সর্বশেষঃ

ফলোআপ

৪ দিনেও ভোলার দস্যুতা, শিশু হত্যা, ধর্ষণের রহস্য উদঘাটন হয়নি, পুলিশ বলছে রহস্যজনক

ভোলা সদরের পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের পাংগাশিয়া গ্রামে এক রিকশাচালকের ঘরে সংঘটিত দস্যুতা, শিশু হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয় লোকজন ও এ বিষয়ে এর সঠিক কারণ জানাতে পারেন নি। এদিকে দস্যুতা, শিশু হত্যা ও ধর্ষণের পর থেকে ভিকটিম রিকশাচালকের ঘরে বৃহস্পতিবার তালাবদ্ধ দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, ভিকটিম রিকশাচালক ও তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভোলা সদর মডেল থানায় নিয়েছে। পুলিশ বলছে, ওই দিন রিকশাচলকের স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ঘটনার পরদিন থানায় এসে পুলিশের কাছে ধর্ষণের কথা বলেছেন ওই গৃহবধূ। তাই তাকে ২২ ধারায় জবানবন্দির জন্য বৃহস্পতিবার ভোলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নেওয়া হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষাও সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানায়, এ ঘটনা এখনো রহস্যময়। তবে, তদন্তে খুব শিগগিরই প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের পাংগাশিয়া গ্রামে রিকশাচালকের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে তার ঘর তালাবদ্ধ। পাশ্ববর্তী ঘরের গৃহিণী ও নিহত শিশুর চাঁচি বলেন, গত মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে শাশুড়ির চিৎকার শুনে তিনি ওই ঘরে যান। তখন দেখতে পান মুখবাধা অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে তার জা। পাশে বসে রয়েছে স্বামী। তাদের ৩ মাসের শিশুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে ঘরের পিছনের একটি ডোবা থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করলো।
তিনি আরও বলেন, দেবরের দুটি বোরাক ছিল। তার মধ্যে গত কয়েকদিন আগে দেবর একটি বোরাক ৩৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ওই টাকার মধ্যে কিছু টাকা পাওনা তার বোন জামাইকে দেয়। আর ৩ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে বাথরুমের দরজা কিনেছেন। তিনি ধারণা করছেন, ওই টাকার খবর হয়তো জানতে পেরে ডাকাতরা দেবরের ঘরে ডাকাতি করেছে। শিশুটি কান্না করায় ডাকাতরা তাকে হত্যা করেছে। প্রায় একই কথা বললেন, পাশ্ববর্তী ঘরের গৃহিণী তাসনূর বেগম।

তবে, পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছে, রিকশাচালকের ঘরে দস্যুতার অভিযোগের পাশাপাশি অন্য রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে। তদন্তে খুব শিগগিরই প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে।

এ ব্যাপারে ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ আনিসুর রহমান শনিবার বিকেলে জানান, ওই ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে শুক্রবার বিকেলে একজনকে আটক করা হয়েছে। তাকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ভোলা সদর মডেল থানার ওসি মোঃ এনায়েত হোসেন জানান, ঘটনারদিন রিকশাচলকের স্ত্রীকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ধর্ষণ করেছে। তাই, ধর্ষিতাকে ২২ ধারায় জবানবন্দির জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে ভোলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় ভোলা সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রিকশাচালক বাদি হয়ে অজ্ঞাত ৪ জনকে আসামী করে এ মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ জুলাই মঙ্গলবার মধ্যরাতে ডাকাত দলের ৪ সদস্য মুখে কালো মুখোশ পড়ে ধারালো অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের পাংগাশিয়া গ্রামে রিকশাচালকের ঘরে ঢুকে। এ সময় ডাকাতরা তার ঘুমন্ত স্ত্রীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে ঘরে থাকা টাকাপয়সা ও স্বর্নালঙ্কার দাবি করে। তখন তাদের ৩ মাসের কন্যা শিশু কান্না করায় তাকে ডাকতরা ঘরের পিছনের একটি ডোবার পানিতে ফেলে হত্যা করে। পরে ডাকাতরা চলে গেলে শিশু সন্তানকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেয়। রিকশাচালক জানান, ডাকাতরা তার ঘর থেকে নগদ ১২০০ টাকা ও এক ভরি ওজনের স্বর্ন লুট করে নিয়ে যায়।

পুলিশ বলছে, এটা ডাকাতি নাকি এর মধ্যে অন্য কোন রহস্য লুকিয়ে আছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসপি সার্কেল) ঘটনাস্থলে এসেছেন। তার নেতৃত্বে ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নিহত শিশুর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।