অবরোধ ও লকডাউনে বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় চরফ্যাশনে ৪২ হাজার জেলে ঘরবন্দি

মহামারি করোনা ভাইরাস ও সরকার ঘোষিত লকডাউনে থমকে আছে দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া কর্মঠ মানুষের ভাগ্যের চাকা। জেলে ও কৃষকসহ অন্যান্য কর্মফেরত দিনমজুরেরা ঘরে বসে অলস সময় পাড় করছে। এতে চরফ্যাশনের প্রায় ৪২ হাজার জেলে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশনের মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী উপকূলের ১৯০ কিলোমিটার এলাকা মৎস্য অভয়াশ্রমে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকল প্রকারের মাছ ধরা বা বেচাঁ-কেনা নিষিদ্ধ করে সরকার। জেলেরা মার্চ থেকে শুরু করে চলতি এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত অবরোধের আওতায় রয়েছে। আর এ অবরোধে থাকা প্রকৃত কার্ডধারী অনেক জেলেই পায়নি সরকারি বরাদ্ধকৃত জেলে পুনর্বাসনের চাল।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী এ অঞ্চলে ৪২হাজার ২৬৪ জন জেলে রয়েছে। কার্ডধারী জেলে রয়েছেন ২১হাজার ২১৫ এবং নতুন নিবন্ধনে (চলমান) জেলে রয়েছেন ১৫ হাজার ২৯০ জন। প্রত্যেক কার্ডধারী জেলে ২ মাসে ৮০ কেজি করে মোট ১৫শ ২২.৬৪ মেট্টিক টন চাল বরাদ্ধ পেয়েছেন। তবে ১৯ হাজার ৩৩ জন কার্ডধারী জেলে এ পুনর্বাসনের চাল পেয়েছেন। চাল না পেয়ে খালি বস্তা হাতে নিয়ে হতাশায় বাড়ি ফিরেছেন কার্ডধারী এবং কার্ড ছাড়া হাজারো জেলে।
সরকারি হিসেবের ৪২ হাজার জেলের প্রায় ৮৪হাজার পরিবার থাকলেও বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী চরফ্যাশনের উপকূলে জেলে রয়েছে প্রায় ১ লাখের মতো। এমন দাবী করেন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলো।
চরফ্যাশন অধিকাংশ ইউনিয়নে জেলেদের দু’মাসের বরাদ্দকৃত চাল খাদ্যগুদাম থেকে ছাড় করে এক মাসের চাল বিতরণ করারও অভিযোগ রয়েছে। প্রতি জেলে ৪০ কেজির পরিবর্তে ৩৮ কেজি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে জিন্নগড় ইউপিতে। সংবাদকর্মীরা সেখানে গেলে তাদের সাথে চেয়ারম্যান মো. হোসেনের কথার-কাটাকাটি হয়েছে বলেও জানা গেছে।
উপজেলার ঘোষেরহাট গ্রামের ইব্রাহীম মাঝি বলেন, সরকারি তালিকায় স্থানিয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানদের রাজনৈতিক সমর্থক এবং পরিচিত স্বজনেরা স্থান বেশি পাওয়ায় প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত রয়েছে গেছে জেলে পুনর্বাসনের বরাদ্ধ থেকে।
উপজেলার মাদ্রাজ, হাজারীগঞ্জ, এওয়াজপুর, নীলকমল ইউনিয়নের একাধিক জেলে বলেন, এ অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ১লাখের মতো জেলে থাকলেও জেলে পুনর্বাসন কার্ড দেয়া হয়েছে মাত্র ২১ হাজার জেলেকে। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৩৩ জন জেলে পেয়েছে সরকারি বরাদ্ধ। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, বাকি জেলেরা কোথায় এবং কার কাছে গেলে পরিবারের খাদ্যের বরাদ্ধ পাবে।
চরফ্যাশন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনিচুর রহমান ত্রাণ জানান, গত ৪ মার্চ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনী তফসীল ঘোষণা হলে ওই ৫টি ইউনিয়নে চাল বিতরণ কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ থাকলেও বর্তমানে তা বিতরণ করা হচ্ছে। এ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে ১৯ হাজার ৩৩ জন জেলে পুনর্বাসনে ১৫শ ২২.৬৪ মেট্টিক টন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, চরফ্যাশনে ২১ হাজার ২১৫ জন কার্ডধারী জেলে রয়েছেন। বর্তমানে নতুন করে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। আরও ১৫ হাজার ২৯০ জন নতুন জেলেকে কার্ড দেয়া হচ্ছে।
চরফ্যাশনের নদী ও সাগর উপকূলে বিভিন্ন জেলা থেকে মৎস্য শিকারে আসা অনেক জেলেই রয়েছে। এ এলাকায় জেলে কার্ডধারী এবং কার্ড ছাড়া প্রায় ১লাখ জেলে থাকলেও সবাইকে জেলে পুনর্বাসনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছেনা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।