ভোলা জেলার গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতি : পর্ব-০১
আমাদের ভোলা জেলার গ্রাম্য সংস্কৃতি একটু ব্যতিক্রমধর্মী। যা যুগ যুগ ধরে গ্রাম্য বৃদ্ধ, যুব ও শিশুদের মুখে মুখে লালিত হয়ে আসছে। যা সমৃদ্ধ করছে পরবর্তীতে শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে। এখনো গ্রামগঞ্জে হাঁটলে চোখে পরে মেঠো পথের ধারে অথবা স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসার মাঠে ঘাটে গ্রাম্য ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা হরেক রকম গ্রামীন খেলায় মেতে উঠত। যা কতইনা মধুময় ! আর এদের মুখেই বেঁচে আছে আমাদের গ্রাম্য সংস্কৃতি লোককথা, লোক কাহিনী। আগামীতেও বেঁচে থাকবে এসব সংস্কৃতি। গ্রাম-গঞ্জের সহজ সরল মানুষের হৃদয়ের স্মৃতিতে। এসব সংস্কৃতি যাতে হারিয়ে না যায় সেই প্রয়াসে আমার সংগ্রহে কিছু লেখা।
গ্রাম গঞ্জের ছেলে মেয়েদের জনপ্রিয় কয়েকটি খেলা ছিঁ বুড়ি (বৌ ছিঁ), গোল্লাছুট খেলা, কুতকুত খেলা, বউ চুরি খেলা, জুতা চুরি খেলা, নখচিপানী খেলা, আটার বস্তা ময়দার বস্তাখেলা, লুতা লুতা খেলা, গোস্ত চুরি খেলা, দৌড়ানি খেলা, নানীবুড়ি খেলা। এ খেলায় গ্রাম্য ছন্দ কবিতায় খেলোয়াড় যে ছন্দ বলে ছিঁ দেন তার কিছু অংশ তুলে ধরলাম।
১। ঐ বাড়ি গেছিলাম কৈ মাছ খাইছিলাম, কৈ মাছের তেলে পেট ব্যথা করে- পেট ব্যথা করে —
২। ছিঁ বুড়ি তাই কমলা বাজাই কমলার সুরে গুন গুন করে-গুন গুন করে —
৩। ইচিং বিচিং চিচিং ছা প্রজাপতি উড়ে যা, ইশ-বিশ ধানের শীষ —
৪। কেলা গাছের আয়না, মুখ দেখা যায় না –
৫। আসেন তো দুলাভাই বসেন্ত চেয়ারে, শরবত গুলতে কি কি লাগে, ডাবের পানি মিষ্টি লাগে-
৬। গুনগুন নেছা, বগের খাঁচা-
৭। আমগাছে ভাউয়া ব্যাঙ কাউয়ায় ধরল ঠেং দাদা পটটেং পটটেং-
৮। রিকশা আলা মাওই ঝিঁ এক পায়ের জিলাপি, আল্লাহর কি দান বিবি সুলতান-সুলতান ।
৯। সীমা যাবে স্কুলে সঙ্গে যাবে কে, সঙ্গে যাবে ছোট বোন চুল বেঁধেছে-চুল বেঁধেছে।
১০। ইলিশ মাছের ত্রিশ কাঁটা বোয়াল মাছের দাড়ি, অমুক লোকে ভিক্ষা করে সেমুখ লোকের বাড়ি।
১১। ছি কুতকুত তারে নারে, বাবুল ডাকে বারে বারে বারে—-বারে—–
১২। এক গ্লাস পানি দই দই করে, রাজার মেয়ে ভিক্ষা করে—-
১৩। ইচিং বিচিং চিচিং চা, পায়ের জুতা নিয়ে যা—
১৪। ইংরি বিংরি ভালো কি—-
১৫। মাথার চুল পায়ের পাতা, মাথায় বলে কত কথা।
১৬। শান্তা লতা বাঁশপাতা, পায়ে ঝুমঝুম করে শান্তালতার বিয়ে হবে জমিদারের ঘরে, জমিদারের ছেলে মুরগি চুরি করে, অর্ধেক পথে যেয়ে মুরগি কক কক করে।
১৮। একে ঋতু, দুইয়ে ডাবল টু, তিনে ঘোড়ায় চরি, চারে চার চাকা ঝিমঝিম করে, পাঁচে জবান আনচে, ছয়ে ছিলিপ কাডে, শাতে শান্ত, আটে আসুন তো দুলাভাই, বসেনত চেয়ারে শরবত করতে কি কি লাগে, ডাবের পানি মিষ্টি লাগে। নয় যেন দাদু রিকশা চালাচ্ছে দাদু কলা আনছে, বাহ কি মিষ্টি লাগছে।
১৯। বাঁশ পাতা লরে চড়ে, সীমার কথা মনে পড়ে। যদি সীমা থাকতো, এক খান চিঠি লিখত। চিঠির মধ্যে বাংলাদেশ, আজ আমাদের খেলা শেষ।
লেখক ঃ ডাঃ মোঃ মহিউদ্দিন
প্রভাষক
সার্জারি বিভাগ
ভোলা ইসলামীয়া ইউনানী মেডিকেল কলেজ।