শতাব্দীর মহানায়ক অনন্য মুজিব : পর্ব-০৩

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

 (গত পর্বের পর) : সারা দুনিয়া জানে এদেশে ১৯৭১ সালে এ মুক্তিযুদ্ধ হয়। ৩০ লাখ বুকের তাজা রক্ত আর দু’লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় এদেশে একটি গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলার সময় মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বানিয়ে বিবৃতি প্রচার করে আসছে। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ৭৫ এর পরবর্তী সামরিক জান্তারা রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে নিষিদ্ধ করেছে। অবাক হওয়ার বিষয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম জেনারেল জিয়া গর্বের সাথে উচ্চারণ করেছে ৭৫ এর আগষ্টের আগ পর্যন্ত। জেনারেল জিয়া একটি জাতির জন্ম নিবন্ধে লিখেছিলেন, ১৯৭২ এর স্বাধীনতা দিবসে তখন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় জিয়াউর রহমান যে নিবন্ধটি লিখেন তাতে পরিস্কার ভাষায় লিখেছেন– তারপর এল মার্চ। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপক আহ্বানে সারাদেশে শুরু হল অসহযোগ আন্দোলন। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা আমাদের কাছে এক গ্রীন সিগন্যালের মত মনে হল।
মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ওই নিবন্ধের আরেক জায়গায় লিখেছেন একাডেমীর ক্লাশগুলোতে সব সময় শেখানো হত আওয়ামীলীগ হল ভারতের দালাল। পাকিস্তানের সংহতি নষ্ট করতে আওয়ামীলী সচেষ্ট। এমনকি উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবেই ক্যাডেটদের শেখানো হত, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হল ওদের রাষ্ট্রের বড় শত্রু। জিয়াউর রহমান ৭৫ সালে একটি জাতির জন্ম শীর্ষক নিবন্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন। শুধু তাই নয়, তার জীবদ্দশায় তিনি নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবী করেননি। মজার ঘটনা হলো বিএনপি’র জনক নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে পরিচয় দেয়ার সাহস না পেলেও জিয়াবাদীরা কয়েক বছর যাবত জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বানাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু কেন তা বলছে বা করছে তার দুটো কারণ থাকতে পারে, মিথ্যা বলা এদের জাতীয় চরিত্র।
কোন কালে, কোন দেশে, কোন রাষ্ট্রে নিজের দেশের রাষ্ট্রভাষার জন্য কোন ছেলেরা এরকম প্রাণ বলি দিয়েছে কিনা আমরা আজও শুনিনি। অথচ আমার সোনার বাংলার ছেলেরা, ১৯৫২ সালে নিজের দেশের মাতৃভাষা বাংলা ভাষার জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়েছে। আমার অহংকারের বাংলাদেশ তার কথা মনে হলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে খাদ্য নেই, বস্ত্র নেই, ঔষধ নেই, পথ্য নেই। রোগের চিকিৎসা নেই। দেশে হা-হা-কার। হাজার হাজার লোক না খেয়ে মরা যাচ্ছে। আমেরিকার সাহায্যও আর এসে পৌছাল না। আমেরিকার বিশ্বাসঘাতকতা বাংলাদেশকে এক চরম ছলনার প্রয়াসে ফেলল। ভেঙ্গে পড়লেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু।
তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট। তার দেশের লোক খেতে পচ্ছে না। কঙ্কালসার হয়ে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে, উলঙ্গ হয়ে যেখানে সেখানে পড়ে থাকছে উদ্দেশ্যকারীরা, ষড়যন্ত্রকারীরা দেশটাকে লুটে-পুটে খাচ্ছে। তিনি চিন্তায় ক্লান্তিতে-শ্রান্তিতে রাত্রি যাপন করেননি। বাংলার পথে-প্রান্তরে, সাধারণ লোকের দুয়ারে তিনি দেশের সুখ, শান্তির জন্য সোনার বাংলার পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাংলার সুখ, বাংলার শান্তি, তার জীবনের একমাত্র কাম্য ছিল। (চলবে————)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।