সর্বশেষঃ

পটুয়াখালীতে মুমূর্ষু বাবার টিপসই নিয়ে সৎ মাকে তালাকের প্রতারণা

পটুয়াখালীর গলাচিপায় একটি নোটিশ ফরমে গোপনে মুমূর্ষু বাবার টিপসই নিয়ে সৎ মাকে ভুয়া তালাক দেখিয়ে সৎ ভাই আ. রাজ্জাক মোল্লা (৬৫)-কে তার মায়ের অংশের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার হীণ অপচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে সৎ ভাই সোবাহান মোল্লা (৭০), মজিবর মোল্লা (৬৩) ও খলিল মোল্লার (৫৫) বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের গ্রামর্দ্দন গ্রামে।আ.রাজ্জাক মোল্লা ও তার সৎ ভাইয়েরা ওই গ্রামের মৃত আ. রহমান মোল্লার ছেলে।
এ ঘটনায় আ. রাজ্জাক মোল্লা তার সৎ ভাইদের বিরুদ্ধে গত ২১ এপ্রিল গলাচিপা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পটুয়াখালী পুলিশ ব্যুরো ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)-কে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) পটুয়াখালী পিবিআই এর তদন্ত কর্মকর্তাএসআই সুজন ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিকভাবে তদন্ত করেন। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা মামলার স্বাক্ষী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। স্বাক্ষী ও স্থানীয়দের স্বাক্ষ্য গ্রহণে আ.রাজ্জাক মোল্লার সৎ ভাই সোবাহান মোল্লা, মজিবর মোল্লা ও খলিল মোল্লার ষড়যন্ত্র ও জালজালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।
সরেজমিন, ঘটনা ও মামলার বিবরণে জানা যায়, গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের গ্রামর্দ্দন গ্রামের মৃত আ. রহমান মোল্লার চারজন স্ত্রী ছিলেন। প্রথম ও চতুর্থ স্ত্রী নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা বেগমের গর্ভে অভিযুক্ত সোবাহান মোল্লা, মজিবর মোল্লা ও খলিল মোল্লার জন্ম হয়। আর তৃতীয় স্ত্রী আনোয়ারা চানভানুর গর্ভে আ. রাজ্জাক মোল্লার জন্ম হয়। আ. রহমান মোল্লা জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা বেগমের মৃত্যু হওয়ায় ইসলামী ফরাজ অনুযায়ী আয়েশা বেগমেরসন্তান সোবাহান মোল্লা, মজিবর মোল্লা ও খলিল মোল্লা তাদের মায়ের অংশের জমি পায় নাই।
অপরদিকে আ. রাজ্জাক মোল্লার মাতা আনোয়ারা চানভানুর মৃত্যু হয় স্বামী আ. রহমান মোল্লার মৃত্যুর প্রায় আট মাস পরে। সে হিসেবে আ. রাজ্জাক মোল্লা তার মায়ের অংশের জমি পাবে। আ. রহমান মোল্লা যখন শ্বাস-কাশিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুশয্যায় ঠিক তখনই সোবাহান মোল্লা, মজিবর মোল্লা ও খলিল মোল্লা সৎ ভাই আ. রাজ্জাক মোল্লাকে তার মায়ের অংশের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করে। ওই সময় গোপনে আ. রাজ্জাক মোল্লার মাতা আনোয়ারা চানভানুকে ০১-০৫-১৯৯৭ তারিখে তালাক দেখিয়ে একটি নোটিশ ফরমে মুমূর্ষু বাবা আ. রহমান মোল্লার টিপসই নেয় সৎ ভাইয়েরা। ১৯৯৭ সালের ১৮ অক্টোবর আ. রহমান মোল্লার মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুর পরে রাজ্জাক মোল্লা তার মায়ের অংশের জমি ভোগ করতে গেলে এতে বাধা প্রদান করেন তার সৎ ভাইয়েরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৎ ভাই সোবাহান মোল্লা ২০১৫ সালে পটুয়াখালী আইন শৃংখলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আদালতে আ. রাজ্জাক মোল্লার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করেন। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে গলাচিপা থানার এসআই মো. কবির হোসেনের ০৫-০৯-২০১৫ তারিখের স্বাক্ষরিত তদন্ত প্রতিবেদনে। এর পরেও সৎ ভাইয়েরা নানা ষড়যন্ত্র করে এবং মামলা ও হামলার ভয়ভীতি দেখায় রাজ্জাক মোল্লাকে। সৎ ভাইদের অত্যাচারে এক সময় বাড়ি ছেড়ে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে চট্টগ্রামের একটি স্টীলের কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন রাজ্জাক মোল্লা।
বর্তমানে রাজ্জাক মোল্লা চট্টগ্রামে স্টীলের কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন আর তার স্ত্রী ও সন্তানরা গ্রামের পৈত্রিক ভিটায় থাকেন। এদিকে সৎ ভাইয়েরা রাজ্জাক মোল্লার মাকে তার বাবা তালাকদিয়েছে এবং তার মায়ের অংশের জমি পাবেনা বলে কথা রটায়। খবর পেয়ে এলাকায় এসে রাজ্জাক মোল্লা সৎ ভাইদের বিরুদ্ধে গত ২১ এপ্রিল গলাচিপা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। উক্ত মামলার তদন্তে পটুয়াখালী পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুজন বৃহস্পতিবার (২৭ মে) ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেন।
আ. রাজ্জাক মোল্লা বলেন, ‘আমার বাবা মারা যাওয়ার আগের দিন রাইতে জবান বন্ধ হইয়া গেলে সৎ ভাই সোবাহান মোল্লা, মজিবর মোল্লা ও খলিল মোল্লা একটি নোটিশ ফরমে আমার বাবার টিপসই নিয়া আমার মাকে ভুয়া তালাক দেখায়। আমাকে মায়ের সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত করার জন্যই সৎ ভাইয়েরা এই ষড়যন্ত্র করেছে। আমি প্রশাসনের কাছে ওদের বিচার চাই।
অভিযুক্ত মজিবর মোল্লা বলেন, ‘আমার বাবা আমার সৎ মা আনোয়ারা চানভানুকে পানপট্টি ইউনিয়ন পরিষদে বসে তালাক দেয়। আমার কাছে তালাকনামা আছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।