আর দাদনের দুশ্চিন্তায় জেলেদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, এই ভরা মৌসূমে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে জালে, এই আশায় ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়াসহ সাগর মোহনায় প্রায় ২ লাখ জেলে প্রতিদিন জাল ফেলছেন। কিন্তু তাদের জালে মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ। যা ইলিশ ধরা পড়ছে তা বিক্রি করে খরচের টাকাও অনেক সময় উঠছে না। সংসার খরচ জোটাতে পারছেন না অনেক জেলে। এমন অবস্থায় মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ তো দূরের কথা সংসার খরচ চালাতে গিয়ে দিন দিন ঋণের বোঝা ভারি হচ্ছে জেলেদের।
ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা তেমাথা মাছঘাটের জেলে সাইদ আলী মাঝি। ১০ জন ভাগীদার নিয়ে গত শনিবার ভোরে মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সোমবার (২৬ জুলাই) ভোরে ঘাটে ফিরেছেন এক কেজি ওজনের দুইটি বড় ইলিশ মাছ এবং ৮টি জাটকা (ছোট ইলিশ) নিয়ে। বড় মাছ দুইটি বিক্রি করেছেন ২৫০০ টাকাএবং ছোট ৮টি বিক্রি করেছেন ৬০০ টাকায়। তার বরফ, তেলসহ অন্যান্য খরচ আছে দুই হাজার টাকা। বাকি ১১০০ টাকা ১০ জনে কীভাবে ভাগ করবেন ? একই অবস্থা অপরাপর জেলেদের। এসব কথা জানিয়েছেন ওই মাছঘাটের আড়তদার মো: সেলিম, টিটব মোল্লাসহ অন্যান্য আড়তদার ও জেলেরা।
জেলেরা জানান, এসময় যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়ার কথা সেভাবে পাচ্ছেন না তারা। আবার যে পরিমাণ ইলিশ পাচ্ছেন তাতে ট্রলারের তেলের খরচ উঠছেনা। ফলে দাদনের টাকা পরিশোধের বদলে দিন দিন ঋণের বোঝা বেড়েই চলছে। তবে জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, আগামী মাস থেকে জেলেদের জালে মিলবে কাঙ্খিত ইলিশ। আষাঢ়-শ্রাবণ ইলিশের ভরা মৌসুম।
চরফ্যাশনের সামরাজের দুলাল মাঝি জানান, এবছর ভরা মৌসূমে ইলিশা ধরার জন্য এননজিও ও মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে ট্রলার ও জাল কিনেছি। ভরা মৌসূমে মেঘনা নদীতে জাল ফেলে ২/৩ টি ইলিশ ধরা পড়েছে। সাগরে ইলিশ শিকারে গেলে ২ সপ্তাহের জন্য ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়। আর নদীতে দৈনিক ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়।
বকশী ঘাটের তুহিন হাওলাদার জানান, গত বছর এসময় তেঁতুলিয়া নদীতে অনেক ইলিশের ছড়াছড়ি ছিল। নদীতে আশানুরুপ মাছ না থাকায় জেলে ও তাদের পরিবার ঋণের বোঝায় জর্জরিত। তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ মাছ না পরায় জেলার প্রতিটি মৎস্য ঘাটগুলোতে আড়াৎদাররা অলস সময় পার করছে।
চরফ্যাশন উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে নদীতে ইলিশের পরিমান খুবই কম। বৃষ্টির পরিমান বাড়ার সাথে সাথে নদী ও সাগরে ইলিশের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও আগামী আগষ্টের মাঝামাঝি সময় নদীতে ইলিশের পুরো ভরা মৌসুম শুরু হবে। তখন জেলেরা নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাবে।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম নদীতে মাছ কম এটা মানতে নারাজ। তিনি জানান, নদীতে এখন জেলে ও জালের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রত্যেকে একটি বা দুইটি করে পেলেও মাছের সংখ্যাটা কম নয়। তবে সব সময়ই জুন-জুলাইতে মাছ কম থাকে। আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাসে জেলেরা নদীতে আশানুরূপ মাছ পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।