শতাব্দীর মহানায়ক অনন্য মুজিব : পর্ব-১৯

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : এবার এই গার্ড অব অনারের জন্য সন্মানিত ব্যক্তিদের জন্য আমন্ত্রণপত্র ছাপা হল। ব্যান্ড, বিউগলের ও ড্রামের সাথে ট্রেনিং দিলাম। স্যালুডিন ব্যাজ রাখা হল। চারপাশে ফুলের টবের আয়োজন করলাম। সোনার বাংলার পতাকা উত্তোলন করলেন বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা উৎসবের দিন সকাল ৮ ঘটিকায়।
বঙ্গবন্ধু এলেন সাদা ধবধবে পাঞ্জাবী, সাদা পায়জামা, গায়ে মুজিবকোট, পায়ে পামসু। বঙ্গবন্ধু এসে স্যালুডিন ব্যাজে দঁড়াবার পর সাথে সাথে মেয়েদের এটনসন হবার কমান্ড করলাম, বায়েদি লেফ্ট কুইক মার্চ করে অর্ডার করার সাথে সাথে মেয়েরা মার্চ করে চলল। সাথে সাথে ব্যান্ড, বিউগল ও ড্রামের আওয়াজে মেয়েদের মার্চের শব্দে আজিমপুযর গার্লস স্কুলের মাঠটি সেদিন থর থর কম্পন হয়ে উঠেছিল। আইজ রাইট বলার সাথে সাথে বঙ্গবন্ধুকে স্যালুড জানাল। আমিও তাকে মার্চের মধ্যে স্যালুড করে চলে গেলাম। তাজউদ্দিন সাহেব খুব ব্যস্ততা দেখালেন।
তার দু’দিন পর বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলাম। এর মধ্যে অবজারভারে আমাদের প্যারেডের স্যালুডিনের ছবি, বঙ্গবন্ধুকে স্যালুড করার ছবি বিরাট আকারে বেরিয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধু আমাকে দেখে উৎসাহে বলে উঠলেন, আরে আমার কম্যান্ডার ইন চীফ বাংলাদেশ। আমি হেসে ফেললাম। আজ আমার মনে পড়ে তখন জুলাই এর প্রথম কি দ্বিতীয় সপ্তাহে আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে বিরাট প্যান্ডেল ঠিক করা হয়েছে। সেখানে এক বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তখন নুতন বাকশাল গঠিত হয়েছে। অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি নুতন বাকশালের গভর্নিং বডির সদস্য হয়েছেন। কেউই তখন এসে পৌছান নি। আমি মহিলা আওয়ামীলীগের সেন্ট্রাল কমিটির মেম্বার হয়েছিলাম। ছিলামও একাত্তর, বাহাত্তর, তিয়াত্তর, চুয়াত্তর পর্যন্ত। কিন্তু বাকশালে আমার নাম জাতীয় পর্যায়ে দেওয়া হয়নি। তাতে আমি একটুও দুঃখিত হইনি। মেজর জেনারেল শফিউল্লাকে দেখলাম সামনের সারিতে বসে আছেন। তারপর দেখলাম খালেদ মোশাররফ এসেছেন। তিনিও সামনের সারিতে বসা। উনিও বোধ হয় বঙ্গবন্ধুর বাকশালে যোগদান করেছেন। মেজর জেনারেল জিয়া সাহেবও কিছুক্ষণ পর এলেন। ওনার নাম বাকশাল কমিটিতে নেই মনে পড়ে।
আমি ঐ অনুষ্ঠানে আমার লেখা একটি কবিতা পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। কবিতাটির নাম, অনেক অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম। লোকজন খুব ধীর গতিতে আসছেন। আর আমরা সবাই জনি আমাদের সময়জ্ঞান খুব কম। আর একটি প্রশংসা আমি আজ না করে থাকতে পারছি না। আর্মিদের সময়জ্ঞান খুব প্রখর। ডিসিপ্লিনের জন্য ওনারা শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করতে পারেন। বঙ্গবন্ধু এলেন ধবধবে সাদা মকমল এর পাঞ্জাবী গায়ে। গায়ে মুজিবকোট, চাদর জড়ানো সেটা আর আভিজাত্যের নমুনা। এর মধ্যে সকলেই এসে গেছেন। বঙ্গবন্ধুকে দেখে সম্ভ্রমে দাঁড়িয়ে পড়ল।
অনুষ্ঠানের সূচনা ঘোষণা করা হল। আমার সোনার বাংলা গান শুরু হবার সাথে আমরা সবাই যে যেখানে ছিলাম দাঁড়িয়ে পড়লাম। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়তে লাগল। অসংখ্য ফুলে ফুলে স্টেজ সাজানো হয়েছিল। রজনীগন্ধা, জুই এবং বকুলের মন মাতানো গন্ধে স্টেজে অংশগ্রহণকারীরা সেদিন খেঁই হারিয়ে ফেলেছিল। লায়লা সারোয়ার তার লালন গীতি গেয়ে শ্রোতাদেও আপ্লুত করল। আমিও আমার কবিতা পড়লাম। সভামঞ্চে কিছুক্ষণ হাততালি দিয়ে স্তব্ধ হয়ে থাকল।

(চলবে———-)

আরও পড়ুন

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

You cannot copy content of this page