শতাব্দীর মহানায়ক অনন্য মুজিব : পর্ব-১৫
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত পর্বের পর) : আমার ছেলেরা এক এক করে লুঙ্গি পরে ঢাকায় পাড়ি জমাল। বেইলি রোডে গ্যাজেটেড অফিসার্স হোষ্টেলে। আমি পড়ে থাকলাম গ্রামে গঞ্জে, চর এলাকায়। আমার বড় ছেলে খবর পেয়ে দু-দুবার আমাকে দেখে এল। শেষ বার শুনি যে মিলিটারী খুব ধরপাকড় করছে। ও আমার ওখানে এসে আমাকে শাড়ী পরিয়ে ঘোমটা টেনে প্রথমে লঞ্চে বরিশাল, তারপর থেকে স্ট্রীমারে ঢাকা সদর ঘাটে এসে বেবি টেক্সি করে তেজকুনি পাড়ায় তুলল।
চাল, ডাল, মাছ তরকারী কিনে আগে থেকেই ওখানে ঐ বাড়ী ভাড়া করেছিল। জায়গাটা এত খারাপ, এ রকম জায়গা আমি জীবনেও দেখিনি। আমি ভোলা মহকুমা শহরে লালিত পালিত হয়েছি। ভোলায় আমাদের পাড়াটার নাম উকিল পাড়া, সমস্ত উকিলদের আস্তানা। সভ্য, শিক্ষিত, মার্জিত লোকের বসবাস। এই তেজকুনি পাড়ায় সভ্য জগতের কোন মিল নেই। ছোট মেয়েটিকে আদর যতœ করতাম। তেজকুনি পাড়ার লোকেরা এত আনস্যোসাল, কেউ কারও বাড়ীতে যাওয়া-আসাও করে না। আমি অনেক গ্রামে-গঞ্জেও থেকেছি, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে দেখেছি, সামাজিকতার আদি রূপ ভদ্রতার কিছুটা মুখোশ। কিন্তু ঢাকায় এই তেজকুনি পাড়ায় উনিশ-শ-সত্তর সালে যা দেখেছি, ভিন্ন পৃথিবী, আজব কান্ড কারখানা। আওয়ামীলীগের কোন লোকের সাথেও সেখানে পরিচয় হয়নি।
রাত হয়ে গেলে রেডিওটা কানের কাছে নিয়ে রেডিওতে মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর পেতাম। মুক্তিযুদ্ধের গান শুনতাম। জয় বাংলা, বাংলার জয়। মুক্তিযুদ্ধের নিত্যনতুন জয় করার সু-সংবাদ পেতাম। জীবনটা বড় একঘেয়ে চলছিল। আওয়ামীলীগের কোন বন্ধু-বান্ধবের খোঁজ খবর পাই না। মাঝে মধ্যে গর্বে বুক দুলে উঠে। ওয়েষ্ট পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর নণতুর্য্য আমার চোখের সামনে দিয়ে ঘোরাফিরা করছে। নিধন করছে ঘরের মা-বোনদের। হত্যা করছে ঘরের নিভূত কোন থেকে টেনে এনে আমার সোনার ছেলেদের। মা-বোনদের আকুল কান্নায় আমার সোনার দেশের আকাশ-বাতাশ পাথর হয়ে উঠেছে। কেন যেন শুনেও শুনতে চায় না। হৃদয়ের বন্ধ দুয়ার ভয়ে আতংকে আর উন্মুখ হয় না।
শুনছি মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করে পাকিস্তানী সৈন্যদের হটিয়ে দিচ্ছে। আমাদের জনগণ ওদের পুকুরে, নদীতে, নৌকা ছিদ্র করে ডুবিয়ে মারছে। শীঘ্রই আমরা পাকিস্তানীদেরকে হারিয়ে দিয়ে সোনার দেশকে স্বাধীন করব। সে আমায় বুক বেঁধে আছি। খুব নাকি পাকিস্তান আর্মিরা আমাদের দেশে হত্যাকান্ড চালাচ্ছে।
(চলবে—————-)