ভোলায় কিশোর-কিশোরীদের সমস্যার কথা নিয়ে ডায়ালগ অনুষ্ঠিত

ভোলায় কিশোর-কিশোরীদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন ইন্টার জেনারেশনাল ডায়ালগ। সোমবার (৩১ মে) সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা মিলনায়তনে ‘প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা ও বাল্যবিবাবহ প্রতিরোধ বিষয়ক’ ডায়ালগ-২১ অনুষ্ঠিত হয়। ইয়েস বাংলাদেশ এর আয়েজনে ডায়লগে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা (পরিবার পরিকল্পনা) কর্মকর্তা ডাঃ আফরোজা বেগম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডাঃ পারভিন আক্তার, ভোলা সদর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা চামেলী বেগম, ভোলা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শারমিন জাহান শ্যামলী, ব্যাংকের হাট কো-অপারেটিভ কলেজের প্রভাষক ইভান তালুকদার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, চ্যানেল-২৪ এর জেলা প্রতিনিধি আদিল হোসেন তপু। এসময় কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, রিমা আক্তার শিমু, গোপাল চন্দ্র দে, হাজেরা বেগম, সাবরিনা হক, সিয়াম, এনজিও প্রতিনিধি তাসলিমা আক্তার প্রমুখ।
ইয়েস বিডির কিশোরী প্রতিনিধি সাবরিনা হক বলেন, করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিশোররা আক্রান্ত হচ্ছে ভিডিও গেমসে। কিশোরীদের বাল্যবিবাহ দিচ্ছে অভিভাবকরা। যার ফলে মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্যে সমস্যা হচ্ছে। স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলে-মেয়েরা আগের মতো কৈশর বান্ধব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাচ্ছে না। ফলে নানা ধরনের সমস্যা নিয়ে কিশোর-কিশোরীরা বেড়ে উঠছে। অন্যদিকে বাজারে স্যানেটারী ন্যাপকিনের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা নি¤œমানের কাপড় কিংবা প্যাড ব্যবহার করছে। এসব ব্যবহার করার তাদের জ্বরায়ূ ক্যান্সার সহ স্বাস্থ্য ঝূঁকি বাড়ছে। তাই সরকারকে বিনামূল্যে স্যানেটারী ন্যাপকিন প্যাড সরবরাহের কথা তুলে ধরেন। এছাড়াও প্রজনন স্বাস্থ্য বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে অভিভাবক ও স্কুল পর্যায়ে আরও বেশি বেশি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করার আহ্বান জানান তিনি।
ইয়েস বিডির আরেক সদস্য গোপাল চন্দ্র বলেন, মেয়েদের নানা সমস্যার পাশাপাশি ছেলেরাও অনেক সমস্যায় পড়েন। কিন্তু তারা সমস্যার কথাগুলো কাউকে বলতে না পেরে ভুল পথে ধাপিত হয়। তাই কিশোরদেরকে প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর আরও বেশি বেশি কাউন্সিলিং করতে হবে। এর মাধ্যমে একজন কিশোর যেরকম তার প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানবে অন্যদিকে ভবিষ্যৎ জীবন সুরক্ষিত হবে।
কিশোরী হাজেরা বেগম বলেন, আমরা যখন কিশোরীরা বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যাই তখন কিশোরীদের গোপনীয়তা রক্ষ্মা না করে সাধারণ রোগীদের সাথে আমাদের পরামর্শ দেয়া হয়। ফলে স্থানীয়রা এ বিষয়টি নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে। সেবা নেওয়ার জন্য কিশোরীদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ থাকলেও মানুষের এসব কথার ভয়ে তারা সেবা নিতে অনিহা প্রকাশ করে। অন্যদিকে কৈশরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি অনেক সময় তালাবদ্ধ থাকে। কিশোরীরা গেলে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করার ঘটনাও ঘটে। আয়রণ ট্যাবলেটের জন্য ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা নেওয়া হয়। তাই কিশোরীরা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে যাচ্ছে না। কিশোর-কিশোরীদের জন্য এমন উদ্যোগকে আরো প্রচারনা ও সেবার মান নিশ্চিত করা গেলে কৈশরবান্ধব স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রেগুলোতে সেবার মান বৃদ্ধি পাবে।
ভোলা সদর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা চামেলী বেগম বলেন, আমার সরকারি ভাবে কিশোর-কিশোরী ক্লাব গঠন করে তাদের মাঝে ‘প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা ও বাল্যবিবাবহ প্রতিরোধ সচেতনতায় সভা করে থাকি। এছাড়াও স্কুল গুলোতে কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ওয়াশ ব্লক করে দেয়া হয়েছে। তাতে করে মাসিক কালীন সময়ে কোন মেয়ে যেন স্কুল থেকে ঝড়ে না পড়ে। এছাড়ও স্যানেটারী ন্যাপকিন সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা চাই প্রতিটি কিশোর-কিশোরী নিরাপধে বেড়ে উঠুক।
ভোলা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শারমিন জাহান শ্যামলী বলেন, স্কুলে প্রজনন স্বাস্থ্য সহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। যখন কাসিক কালীন কিংবা প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করা হয় তখন কিশোর-কিশোরীরা লজ্জা বোধ করেন। ফলে এই ধরণের আলোচনা শুনতে তারা অবস্ত নয়। তখন অন লাইনে প্লাটফর্মে গিয়ে তখন ভুল পথে পা বাড়ায়। তাই পাঠ্য বইয়ের বিষয় গুলো প্রত্যেক কিশোর-কিশোরীর জানা উচিত বলে মনে করেন।
সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা (পরিবার পরিকল্পনা) কর্মকর্তা ডাঃ আফরোজা বেগম বলেন, বর্তমান সরকার কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করে প্রান্তিক এলাকার স্বাস্থ্যসেবাগুলোতে কৈশরবান্ধব স্বাস্থ্য সেবা চালু করেছে। এখান থেকে কিশোর-কিশোরীরা সব ধরনের সেবা পেয়ে থাকেন। তারা বিনামূল্যে এসব সেবা কেন্দ্র থেকে আয়রন ট্যাবলেট, স্যানেটারী ন্যাপকিন সেবা পাচ্ছেন। যদি কোথাও কিশোর-কিশোরীদের সাথে অসৎ আচরণ ও অনিয়ম করা হয় অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিশোর-কিশোরীরা যাতে এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সঠিক চিকিৎসা সেবা পেতে পারে সে জন্য আগামীতে এগুলোর মান বৃদ্ধি করা হবে। আমরা চাই কিশোর-কিশোরীরা এসে এই সেবা কেন্দ্র গুলোতে এসে সেবা নেক। তাকলে আমাদের প্রজন্ম ভালো থাকবে।
এই ডায়লগের মাধ্যমে মেয়ে ও যুব মেয়েদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, যাতে করে তারা সমাজে জেন্ডার ভিত্তিক যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে নিজেরা পরিবর্তনের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারেন। এর পাশাপাশি মেয়ে শিশুদের সমাজে যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করবে। সভায় মেডিকেলঅফিসার (এমসিএইচ-এফপি), সরকারী/বেসরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক, মাদ্রাসার শিক্ষক, কলেজের শিক্ষক, সংবাদকর্মী, অভিভাবক, ধর্মীয় নেতা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, জেলা এনসিটিএফ সদস্য, ওয়াইএফসি, এনজিও এর প্রতিনিধি বৃন্দ এবং ইয়েস বাংলাদেশ এর সদস্য বৃন্দ ইন্টার জেনেরেশন ডায়ালগ এ অংশগ্রহণ করেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

You cannot copy content of this page