বাংলাবাজার আঞ্চলিক যুবদলের উদ্যোগে আলোচনা সভা-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
ভোলায় বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা, উদ্বিগ্ন পথচারীরা
উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার সড়কে সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৭ মে বৃহস্পতিবার থেকে গত ১ জুন মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ৬ দিনে ৩ টি সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে ঝড়ে গেছে ৬টি তাজা প্রাণ। এসব দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্ততঃ আরও ৬ জন।
সূত্রে জানা গেছে, ভোলার সড়ক ও মহাসড়ক এখন অনেকটাই অনিরাপদ হয়ে ওঠছে। যেন ক্রমেই মৃত্যু ফাঁদে পরিনত হচ্ছে জনসাধারণের চলাচল এ সড়কগুলো। সড়ক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান নি পুলিশও। সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে বোরহানউদ্দিনে কর্মরত এএসআই আকলিমা বেগমকে। তিনি গত ২ মে বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুঞ্জেরহাট বাজারে সরকারি কর্তব্য পালনকালে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন। আকলিমার অকালে মৃত্যুর শোক এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন তার স্বামী এস আই জসিম উদদীন খান। ওই ঘটনায় নিহতের স্বামী বাদী হয়ে বোরহানউদ্দিন থানায় একটি মামলা অবশ্য করেছিলেন। পুলিশ ট্রাক চালককেও গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু মামলার বিষয়ে তেমন কোন খোঁজ খবর রাখছে না বাদীপক্ষ।
আরো জানা গেছে, ভোলার সড়কে অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনায় কোন মামলা না হওয়ার কারনে সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না বলেও মনে করছেন অনেকে। আর পুলিশ বলছে, দুর্ঘটনার শিকার অনেকেই থানায় মামলা করতে চান না। তাই, অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনায় মামলা হচ্ছে না। আর কিছু কিছু মামলা হলেও সঠিক বিচার পান না বাদীপক্ষ। এতে করে উদ্বিগ্ন হওয়ার পাশাপাশি অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কসহ জেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রী, পথচারী ও সাধারণ মানুষ। তাদের অনেকে সম্প্রতি ভোলার সড়কে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ভোলা-চরফ্যাশন সড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসের চালকদের দায়ী করে বলছেন, বাস চালকরা এ সড়কে বেপরোয়া ভাবে বাস চালানোর কারনে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।
আবার কেউ কেউ সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ার কারন হিসাবে এ সড়কে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল ও অটোরিকশার অদক্ষ চালকদের দায়ী করছেন। অন্যদিকে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতি ও বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ একে অপরকে দোষারোপ করছে। ভোলার সড়কে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিভিন্ন মন্তব্য লিখে পোস্ট করেছেন।
ভোলা জেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবিদুল আলম ১ জুন মঙ্গলবার রাতে তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ভোলা বাস মালিক সমিতির ড্রাইভারদের লাইসেন্স, অভিজ্ঞতা, বয়স এমন কি মাদক সেবন ডোপ টেষ্ট করানো জরুরি। যেভাবে বাস দুর্ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে দুঃখজনক ও সন্দেহ হচ্ছে।
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান ফাহাদ তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ভোলায় নিরাপদ সড়ক চাই ! আর কত রাশেদ এভাবে প্রাণ দিবে ! বাস মালিক সমিতি ও ট্রাফিক আইনের প্রত্যেক চালকের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা প্রশ্নে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবি।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, গত ২৭ মে বৃহস্পতিবার থেকে গত ১ জুন মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ৫ দিনে ৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ৬ জন। আহত হয়েছেন অন্ততঃ আরও ৬ জন। গত ২৭ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভোলা সদর উপজেলার ঘুইংগারহাট এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই অটোরিক্সার ৩ যাত্রী নিহত হয়েছেন। এরা হলেন সোহাগ (৩৫), আজিজ (৩০) ও সিরাজ (২৫)। রাতে ইউসুফ হোসেন (৫০)। তাদের বাড়ি সদর উপজেলার কমরদ্দিন ও উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে। এ ঘটনায় অন্তত আরও ৫ জন আহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় স্থানীয়রা ভোলা-চরফ্যাশন সড়ক প্রায় ২ ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। ওই দিন রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় যাত্রী ইউসুফ হোসেন (৫০) কে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সেখানে মৃত ঘোষনা করেন। তার বাড়িও ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে।
২৮ মে শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার ইলিশা তুলাতুলি এলাকার ভোলা-লক্ষ্মীপুর সড়কে ভোলা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে অটোরিকশা ও মাহিন্দ্রর মুখোমুখি সংর্ঘষে মোঃ নোমান (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরো তিন অটোরিকশা যাত্রী আহত হয়েছেন। ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সর্বশেষ ১ জুন মঙ্গলবার রাত ৯টায় ভোলার দৌলতখান উপজেলার বাংলাবাজার দৌলতখান সড়কের মৃধারহাট সংলগ্ন বাজারে যাত্রীবাহী বাস ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী মোঃ রাশেদ (২২) নিহত হয়েছেন। নিহত রাশেদ দলিল উদ্দিন খায়েরহাটের মোঃ নুরুননবী মিয়ার ছেলে। সে একজন দিনমজুর ছিল। দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলার রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
এর জন্য অপরিপক্ষ বাস চালকদের দায়ী করে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ভোলা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বির উল্যাহ চৌধুরী বলেন, চালকদের কোন প্রশিক্ষণ না থাকার কারণেই ভোলার সড়কে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।
সম্প্রতি ভোলায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভোলা জেলা বোরাক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ভোলার বাস ড্রাইভারদের বেপরোয়া গাড়ি ড্রাইভিংয়ে একের পর এক তাজা প্রাণ চলে যাচ্ছে। দেখার মত কেউ নেই। তিনি প্রশ্ন করে বলেন প্রশাসন কেন চুপচাপ ?
ভোলায় সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ার কারণ হিসাবে বেরাকের চালকদের দায়ী করে জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, ভোলা শহরে বিগত ১৫ বছরেও সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ৪ জন মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বোরাক ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের অদক্ষতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।
এ ব্যাপারে ভোলার পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোঃ আবুল কালাম আজাদ ভোলার বাণী’কে বলেন, এককভাবে কোন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর কারণে ভোলায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে না। কখনো সরু রাস্তার কারণে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। আবার যে সব গাড়ি সড়কে চলার কথা নয়, সে সব গাড়িও সড়কে কিছু কিছু চলছে। এর ফলেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। চালকদের অদক্ষতার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটে। আবার অনেক পুরনো গাড়ি সড়কে চলার কারণেও অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি আরও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সভায় করনীয় সম্পর্কে বলা হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হলে সবাইকে আইন মানতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। নিরাপদ সড়কের জন্য সবাইকে সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।