কঠোর লকডাউন: ভোলার মাঠে তৎপর প্রশাসন, বন্ধ ছিল দোকান-পাট, চলাচল করেনি যান

১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ঘোষিত কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে ১ জুলাই বৃহস্পতিবার বেশ তৎপর ছিল প্রশাসন। সকাল থেকেই ভোলা সদর রোড, যুগিরঘোল, মহাজপট্টি, চকবাজার ও কাচাবাজারের খালপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদেরকে মাঠে তৎপর থাকতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে কাচাবাজারের খালপাড় এলাকায় এক আম ব্যবসায়ী মুখের মাস্ক যথাযথ ব্যবহার না করায় নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ ইউছুফ হাসানের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমান আদালত ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
এ সময় র্যাপিড এ্যাকশ ব্যাটালিয়ান(র্যাব) সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে সদর রোড এলাকার ফল ব্যবসায়ী মোঃ মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আমরা আমের সিজনে আম বিক্রি করি। এটা পচনশীল পণ্য। তাই সরকারের পক্ষ থেকেও এ পণ্য বিক্রিতে কোন বাঁধানিষেধ নেই। সরকারের ঘোষিত নিয়ম মেনেই আম বিক্রি করছি। তিনি আরও বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আজ একজন আম বিক্রেতার কাছ থেকে এক হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। শুধুমাত্র মুখের মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে রাখার অপরাধে তাকে এ জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু জরিমানার টাকা বেশী মন্তব্য করে ফল ব্যবসায়ী মাকসুদ বলেন, এটা জুলুম।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের নেতৃত্বদানকারী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ ইউছুফ হাসান ভোলার বাণীকে বলেন, ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের সময় বিচারক অপরাধীর অপরাধের ধরন বিবেচনায় যে কোন অংকের অর্থ কিংবা দণ্ড দেওয়ার বিধান আইনে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, কঠোর লকডাউন কঠোরভাবে পালনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জনগণকে বারংবার সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু যারা বারংবার সতর্ক করা সত্বেও করোনাকালীন এ সময়ে গাফিলতি করছেন কিংবা সরকারের নির্দেশনা মানছেন না শুধু তাদের বিরুদ্ধেই জেল-জরিমানাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া বাংলা স্কুল মোড়, সদর রোড, যুগিরঘোলসহ বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ওই সব এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ও ভোলা সদর মডেল থানার পুলিশকেও তৎপর থাকতে দেখা গেছে।
তারা জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কাউকে রাস্তায় বের হতে দিচ্ছে না। যে সব যানবাহন রাস্তায় চলাচল করার চেষ্টা করছে তাদেরকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
যারা সদুত্তর দিতে পারেননি তাদেরকে করা হচ্ছে জরিমানা।
ভোলা জেলা স্কাউটসের সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন তালুকদার ও টিম লিডার মোঃ মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে জেলা স্কাউটস সদস্যদেরকেও সদর রোড এলাকায় করোনা সংক্রমণ রোধে জনসচেতনতায় কাজ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও সদর রোডে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম করতে দেখা গেছে।
ভোলা সদর উপজেলার সদর রোড এলাকায় জরুরী ওষুধের দোকান ও নিত্যপ্রয়োনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া অন্য সব দোকানপাটই ছিল বন্ধ।
তবে, ব্যবসায়ীরা বলছেন, লকডাউনে তাদের ব্যবসায় চরমভাবে ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে দীর্ঘদিন লকডাউন দিলে তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হবে।
সদর রোডের ব্যবসায়ী রিয়াদ মাহমুদ বলেন, লকডাউনে একদিকে ব্যবসায়ীক দিক থেকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অন্যদিকে, কর্মচারিদেরকে নিয়েও আমরা আছি দুশ্চিন্তায়। কারন, তাদের মাসিক বেতনও দিতে হচ্ছে। আবার করোনাকালীন তাদের সাংসারিক খরচও চালাতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভোলা সদর মডেল থানার ওসি মোঃ এনায়েত হোসেন জানান, কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী পুলিশ সুপার সরকার মোঃ কায়সারের নেতৃত্বে ভোলা সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ তৎপর ছিল। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। তিনি বলেন, আমি নিজেও রাস্তায় থেকে তদারকি করেছি। করোনাকালীন সময়ে সবাইকে মাস্ক পরতে ও স্বাস্থবিধি মেনে চলতে জনগণকে সচেতন করেছি। তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করছি।
উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলায় কঠোরভাবে পালিত হয়েছে প্রথম দিনের কঠোর লকডাউন।