সার্ভে সনদ ছাড়াই চলছে ইলিশা ঘাটের ক্ষুদে নৌ-যান ॥ বাঁধা নেই কর্তৃপক্ষের

নৌ-পথে প্রতিবছর ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাত মাসকে ঝুঁকিপূর্ণ মৌসূম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সময় অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়াতে মেঘনা ও সাগর মোহনার উপকূলীয় ৩ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথে সি-সার্ভে সনদ ছাড়া নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ থাকে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দেশের অনেক নৌ-পথে সি-সার্ভে সনদ ছাড়াই অনেক নৌযান চলাচল করছে অনবরত। এটা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।
সরেজমিনে রবিবার (২৭ জুন) ভোলা থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার মজুচৌধুরি হাট যাতায়াতে বেশকিছু ছোট ছোট নৌযান সি-সার্ভে সনদ ছাড়াই চলাচল করতে দেখা যায়। সরকার অনুমোদিত ব্যবস্থা থাকার পরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ ট্রলার ও বোটে যাত্রীদের পার হতে বাধ্য করছে একটি কু-চক্রিমহল। তবে সে ক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনকে কেন্দ্র করে নৌ-পথে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে সাথে সাথে বাড়ছে অনুমোনহীন নৌ-যানের সংখ্যা। বর্তমানে মেঘনা নদীতে চলমান রেড যোন সময়ে দুর্ঘটনা এড়াতে সি-সার্ভে সনদধারী নৌ-যান চলাচল নিশ্চিত করার বিধান থাকলে সংশ্লিস্ট প্রসাশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার অদৃশ্য ইশারায় যথাযথ উদ্যোগ ভ্যাস্তে যাচ্ছে বলে দাবি যাত্রী সাধারণের।


সি-সার্ভে সনদ হচ্ছে- যে সনদে লেখা থাকে সংশ্লিষ্ট নৌ-যানটি ঝুঁকিপূর্ণ মৌসূমেম নদী বা সাগরপথে চলাচলের উপযোগী। নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর থেকে এ সনদ দেওয়া হয়ে থাকে। এ সনদ না থাকার মানে হচ্ছে নৌ-যানটি নদী বা সমুদ্রপথে চলাচলের উপযোগী নয়। অথচ বাস্তবে ইলিশা ঘাটে দেখা যাচ্ছে সি-সার্ভে সনদ ছাড়াই চলছে টিকটিকির মত ছোট-ছোট কাঠের তৈরি ও ষ্টিলবডি নৌ-যান। তবে এ ঘাটে উপস্থিত থাকা বিআইডব্লিউটিএ উপ-পরিদর্শক জাহিদ হাসানের উপস্থিতিতেই পল্টুন থেকে নির্ধিদায় যাত্রীবহন করে চলছে এসব ছোট-ছোট ট্রলার। তবে ঊপস্থিত কর্মকর্তার চলাচলে বাধাপ্রদানের কোন কার্যকরী ভূমিকা লক্ষ্য করা যায় নি।
এ বিষয়ে উপ-পরিদর্শক জাহিদ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আমি আসার পরে ফিটনেস বিহীন কোন নৌ-যান ছেড়ে যায়নি। তবে চারপাঁচ জন যাত্রী নিয়ে ছোট একটি ট্রলার ছেড়ে গেছে, যা আমি আটক করতে সক্ষম না হলেও ট্রলারটির মালিকের নাম ঠিকানা সংগ্রহে রেখেছি।
আপনার উপস্থিতিতে ছোট ছোট নৌযানে যাত্রী পারাপার করছে আপনি ব্যাবস্থা নিচ্ছেন না কেন ? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এটা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এখানে নৌ-পুলিশ ও কোষ্টগার্ড সদস্যরা রয়েছে, তারা চাইলে আটক করতে পারতেন।
আপনি কোষ্টগার্ড বা নৌ-পুলিশকে অবহিত করেছেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাদের আটক করার এখতিয়ার আছে। আমার তাদের অবহিত করার প্রয়োজন নেই। এসব ছোট ছোট নৌ-যানে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা ঘটার পর বেশির ভাগ নৌ-যানের ফিটনেস না থাকার কথাই প্রকাশ করেন কর্তৃপক্ষ, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে একেবারেই নির্বিকার। এছাড়া যেসব নৌ-যানের সি-সার্ভে সনদ আছে, সেগুলো আসলেই নদী বা সমুদ্রে চলাচলের উপযোগী কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে বেশ। কিভাবে অবৈধ ছোট-ছোট নৌ-যান ইলিশা ঘাট থেকে মজুচৌধুরির হাট রুটে চলাচল করছে সেদিকে যথাযথ ভুমিকা নেই কর্তৃপক্ষের। যার ফলে পরিস্কার যে এই নৌ-পথের নিরাপত্তা ক্রমেই আরও ঝুকিপূর্ণতার দিকে এগুচ্ছে।
এ ব্যাপারে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এখন জরুরী। নৌ-পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সি-সার্ভে সনদ ছাড়া যাতে কোনো নৌ-যান এ নৌ-পথে চলাচল করতে না পারে, সে জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করার দাবী যাত্রীদের।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

You cannot copy content of this page