মনির হত্যাকান্ড

চরফ্যাশনে ডিআইজির ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ন্যায় বিচারের আশ্বাস

ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারের ছেলে মনির (২২)। মা, বাবা ও বোনদের নিয়ে থাকতেন ভোলার চরফ্যাশনের চরফকিরা গ্রামের বেড়ীবাধেঁর ঢালে টিনের ছাউনি দেওয়া একটি ছোট ঘরে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে মনির চতুর্থ। ফাহিমা, রিনা, সালমা বড়, মিতু ছোট বোন। সকল বানদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। মনির বিয়ে করেননি। ১৫/২০ দিন আগে বাবা বশির সিকদার পাশের গ্রামে মেয়ে দেখেছেন। মনিরের বাবা বশির উল্লাহ একজন দিনমজুর। অসুস্থ’, বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। কাজকর্ম তেমন করতে পারেন না। মনির মাছ শিকার করে সংসার চালাতেন। সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় তিনি বাড়িতে ছিলেন। এরই মধ্যে গত সোমবার (২১ জুন) ইউপি নির্বাচল চলাকালীন গুলিতে মারা যায় মনির। স্থানীয় কয়েকজন বলেন- ভোটের দিন সকালে ইউছুফ ও ইয়াছিন দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পুরুষ কেন্দ্রে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এরপর চর ফকিরা কো-এইড প্রাথমিক বিদ্যালয় মহিলা কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থী ইয়াছিনের সমর্থকরা ভোট কেন্দ্র দখলের করতে গেলে পুলিশ গুলি ছুড়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মনির। আলাউদ্দিন নামের আরো একজন গুলিবিদ্ধ বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে রয়েছে। যদিও পুলিশ ও প্রিজাইডিং বলছেন- পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়েছেন। তাদের গুলিতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
বৃহস্পতিবার দপুরে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন বরিশাল রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি আক্তারুজ্জামান, সাথে ছিলেন ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। এসময় নিহতের বাবা বশির উল্লাহ ডিআইজিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ডিআইজি তাকে শান্তনা দেন, সমবেদনা জানান, আর্থিক সহায়তা করেন এবং ন্যায় বিচারের আশ্বাস দেন।

মনিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মনিরের মা কহিনুর বেগম পুত্র শোকে পাথর হয়ে বসে আছে। আমাদের দেখে ফ্যাল ফ্যাল করে কান্না করে অজ্ঞান হয়ে যায়। এ সময় মনিরের বাবা ও বোন দের কান্না ও আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার বাতাস। এলাকাবাসী হত্যা কারীদের ফাসির দাবিতে মিছিল করেন।
হাজারী গঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম হাওলাদার বলেন- মনির পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। মামলা হয়েছে নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে। প্রকৃত অপরাধীর শাস্তির দাবী করেন তিনি।

প্রিজাইডিং অফিসার ইমাম হোসেন বলেন- বাহিরে দুই মেম্বার প্রার্থীর প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর এক পক্ষ কেন্দ্রের কেচিগেট ভেঙ্গে ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। তবে পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি।

শশীভূষণ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, নিহত মনিরের পিতা বশির সিকদার বাদী হয়ে ইউছুফ সিকদারের ছেলে রিয়াজসহ ১০ জনকে সনাক্ত, ৫০/৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে শশীভূষণ থানায় সোমবার বিকেলে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় রিয়াজ সিকদারকে পুলিশ গ্রেফতার করে মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করা।

পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি আকতারুজ্জামান বলেন- নির্বাচনের দিন একটি কেন্দ্রে হামলার ঘটনা ঘটে, পুলিশ সরকারী জানমাল ও অফিসারদের রক্ষায় ফাঁকা গুলি করে জনতাকে চত্রভঙ্গ করে। পরবর্তীতে অধুরে একটি ঘটনা ঘটে, একজন মারা যায়। ভিক্টিমের বাবা দরিদ্র একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়েছে। আমাদের দুটি দায়িত্ব রয়েছে- সামাজিক ভাবে মানুষ হিসেবে ভিক্টিম পরিবারে পাশে দাড়ানো। প্রকৃত আসামীদের ধরে উপযুক্ত বিচার করা।
পুলিশের গুলিতে মারা গেছে এমন অভিযোগ প্রসংগে বলেন- অনকের অনেক বক্তব্য থাকতেই পারে, রাজনৈতিক বক্তব্যও থাকতে পারে। ঘটনাস্থ এসেছি সবগুলো বিষয় পুঙ্খানু, পুঙ্খানুভাবে ভাবে চেক করে দেখছি। পুলিশ অভিযুক্ত হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিব। আমাদের উদ্দেশ্য কাউকে বাচানো বা ফাঁসানে না। মুল উদ্দেশ্য হবে- প্রকৃত ঘটনা কি ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে, তা উৎঘাটন করে প্রকৃত অপরাধিকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচার করা। পুলিশ সরকারী সম্পদ রক্ষায় গুলি করতেই পারে। আইনে তাকে সে ক্ষমতা দেয়া আছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।