একাধিক ব্যবসায়ী করেন অবৈধ সুদের ব্যবসা

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ভোলায় বৃদ্ধি পাচ্ছে জুয়েলারী ব্যবসা

দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা সেক্টরের মধ্যে স্বর্ণ(গোল্ড) ব্যবসা অন্যতম। তারা সরকারকে যেমন রেভিনিউ দিচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে চলছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যখন দিনের পর দিন ব্যবসার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু সেই পরিমানে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে ভোলায় হাতে গোনা কয়েকটি জুয়েলারী দোকান ছিল। তারা সুনামের সহিত ব্যবসা করেছিল। কিন্তু ৯০ দশকের পর হু-হু করে বেড়েই চলছে জুয়েলারী ব্যবসা। ঠিক তখনই ঘটে নানা ধরনের বিপত্তি। বর্তমানে পুরো ভোলা জেলায় হাজারেরও অধিক জুয়েলারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারমধ্যে ভোলা শহর এবং চরফ্যাশন উপজেলা সর্বাধিক।
অনুসন্ধানে জানাযায়, ভোলা শহরের অলিগলি, ইলিশা, রাজাপুর, পরানগঞ্জ, ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া, শিবপুর, ঘুইংগারহাট, গজারিয়া বাজার, রাঢ়ীর হাট, বেড়ির হাট, শান্তির হাট, দৌলতখান পৌরসভা, বাংলাবাজার, নূর মিয়ার হাট, গুপ্তগঞ্জ বাজার, দলিল উদ্দিন খায়ের হাট, মিয়ার হাট,মৃদার হাট, বোরহানউদ্দিন পৌরসভা, খায়েরহাট, বোরহানগঞ্জ, রাস্তার মাথা, হাকিমুদ্দিন, মনিরাম,মৃর্জাকালু,কুঞ্জেরহাট, মজম বাজার, দরুইন বাজার, লালমোহন পৌরসভা, মঙ্গল সিকদার, চতলা, রায়চাদঁ,কর্তার হাট, গজারিয়া, চরফ্যাশন পৌরসভা, দুলার হাট, শশীভূষণ, উত্তর আইচা, দক্ষিণ আইচা, আঞ্জুর হাট, চেয়ারম্যান বাজার, তজুমদ্দিন সদর, খাসের হাট, দাসের হাট, মুন্সির হাট, চানপুর, মনপুরার হাজিরহাট বাজার, উত্তর সাকুচিয়া, দক্ষিণ সাকুচিয়াসহ ভোলার প্রায় ছোট-বড় সকল বাজারেই এসব জুয়েলারী ব্যবসা বিদ্যমান।
এসব ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেহ করেন আবার হুন্ডির (সুদ) ব্যবসা। আবার কেউ কেউ সাইনবোর্ড হাকিয়ে বড় বড় ব্যবসায়ীদের দালালি করেন। অথচ হুন্ডির ব্যবসার কোন বৈধতা নেই। একাধিক হুন্ডি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ রয়েছে। তারা সুদের টাকার জন্য মানুষের গরু-ছাগল, এমনকি ভিটে-মাটি বিক্রি করারও অভিযোগ রয়েছে। এসব ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাংলাবাজারের ব্যবসায়ীরা রয়েছেন সবার শীর্ষে। তারা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই বীরদর্পে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক জুয়েলারী ব্যবসায়ী অসহায় মানুষদের টাকা মেরে দিয়ে বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন। তার মধ্যে ভোলা শহরের নাগ জুয়েলার্স এর মালিক দ্বিপক নাগ প্রায় ৪ কোটি টাকা নিয়ে কয়েক বছর আগে ইন্ডিয়ায় পাড়ি জমান।তবে এধরণের অভিযোগ গ্রাম অঞ্চলেই বেশি,এখানে চলে নিরব কান্না। সূত্রে আরো জানা যায়, আরো কিছু ব্যবসায়ী পালিয়ে যাওয়ার পথে।
ভোলা জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তাদের হিসেব মতে ভোলায় ২৫১টি জুয়েলারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারমধ্যে ১৫০টি লাইসেন্স রয়েছে। এরা ছাড়া ভোলার বাকি ব্যবসায়ীদের মৌখিকভাবে লাইসেন্স করার জন্য একাধিকবার বলার পরও তারা লাইসেন্স করছেন না। এদিকে নতুন লাইসেন্সের জন্য সরকার ৩ হাজার টাকা এবং নবায়নের জন্য দেড় হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান, টাকা বড় কথা নয়। লাইসেন্সের জন্য ফি জমা দিয়ে অনেকদিন পর্যন্ত ঘুরতে হয়। তাই অনেকেই লাইসেন্স করছেন না।
লাইসেন্সধারী এক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের কাছে অনেক কর্মচারী কাজ শিখে এলাকায় গিয়ে দোকান দিয়ে বসেন। নিয়ম-কানুন কিছুই জানেনা। করেন আবার সুদের ব্যবসা। তখনই নানান ধরনের অভিযোগ উঠে আসে।
এ বিষয়ে ভোলা জেলা জুয়েলারী ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সম্পাদক অভিনাষ নন্দি দৈনিক ভোলার বাণীকে জানান, আমার জানামতে অনেকেই লাইসেন্স করে ব্যবসা করেন। তবে নতুনদের অনেককেই আমরা সদস্য পদ দিচ্ছি না। তাদের ব্যাপারে অনেক অভিযোগ আছে আমাদের কাছে। এরা অনেকেই চোরাই স্বর্ণের ব্যবসা করেন। এবং সুদের বিপরীতে জিনিস (স্বর্ণ) গায়েব করে ফেলেন। আমরা চাই সরকার এদের ব্যাপারে একটি পদক্ষেপ নিক।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুজিত কুমার হালদার দৈনিক ভোলার বাণীকে বলেন, করোনার কারণে মূলত আমরা অভিযান চালাচ্ছি না। তবে অচিরেই এসব অবৈধ জুয়েলারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবো।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।