কালীগঞ্জে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ সংক্রান্ত ডরপ’র ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস : ভোলায় পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ল-ভ- হয়ে যাওয়া উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলায় জোয়ারের পানি কমে গেলেও মানুষের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস চলে গেলও বিধ্বস্ত উপকূলীয় এ জেলার বেশিরভাগ এলাকায় রেখে গেছে ঝড়ের ক্ষতচিহ্ন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারো পরিবার। ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গবাদিপশু হারিয়ে অনেকে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় তারা এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেন নি। তাদের চোখে-মুখে যেন শুধুই দুশ্চিন্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী উত্তাল হয়ে ওঠে। বিক্ষুদ্ধ নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার অন্তত ৬ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এর মধ্যে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাগর তীরবর্তী উপজেলা চরফ্যাশনের ঢালচর, কুকরি-মুকরি ও বিচ্ছিন্ন-দুর্গম দ্বীপ উপজেলা মনপুরা।
ঝড়ের প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে ওই সব এলাকায় পানিবন্দি থাকা বহু মানুষের ঘরে ঠিকমতো রান্নাও হচ্ছে না। জীবন বাঁচাতে অনেকে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিলেও তারা হারিছেন সহায় সম্বল।
চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচরের বাসিন্দা আবদুর রহমান জানান, ঝড়ে এ চরের অধিকাংশ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে চরের অন্ততঃ ৫০টি ঘরবাড়ি। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ আর দোকানের মালামাল। সব ঘরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশিরভাগ মাছের আড়ৎ ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এ চরের মানুষ এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
চর শাহজালাল এলাকার বাসিন্দা নাছির বলেন, চরের শতাধিক ঘরের ক্ষতি হয়েছে। কারো ঘরে রান্না করার মতো পরিস্থিতি নেই। ঝড়ের সময় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র, উঁচু স্থানে গিয়ে জীবন রক্ষা করেছেন। কিন্তু এখন একরকম দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ওই উপজেলার চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বিকেলে বলেন, ঝড়ের ফলে সাগরের ব্যাপক লবনাক্ত পানি ঢুকে কুকরি-মুকরি, চর পাতিলা, কচুয়াখালীর চরসহ প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। ফলে হাজার হাজার মানুষ পানির মধ্যে রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। তিনি আরও বলেন, সাগরের ব্যাপক লবনাক্ত ও দুষিত পানি ঢোকার কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। জোয়ারের পানি কমলেও দুষিত পানিতে এখানকার পুকুর ও ঘেরের বাকি মাছগুলোও মরে ভেসে উঠছে। সেই দুষিত পানি পান করে বহু গবাদিপশু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে অনেক গরু-মহিষ মারা গেছে।
জলচ্ছাসে যে সব মানুষের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে তাদের ঘরে এখনো রান্না হয়নি। পার্শ্ববর্তী ঘর থেকে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তরা এখনো সরকারি তেমন কোন সহায়তা পায়নি। অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এ চরের মানুষ।
মনপুরা উপজেলার চেয়ারম্যান সেলিনা চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে মনপুরা উপজেলার লঞ্চঘাট সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। এছাড়া রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখানে কোন বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি উঠে আবার নেমে যায়। কিন্তু পানি কমে গেলেও মানুষের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। বিশেষ করে কলাতলী এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় সেখানকার মানুষ বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর তা-বে যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে তাদের দুর্ভোগ কমে যেতে অনেকটা সময় লাগবে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবের ফলে চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, কুকরি-মুকরি, চরপাতিলা, চরজ্ঞান, সোনার চর, কুলাগাজীর তালুক, চর যতিন, চর শাহজালাল, চর নিজাম, মনপুরা উপজেলার কলাতলীর চরসহ অন্তত ৩০টি চরে চার থেকে পাঁচ ফুট জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। ওইসব এলাকার মানুষ এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
এ ছাড়া দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ঘোসেরহাট এলাকার বাসিন্দা মোঃ বশির আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি সব ভেসে গেছে। ঘর ভেঙে গেছে। ঘরে রান্না হয়না কয়েক দিন ধরে। শুধু চিড়ামুড়ি ও গুড়সহ শুকনো খাবার খেয়ে বেঁচে আছি। এবং কষ্টে আছি। সরকারি বেসরকারি কো সাহায্য সহযোগিতা পাননি বলেও জানান মোঃ বশির আহমেদ। প্রায় একই দুর্ভোগের কথা জানিয়ে একই গ্রামের শেফালী বেগম বলেন, আমাদের ঘরও বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। ঘরে রান্না করতে পারি না। তাই, এখন পর্যন্ত খাবার জোটে না।
জানা গেছে, ঝড়ে জেলায় ২৫০টি ঘর বিধ্বস্ত হয়ে নিখোঁজ রয়েছে ১২০০ গরু-মহিষ। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।
এ ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সাথে আমি সার্বক্ষনিক যোগাযোগ করছি। ঘূর্ণিঝড়ের আগেই আমরা তাদেরকে ১ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বিশেষ করে যারা পানিবন্দি অবস্থায় আছে তাদের মধ্যে দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে তিন হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ এসেছে। মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলাসহ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। আমাদের কাছে এক কোটি ৯২ লাখ টাকার মজুদ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হবে।