চাকরিচ্যুতির ৩৯ বছর পর সব সুবিধা পাবেন মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল
১৯৮২ সালে সামরিক আদালতে সাজা পাওয়ার পর পাট সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চাকরি হারানো পটুয়াখালীর বাউফলের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকনের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ সমুদয় পাওনা দেওয়ার রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আবেদন সোমবার (২৮ জুন) খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির ভার্চ্যুয়াল আপিল বেঞ্চ। আদালতে মো. ওবায়দুল আলম আকনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী নোমান হোসাইন তালুকদার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্তি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহম্মদ মোরশেদ।
আইনজীবীরা জানান, ফলে চাকরি হারানোর ৪৩ বছর পর ওবায়দুল আলম বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ সমুদয় পাওনা পেতে আর কোনো বাধা নেই। ১৯৭৪ সালে পাট সম্প্রসারণ সহকারী পদে যোগ দেন মো. ওবায়দুল আলম আকন। নিয়ম অনুসারে ২০১২ সালে তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। আড়াই টাকা বেশি মূল্যে সরকারি পাট বীজ বিক্রির অভিযোগে ১৯৮২ সালের ১৫ এপ্রিল তৎকালীন পাট সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক পাট সম্প্রসারণ সহকারী মো. ওবায়দুল আলম আকনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সামরিক আদালত ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ওবায়দুলকে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি দুই মাস জেল ও এক হাজার টাকা জরিমানা করে। সাজা অনুযায়ী তিনি জেল খাটেন এবং জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন।
দীর্ঘদিন পর ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট এরশাদের সামরিক শাসনামলের সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে এরশাদের ঘোষিত সামরিক শাসন, সামরিক ফরমান ও সামরিক নির্দেশ অবৈধ ঘোষিত হয়। পরে ওবায়দুল হক আকন সামরিক আদালতের সাজা ও চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ ২০১২ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর হাইকোর্ট এরশাদের সামরিক আদালতে আকনের সাজা অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে আবেদনকারী মো. ওবায়দুল আলম আকনকে তার চাকরি জীবনের অবসর পর্যন্ত বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ সমুদয় পাওনা দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০২০ সালের ৮ মার্চ বেতন-ভাতা দেওয়া সংক্রান্ত অংশ বহাল রেখে সামরিক আদালতের সাজা অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের বাকি অংশ বাদ দেন। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই রায় রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে। সোমবার তা খারিজ করেন আপিল বিভাগ।
সুত্র : বাংলানিউজ।