শতাব্দীর মহানায়ক অনন্য মুজিব : পর্ব-১৮

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত পর্বের পর) : বাংলাদেশের নতুন নাম বহন করে গৌরবে, আনন্দে, দর্পে নিজ শালীনতা বজায় রেখে আপন মনে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছিল। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সবেমাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে। নতুন দেশ, ঐষধপত্র আমদানি ও রপ্তানী কিছুটা কমতি দেখা দিয়েছিল। কাপড় চোপড়ের দাম অসম্ভব রকম বেড়ে যাচ্ছিল, আস্তে আস্তে কোথায় যেন একটা শিথিলতা নেমে আসছিল। একাত্তরে দেশ স্বাধীন হল, কত ওলট-পালট, দেশের আইন-কানুনের মত পরিবর্তণ। সবকিছুর জন্য জনসাধারণ অসুবিধায় ছিল। তবু বঙ্গবন্ধুর ভালবাসায়, ত্যাগ, তিতীক্ষা ও আদর্শে অভিভূত হয়ে জনসাধারণ টু শব্দটিও করেনি।
এসেম্বিলির পথ পরিবর্তণ হতে লাগল। সংসদ ও সদস্যগণ গুন গুন করছিল। বাকশাল নামে কি যেন একটি হবে। কত মিটিং, কত প্রশাসন, কত ওলট-পালট রাজনীতির জটিল চক্রে ঘুরছে, তার ভিতরের ঘোর-প্যাচ আমি উপলব্ধি করতে পারিনি। আমি তখন বঙ্গবন্ধুর সেন্ট্রাল কমিটির মেম্বার ছিলাম। মহিলা আওয়ামীলীগের মেম্বার ছিলাম। অথচ ১৯৫৪ সালে খুলনায় মহিলা আওয়ামীলীগের আমি প্রেসিডেন্ট ছিলাম।
আওয়ামীলীগের প্রেসিডেন্ট থাকাকালিন গ্রামে-গঞ্জে, নগরে-পল্লীতে, আমি আওয়ামীলীগের অনেক কাজ করেছিলাম। অনেক পুলিশ, দারোগার কু-নজরে আমাকে পড়তে হয়েছে। অনেক দারোগা-পুলিশের বেষ্টনি আমার জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। বিশাল জনসভায় আমাকে বক্তৃতা করতে হয়েছে। অথচ আমার স্বামী একজন সরকারী চাকুরে। তাকে অনেক ডি.সি. এক্সপ্লানেশন কল করেছিল। আমার কাজের সাথে জড়িত ছিল খুলনার অনেক গণ্যমান্য মহিলা ও অনেক পুরুষ। সালেহ উদ্দিন ইউসুফ, সুফিয়া আলী, রিজিয়া খানম, হেলেনা আলী, দেলদার আহমেদ ও আব্দুল জলিল এডভোকেট এদের কথা মনে আছে। দেলদার সাহেব করাচীতে ইষ্ট পাকিস্তানের ফরেন মিনিষ্টার ছিলেন।
আমার স্বামী তার চাকুরীর অসুবিধার জন্য আমাকে দু’কথা শুনিয়ে দিতে ছাড়েন নি। তবু কাজ করে গেছি, কিসের এক রাজনীতির মোহে দিক থেকে দিগন্তে উল্কার মত ছুটে বেড়িয়েছি। রাজনীতি তখন আমার মজ্জায় মজ্জায় মিশে ছিল। আমার তারুণ্যের অহঙ্কার ছিল একটা কিছু করবার জন্য। আমার উপর আওয়ামীলীগ থেকে অনুরোধ এল সোনার বাংলার প্রথম স্বাধীনতা উৎসবে বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার দেওয়ার জন্য। আমি অগ্রণী গার্লস স্কুল, আজিমপুর গার্লস স্কুলে মেয়েদের রাইফেল ট্রেনিং এর আয়োজন করে আমি নিজে দাঁড়িয়ে কমান্ড করে ট্রেনিং শুরু করলাম। প্রায় পনেরো দিন নিরলস পরিশ্রম করে ৩টি প্লাটুন তৈরী করলাম। তাতে নব্বইটি মেয়ে অংশগ্রহণ করেছিল। আজিমপুর গার্লস স্কুলে গার্ড অব অনার দেওয়ার বন্দোবস্ত করলাম।
(চলবে———–)