সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৯৩

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন) :

(গত পর্বের পর) : আমার ছোট বেলা : আজ যেন কেন বার বার আমার ছোট বেলার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে বছরে দুবার করে মা আমাদের নিয়ে মামা বাড়ী ও আমার দাদুর বাড়ী বেড়াতে যেতেন। তাও মাত্র ৭ দিনের জন্য। শীতের সময় যেতাম পিঠা পুরী, মুড়ি, খই খাওয়ার জন্য। আর বৈশাখে জ্যৈষ্ঠে যেতাম আজ, জাম, কাঁঠাল, লিচু, বেত ফল খাবার জন্য। সেই ক’দিন যে কত আনন্দ, কত খুশীর মেলা বসত। আমার ছোট খালা জরিনা আমাদের কত আরব্য উপন্যাসের হাজার রাতের অদ্ভুত অদ্ভুত রাজ-রাজার গল্প শুনাতেন। কত ভূত, পেতিœ ও রাক্ষস-খোক্ষসের গল্প বলতেন।
আমার মায়ের ৭ বোন ১ ভাই ছিল। আমরা নানা বাড়ী গেলে আমার খালাম্মারা এসে ৭ বোন মিলিত হত এক আনন্দঘন, গাল-গল্পের মেলার মত। আমার নানার মস্ত বড় বড় দিঘী ছিল। তাতে বড় বড় রুই, কাতলা, কোরাল মাছ ছিল। আমাদের জন্য সেই দিঘী থেকে নানা ভাই জেলেদের ডেকে বড় বড় জাল ফেলতেন। বড় বড় মাছ ধরত, দিঘীর পাড় কত উঁচু তাতে তাল গাছ সারি সারি লাগানো ছিল। আমি দিঘির পাড়ে বসে আকাশ-পাতাল ভাবতাম সান বাধান ঘাটে। নানীমা গল্প করতেন, চাঁদনী রাতে। নানীমা খালাম্মা ওনারা ¯œান করতে গেলে দেখতেন পরীরা গোসল করতে এসেছে, সুন্দর ঝক-ঝকে ডানা লাগান। নানীমা, খালাম্মাদের দেখলেই ওরা উড়ে চলে যেত। আমরা নানা বাড়ী গেলে, আমার মায়েরা ৭ বোন একত্র হলেই এসব গল্পের ঝড় তুলত। অনেক অনেক ভালো খাওয়া-দাওয়া, পোলাও-কোরমা, চপ-কাটলেটের আয়োজন করতে করতে অনেক রাত হয়ে যেত। তখন আমার ছোট খালা, বড় খালা, মেঝ খালা রাজপুত্র-রাজকন্যার গল্পের অবতারণা করতেন। আমার সেজ খালা অনেক ভাল ভাল আরব্য উপন্যাসের ভূত-পেতিœর গল্প বলে আমাদের ঘুম থেকে জাগিয়ে রাখতেন।
এত ভাল গল্প এখনও আমি কোন উপন্যাসে খুঁজে পাই নাই। আমরা দু’বোন, ৩ ভাই। আমাদের দু’বোনকে বাবা ভাইদের চেয়ে বেশি ভালবাসতেন। সুন্দর হয়ে চলাফেরা করা, ভোরে ঘুম থেকে উঠে বেড়াতে যাওয়া, বিকালে খেলা-ধুলা করা, মিথ্যা কথা না বলা, পরের উপকার করা এসবের শিক্ষা বাবার কাছ থেকেই গ্রহণ করেছি। পড়াশুনায় আমি খুব ভাল ছিলাম। আমার বোন আশু পরীক্ষায় ফেল করে নীচের ক্লাসেই পড়ে থাকল। আমি ক্লাসে ফার্ষ্ট হতাম। ক্লাস সিক্স পাশ করলাম, ভোলা ব্লাডি গার্লস স্কুলে আর উপরের ক্লাস ছিল না। আমার বান্ধবিরা (হিন্দু) বাড়ীতে পড়াশুনা করে ম্যাট্রিক পাশ করল। আমার মা তখন খুব অসুস্থ্য হয়ে বিছানা নিলেন। বাবা বললেন, তোর মাকে দেখাশুনা কর। তখনকার দিনের ভোলার এসডিও বাবাকে বললেন, পড়াশুনায়, গান-বাজনায়, বক্তৃতায় ভাল মেয়েটিকে পড়াশুনা করান। ওকে বাড়ীতে বসিয়ে রেখে ওর মেধাকে নষ্ট করে ফেলবেন না।

(চলবে————)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।