সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৭৬

 

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : ভাগ্যই সেরা, (এম.রহমান, পি-এইচ.ডির ডাইরী থেকে) : তার পক্ষ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে এ বিষয় এম. রহমান আর অগ্রসর হয় নি। মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর পরই এম.ফিল গবেষণায় যোগদান করেন। কর্ম জীবনের সন্ধানে চাহিদা অনুপাতে চাকুরী না হওয়ায় চেষ্টা অনবরত চলতে থাকে। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৫ তারিখে ইউনিভার্সিটির ১৯৯ তম সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাত্র ২৭ বছর বয়সে এম.রহমান ‘‘এম.ফিল অ্যাওয়ার্ড’’ লাভ করেন। যা এক বিরল সাফল্য।
এ দীর্ঘ সময়ে মিস নিপা হারিয়ে যাওয়ার পালা। হারিয়েও হারায়নি। সে এক অন্য কাহিনী। হালকা প্রেম আর ভালবাসা, তারই মাঝে অন্তরঙ্গ বন্ধু, সেই থেকে বিয়ে (২০০৬ সাল) চাকুরী জীবনের সহকর্মী বি.হোসেন মাস্টার নামের এক শিক্ষকের সাথে। মন দেয়া নেয়া থেকে উভয়ের ইচ্ছার ভিত্তিতে, পিতা-মাতার অজান্তে প্রেমের মোহে উভয়ের সিদ্ধান্তক্রমে বিয়ে হয় বি.হোসেন মাস্টারের সাথে। মিস নিপার পিতা জানতে পেরে তাদের বিয়ে মেনে না নিয়ে এক পর্যায়ে নিপার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান। এক পক্ষ হয়ে নিপার পরিবার নিপা কর্তৃক ডিভোর্স লেটার পাঠায়। বি.হোসেন সাহেব শত চেষ্টা করেও বিবাহ বন্ধন ধওে রাখতে পারে নি।
এদিকে বি.হোসেন সাহেব প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হয়ে অনাহারে, অর্ধাহারে, বিরহ, বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ঘুম, নাওয়া, খাওয়ার অনিয়ম তার জীবনে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। একে একে দু’বার হারানোর বেদনা তাকে ব্যথিত করে তুললো। শহরের মুসলমান পাড়ায় নিপার বাসার আশ-পাশে দাঁড়িয়ে আপন মনে গান গায়
ও- তুই যারে আঘাত হানিলি রে মনে,
সে জন কি তোর পর-
সে যে তোরি তরে কেন্দে কেন্দে বেড়ায় দেশান্তর,
ওরে বন্ধু সে জন কি তোর পর
শিল্পী আসিফের কন্ঠে-
ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায়,
ভুল না হয় আমার ছিল বেশী,
কখনও ক্ষমা কর নি তুমি
একবার বলে দাও কেন আমার হলে না….
প্রতীক্ষার গান
নয়ন যদি রইবে বেঁচে তোমার পানে চাইব গো।
কইতে কথা পারব যদি তোমারই গান গাইব গো।
জীবনে গেলে পাই না তবু, রূপ সাগরের রত্মকে,
সে আলোকের ঝরণা ধারায় একলা আমি নাইব গো।
নয়ন যদি রইবে বেঁচে তোমার পানে চাইব গো।

এভাবে দীর্ঘ তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পর বি. হোসেন সাহেব অন্য মেয়ে বিয়ে করে সন্তানাদি নিয়ে সংসার জীবন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মিস নিপার অদ্য ( ২০১২ সাল জুলাই মাস) বিয়ে হয় নি।
হাজারো চিন্তা চেতনা, ঘাত-প্রতিঘাত ও হেয় প্রতিপন্নের যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে নিপাকে। পারিবারিক চাপ ও নিজের চাহিদা অনুযায়ী পাত্র না পাওয়া, পাড়ার প্রতিবেশীদের হাজারো মন্তব্য, সব মিলে এক অস্বস্তিকর পরিবেশ। যা কারো নিকট প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যার ব্যথা সে-ই জানে। কবির ভাষায়-
ব্যথিতে বেদন বুজিতে পারে,
কি যাতনা বিষে,
বুঝিবে সে কিসে
দংশেনি যারে।
যৌবনের গান যখন উত্তাল তরঙ্গ তুলে সাগরের মত ঢেউ নিয়ে তার হৃদয় এসে দাঁড়াল। যে উত্তাল তরঙ্গ নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত, শত-প্রাচীরের বাঁধা উপক্ষো করে নিজের গতিতে চলে। যৌবন যে কোন সমাজ মানে না, বাধা মানে না, সকল বিঘœ-বিপত্তি অতিক্রম করে চলে, এ কথা নিপা ভুলেই গিয়েছিল। ঠিক তখনই তাকে একাকী বিয়ের এ দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হলো। এমনি এক চরম মুহূর্তে হিমালয়ের মত ধূসর মেঘ বিশাল এক হুংকার দিয়ে তার গতিরোধ করে দাঁড়াল। যার ফলে হাসি মাখা মুখ মলিন হলো, আজ ৮টি বছর। কে ফুটাবে হাসি আছে কার হিম্মত। বিধাতার লিখন নাযায় ক-ন।
হারানো হাজারো স্বৃতি নিয়ে নিপা একাকী অব্যক্ত বেদনার গান গেয়ে বেড়ায়– (চলবে——)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।