ভোলার বাজারে কেজি দরে বেল বিক্রি।। প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা

দেশে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফল বেলের চাহিদা সারাবছরই রয়েছে। বিশেষ করে বয়স্কদের কাছে বেলের কদর সব থেকে বেশি। ভিটামিন সি গ্রীষ্মকালীন বহু রোগবালাই দূরে রাখে। তাই গ্রীষ্মকালেই বেলের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। আর রমজানে ইফতারে বেলের শরবতে রোজাদারদের রয়েছে আলাদা এক তৃপ্তি।

সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে এক গ্লাস বেলের শরবত দূর করে দেয় রোজাদারের সকল ক্লান্তি।

একদিকে সারাদেশে প্রচণ্ড দাবদাহ, অন্যদিকে চলমান পবিত্র রমজান মাস। আর এ সময়ে বেলের চাহিদাটাকে পুঁজি করে একটা বিশেষ সিন্ডিকেটে বেশি মুনাফার আশায় বেছে নিয়েছে অসাধু পন্থা।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে তরমুজ ও কাঁঠাল বিক্রি হতে দেখা গেছে কেজি দরে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবার ভোলায় কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বেলও। কৃষক ও পাইকারি পর্যায় থেকে বস্তা বা পিস দরে কিনে তা কেজি দরে বিক্রি করায় ঠকছেন সাধারণ ক্রেতারা। শনিবার (১লা মে) সরেজমিন ভোলার বাজারে ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে কেজি দরে বেল বিক্রি করতে গিয়ে অনেক খুচরা বিক্রেতাও সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তাদের মতে কেজি দরে বেল বিক্রি করাতে খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতা ও সাধারণ ক্রেতারাই ঠকছেন। আর লাভবান হচ্ছে কেবল মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পিস হিসেবেই বিক্রি হতো বেল। কিন্তু এখন তা কেজি দরে বিক্রি হয়। আর ক্রেতারা বলছেন, সিন্ডিকেটের কারণে নিরুপায় হয়ে কেজি দরে কিনতে হচ্ছে পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটি। এতে দাম বেশি পড়লেও নিরুপায় তারা।

ভোলা শহরের রাস্তার পাশের ফল বিক্রেতা মুন্না জানান, কখনো বেল কেজি দরে বিক্রি হতে পারে তা সে নিজেও কোনো দিন ভাবতে পারেননি। অথচ এ বছর রমজানেই তরমুজ আর কাঁঠালের দেখাদেখি বেলও কেজি দরে বিক্রি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এখন বেল পিস হিসেবে বিক্রি হয় না। এখন বেল বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। আমিও তো সারাজীবন দেখেছি- বেল পিস হিসেবে বিক্রি হয়। কিন্তু এখন তা আর হয় না। এখন কেজি দরেই বেল বিক্রি হচ্ছে।

আরেক বেল ব্যবসায়ী মোঃ মোস্তফা বলেন, আমরা ঢাকা থেকে বস্তা হিসেবে বেল ক্রয় করি। কখনো কখনো বস্তার ভিতর অনেক বেল পঁচা থাকে আবার কিছু বেল ভেঙে যায় এতে আমাদের লোকসান গুনতে হয়। তাই আমাদের ব্যবসা পুষিয়ে নিতে কেজি দরেই বেল বিক্রি করতে হয়। তাহলে আগে পিস হিসেবে বিক্রি করে কিভাবে পোষাতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবাই এখন কেজি দরেই বিক্রি করে তাই আমিও কেজি দরে বিক্রি করি। কিন্তু এতে কি সাধারণ ক্রতারা প্রতারিত হচ্ছে না? এমন প্রশ্ন করলে তিনি প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান।

একই বাজার থেকে তিনটি বেল কেজি দরে ৮৫ টাকায় কেনা মোহাম্মদ আলী বলেন, এই তিনটা বেল সর্বোচ্চ ৪৫-৫০ টাকায় পিস হিসেবে কিনতে পারতাম। কিন্তু এখন তা দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সিএবি)-এর ভোলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান হোসেন এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে ভোলার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, বেল সাধারণত পিস হিসেবেই বিক্রি হয়। এই এলাকার মানুষ পিস হিসেবেই বেল কিনতে অভ্যস্ত। সম্প্রতি ভোলায় বেল কেজি দরে বিক্রি শুরু হয়েছে। এর ফলে ক্রেতারা ঠকছেন। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে আমরা ম্যাজিষ্ট্রেটসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযানে গিয়েছি। আমি আজ আবারও বাজারে গিয়ে এব্যাপারে কাউন্সিলিং করবো। তাতেও যদি কেজি দরে বেল বিক্রি বন্ধ না হয় তাহলে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ বিষয়ে ভোলার জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী ভোলার বাণী’কে বলেন, আমি জানতাম বেল পিস হিসেবেই বিক্রি হয় কিন্তু কেজি দরে বিক্রির কথা এই প্রথম জানলাম। তবে এই বিষয়ে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।