কাজ শেষ না করেই চলে যাওয়ার পায়তারা

নাব্যতা সঙ্কটে ভোলার খাল ॥ ড্রেজিং এখন সময়ের দাবি

ভোলার একমাত্র অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি ভোলার খাল দীর্ঘদিন ধরে নাব্যতা সংকটে ভুগছে। স্থানীয় লঞ্চ ব্যবসায়ী এবং ভোলার সকল ব্যবাসয়ীরা দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজিং এর দাবী করে আসছিল, তাতে কোন কাজ হয়নি। অথচ ভোলা কে নদী বন্দর ঘোষণা করা হয়েছে। ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে বিআইডব্লিউটিএ-কে ভোলার খাল খননের সুপারিশ করে। বিআইডব্লিউটিএ গত বছর ৬ কিলোমিটার ড্রেজিং করার অনুমতি প্রদান করেন। যা গত নভেম্বরে শুরু করে ৪ কিলোমিটার শেষ করেন। কিন্তু ২ কিলোমিটার শেষ করতে গিয়ে কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়েন। ড্রেজিং এর ফলে নদী ভেঙ্গে যাচ্ছে এমন অজুহাত দেখিয়ে তারা জেলা প্রশাসনকে ভুল বুজালে জেলা প্রশাসন পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ড্রেজিং এর কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন।
এদিকে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে দেখেন, ড্রেজিং অতিব জরুরী। কিন্তু ড্রেজিং এর ফলে নদী ভেঙ্গে যাচ্ছে না। গত১৯ এপ্রিল জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ভোলা সদর উপজেলা প্রশাসনসহ কয়েকটি সংস্থা মিলে এক বৈঠকে বিআইডব্লিউটিএ কে ড্রেজিং করার অনুমতি প্রদান করেন। এরপরও কেন ড্রেজিং হচ্ছে না সেটাই এখন জনমনে প্রশ্ন ? না কি সেই অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের কালো থাবায় ড্রেজিং ঘুরপাক খাচ্ছে।
ভোলা ঢাকা লঞ্চ পরিবহন এমভি কর্ণফুলী-১০ এর ইনচার্জ শহিদ মাস্টার দৈনিক ভোলার বাণী’কে বলেন, আমরা কত কষ্ট করে এই খাল দিয়ে লঞ্চ চালাই তা আপনাদেরকে বঝুাতে পারবো না। একবার আটকিয়ে গেলে ১০-১২ দিন লাগে তা উদ্ধার করতে। এক সময় এ খাল দিয়ে আসতে লাগতো ৩০ মিনিট। নাব্যতার কারণে এখন ৩-৪ ঘণ্টা লাগে। তাতে যেমন লঞ্চের ক্ষতি, তেমনি সময় ও অর্থেরও ক্ষতি। আমরা চাই অতি দ্রুত ভোলার খাল ড্রেজিং করে লঞ্চ চলাচলের উপযোগী করা হোক।
এমভি ভোলা লঞ্চের ইন্সপেক্টর ইকবাল হোসেন দৈনিক ভোলার বাণী’কে বলেন, এই নাব্যতার কারণে আমাদের আরেক জাহাজ এমভি ক্রিষ্টাল দীর্ঘ ১৫ দিন আটকিয়ে ছিল। আমাদের সাহেবরা ড্রেজিং করার ব্যাপারে এত করে বলেন তারপরও কাজ হয় না। আমি চাই এই খাল খনন হোক। আমরা যাতে অল্প সময়ে ঢাকা-ভোলা আসা-যাওয়া করি। তাতে আমাদের লঞ্চও ভাল থাকবে, সময়ও কম ব্যয় হবে।
ভোলা মুদি, মনোহারি মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ বাবুল মিয়া দৈনিক ভোলার বাণী’কে বলেন, ভোলার খাল ভোলার অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি। নাব্যতার কারণে আমাদের মালের জাহাজ আটকিয়ে পরে, তাতে অনেক সময় অপচয় হয়, মালের দাম বেড়ে গিয়ে জনসাধারণের উপর প্রভাব পরে। তাই আমরা চাই অতি দ্রুত খালটাকে ড্রেজিং করে মালামাল পরিবহনের উপযোগি করা হউক।
বিআইডব্লিউটিএ এর উপ-পরিচালক মোঃ সাইদুজ্জামান দৈনিক ভোলার বাণী’কে বলেন, ভোলা খেয়াঘাট থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটারের মধ্যে ৪ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। ড্রেজিং এর ফলে নদী ভেঙ্গে যায় এমন অভিযোগের ফলে জেলা প্রশাসন থেকে কাজ বন্ধ রাখতে বলছিলো, তাই বন্ধ রেখেছি। কিন্তু প্রশাসন তদন্ত করে দেখেন নদীর কোন ক্ষতি হয়না। তাই উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিআইডব্লিউটিএর প্রতিনিধির সমন্বয়ে আমাদের কে গত ১৯ এপ্রিল কাজ করার অনুমতি দেন। আমরা খুব শীগ্রই ড্রেজিং এর কাজ শুরু করবো। এক সপ্তাহ হলো অনুমতি পেয়েছেন, কাজ শুরু করছেন না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে কোন সদুত্তোর দিতে পারেন নি তিনি।
তবে সূত্রে জানা গেছে, তারা কাজ না করেই চলে যাওয়ার পায়তারা করছে। এদিকে আগামী ১৫ মে এর মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে বর্ষা মৌসূম এলে কাজ করতে পারবে না। এ জন্যই তারা গড়ি-মসি করে সময় পার করছেন।
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান দৈনিক ভোলার বাণী’কে বলেন, বিআইডব্লিউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবসহ আমরা সকল টেকনিক্যাল বিষয়গুলো দেখে তাদের কে (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আশা করি তারা তাদের দায়িত্ব শেষ করে যাবেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।