বোরহানউদ্দিনে কলেজ ছাত্রীর পরিবারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন এমপি মুকুল

করোনা মহামারিতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে কলেজ ছাত্রী রোজিনা আক্তারের পরিবার। সরেজমিনে জানা যায়, বোরহানউদ্দিন আবদুল জব্বার কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী রুজিনা আক্তার। বাবা আবদুল জলিল জীবিত থেকেও নেই। ২০০৪ সালের ১৩ জুন তার মা নাজমা বেগমকে ডিভোর্স দিয়ে পাড়ি জমায় নোয়াখালী। সেখানে একজনকে বিয়ে করে বসবাস করছেন। বাবা ছেড়ে যাওয়ার পর মাকে নিয়ে রুজিনার ঠাঁই হয় বোরহানউদ্দিন পৌরসভা ৬ নং ওয়ার্ড আবদুল জব্বার কলেজ সংলগ্ন দরিদ্র নানার ৪ শতক জমির উপর নির্মিত টিনের জরাজীর্ণ বসত ঘরে।
নানা-নানি ও মা মেয়ের চারজনের পরিবারে খেয়ে-না খেয়ে চলছিল কোনরকমে। নিয়তি নির্মমতায় ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে একমাত্র পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্বে থাকা রোজিনার নানা আব্দুল খালেক বয়াতির হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যায়। তখন থেকে নেমে আসে পরিবারে অনামিষা ঘোর অন্ধকার। অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে পরিবারটি। রুজিনার নানী ফানুজা বেগম বৃদ্ধ বয়সে এবাড়ি-ওবাড়ি ঝিঢের কাজ করে সংসার চালায়। পাশাপাশি সংসারের কিছুটা যোগান দিতে এবং রুজিনার পড়ালেখার খরচ যোগাতে তার মা স্বামীহারা নাজমা সেলাই কাজ করে সংসারের খরচ জোগায়। এত অভাবের সংসারের মধ্যেও রুজিনা পড়া লেখা চালিয়ে কলেজে উঠেন।
অভাব অনটনের সংসারে রুজিনা দুই-একটি টিউশনি করে কিছুটা অর্থের যোগান দিতেন। নানা মারা যাওয়ার পর এতদিন টেনে টুনে তাদের তিনজনের সংসার চললেও নানি ফানুজা বার্ধক্যে নতজানু হয়ে ঘরে বন্দি। উল্টো ঔষধের ঘানি টানতে হয় নাজমাকে। নিরুপায় নাজমা সেলাই মেশিন চালিয়ে মায়ের ঔষধ ও মেয়ের পড়াশোনার খরচ যোগাতে আর পেরে উঠছে না। তার মধ্যে আবার নাজমা নিজেই অসুস্থ। করোনার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় রোজিনার টিউশনিও বন্ধ হয়ে গেছে। এ যেন এখন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। জরাজীর্ণ ঘরটি সামান্য বাতাস হলে যেকোনো সময়ে মাটিতে দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে। ঘরের ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি নিবারনের জন্য চালায় প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে কোনমত ঢেকে রাখছে। তবে মাঝে মধ্যেই এসকল কাগজ বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায়। দীর্ঘ পুরানো চালা হওয়ায় টিনের ফুটোয় ঘরের মেঝে পানিতে একাকার ও টেবিলে থাকা রুজিনার বই খাতা ভিজে বৃষ্টির পানির সাথে ভেসে যাচ্ছে রোজিনার পড়াশোনা করে বেড়ে উঠার স্বপ্ন। প্লাস্টিকের কাগজে মোড়ানো এখন রোজিনার স্বপ্ন। একদিকে খাবারে অভাব অন্যদিকে জরাজীর্ণ ঘর। আরেকদিকে রোজিনার পড়াশোনা। এই নিয়তির খেলায় হার নামেনে জীবন যুদ্ধে চলছেন তারা। তাহলে রোজিনা পড়াশোনা করে বেড়ে ওঠার স্বপ্ন কি প্লাস্টিকের মোড়ানো থাকবে। এই চিন্তার ভাঁজ পুরো পরিবারের কপালে। প্রতিনিয়ত বৃষ্টিতে ভিজে প্রধানমন্ত্রী ঘরের আশায় বুক বেঁধেছে তারা। ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহায়তা চায় অসহায় পরিবারটি।
বোরহানউদ্দিনের সাংবাদিকদেও লেখালেখি করলে বিষয়টি এমপি আলী আজম মুকুলের চোখে পড়ে। তখন আলী আজম মুকুল ওই বাড়িতে যান এবং বলেন, সাংবাদিকদের করা একটি পোষ্ট আমার দৃষ্টিগোচর হয়। পিতৃহীন একটি অসহায় পরিবারের জন্য সহযোগীতা চেয়ে পোষ্টটি করা হয়। আমি তখন ঢাকা। গতকাল ঢাকা থেকে বোরহানউদ্দিন পর্যন্ত আসতে রাত হয়ে যায়। তখন আর যাবার সুযোগ হয়নি। আজ বিকেলে ফেজবুক পোষ্টের সেই বাড়িতে হাজির হই আমি। বাড়িটি চিনতে তুহিনের সহযোগীতা ছিল। কি করুন পরিবেশ তা নিজ চোখে না দেখলে উপলব্দি করা মুশকিল। মনে হচ্ছিল একটু জোড়ে বাতাস হলেই গুটিয়ে যাবে ঘরটি।
আমি সিন্ধান্ত নিয়েছি ঈদের পরেই আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নে এখানে এই অসহায় পরিবারটির জন্য একটি সেমি পাকা ঘর (মুজিব বর্ষে নির্মিত ঘরের আদলে) নির্মান করে দিব। পিতৃহারা কলেজ পড়ুয়া মেয়েটির লেখা-পড়ার যাবতীয় খরচসহ থাকবে সকল সামাজিক সুবিধা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসাবে মুজিব বর্ষে এটাই হবে আমার পক্ষ থেকে দেয়া সেরা উপহার।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।