জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৭৪

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : প্রতিভা : প্রতিভা মানব জীবনের পরিপূর্ণ চাবিকাঠি। বিশ্বে যা কিছু কল্যাণকর করে সৃষ্টি করা হয়েছে, তার পিছনে কাজ করেছে প্রতিভাবানদের অবদান। অবস্থার পরিস্থিতি যত জটিল হোক না কেন প্রতিভার যাদুস্পর্শে হয়ে উঠে সরল, সহজ, কল্যাণের অনুকূল। সেজন্যই যুগে যুগে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যেমন মানব সভ্যতা বিকাশে অবদান রেখেছেন তেমনি তারা অপরিসীম সম্মানও লাভ করেছেন।
প্রতিহিংসা ও অন্যায়ভাবে প্রতিভাকে দাবিয়ে বা বিলীন করে দেওয় যায় না। প্রতিভা এমন একটি স্বতন্ত্র গুণ যা সময় সুযোগ প্রজ্জলিত অগ্নি শিখার ন্যয় দাউ দাউ করে জ¦লতে থাকে। এক সময় সে তার ব্যাক্তিস্বত্ত্বা নিয়ে সম্মুখ পানে এগিয়ে যায়। অনেক সময় পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে প্রতিবন্ধকতার মখোমুখি হলেও সেটা ক্ষণস্থায়ী।
প্রতিভার সাহায্যে অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলা যায়। প্রতিভা হলো বিস্ময়কর শক্তি। যা অলৌকিক দান বলে বিবেচিত হয়। প্রতিভার সাফল্যে উৎস প্রতিভার স্পর্শে লোহা যেন সোনা হয়ে উঠে। প্রতিভার গুণে সকল কর্মে বয়ে আনে আশানুরূপ সাফল্য। প্রদিভাকে সাফল্যেও নির্ভরশীল চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেকে প্রতিভাকে বিধাতার মহান প্রাণ হিসেবে গুরুত্ব দেন। ফলে প্রতিভার স্পর্শে যে সাফল্য আসে তন্মধ্যে অনেকে আলোক বর্তিকার সন্ধান খুঁজে পান। যা সুমহান সম্ভ্রান্তশীল।
প্রতিভাশীল মানুষকে ব্যতিক্রমধর্মী মনে করা হয়। প্রতিভা সাধারণ মানুষের চেয়ে পৃথক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করে তোলে। প্রতিভা নিজেই সাবলম্ভী উৎসাহ উদ্দীপনায় সদা জাগ্রত থাকে। আমরাও প্রতিভার মহান সম্মানে সম্মানিত।
কিছু কিছু প্রতিভা একান্ত নিজস্¦ ও স্বতন্ত্র যা বিরল যেমন বিদ্যোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিভা, বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথের প্রতিভাকে তুলনা কারা চলে। নজরুল ইসলাম নন মেট্রিক হয়েও যে প্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। আর প্রতিভা কখনো থেমে থাকে না তা কারো অজান্তে প্রকাশ পেয়ে যায়। এ জন্য প্রতিভাকে কেউ প্রতিবন্ধকতায় দাবিয়ে রাখতে পারে না। এমনকি রাখাও সম্ভব না।

প্রেম প্রকৃতি : প্রেম চির পুরাতন হলেও সাহিত্যে হলেও সাহিত্যে তা বার বার নতুন নতুন রূফে আশা প্রকাশ করে। সারা প্রথিবীর সাহিত্যে তাই এতে প্রেমের গল্পের ছড়াছড়ি। প্রেম তো কত রকমেরই হয়। আর্তের প্রতি মাদার তেরেসার যেই প্রেম, সে কি প্রেম নয়? হ্যাঁ, উহা বিশ^ প্রেম। আমদের কাছে উহা প্রকৃত প্রেম।
আবার নর-নারীর প্রেম দেহকে আশ্রয় করে যা দেহতীত সেও তো প্রেমই। যুগে যুগে কালে কালে কত ভাল লাগা ভালবাসার কাছে আত্মহুতি দিতে হয়েছে। যা ভালবাসা, ভাললাগা থেকে ঘটেছে। নিজের জীবনকে বিপন্ন করে মানুষ তার ভালবাসার লেকের কি করে তার উন্নতি হবে, তার সুখ শান্তির জন্য নিজের প্রাণকে বলি দিয়েছে।
এমনি করে প্রেমের একাধিক রূফরেখা লক্ষ্য করা যায়। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার প্রেম, বন্ধুবান্ধবীর প্রতি একে অপরের প্রেম। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর প্রেম। চলাফেরার সঙ্গী হিসেবে একে অপরের বন্ধন। আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি আত্মার বন্ধন। অবস্থার পেক্ষিতে কারো প্রতি ভালবাসা, যা স্বৃতির পাতায় কথা বলে-
সেই ‘রুশনাকে’ কত আমার কেন জানি আজ বার বার মনে পড়েছে। মেয়েটা দেখতে ছিমছাম ও ডাগর ডাগর চোখ, টানা ধনুকের ভুরু ন¤্র ও বিনয়ী। ওর বাবা ব্যবসায়ী। দুই ভাই দুই বোন। বড় বোনটা বিয়ে হয়ে শ^শুর বাড়ী রংপুরে আছে। দুলাভাই আমেরিকার সাথে বাংলাদেশে মাছের ব্যবসায় লিপ্ত। রুশনা তখন আদমজী কলেজে আমার সাথে আই.এ. ফাস্ট ইয়ারে পড়ছিল। রুশনা ধানমন্ডি সাত নং রোড থেকে আদমজী কলেজে বাসে করে আসা-যাওয়া করত। আমি থাকতাম ফার্মগেটে ইন্দিরা রোডে, মরিচা হাউজের কাছে। রুশনার সাথে আমার যে কি করে ভাব হলো তা আজ তত ভাল করে মনে পড়ে না। তবে রুশনা ভাল নাচ, গান ও অভিনয় জানত।
কলেজের বাৎসরিক উৎসবে নুত্যনাট্য করতে গিয়ে প্রিন্সিপাল সাহেব রুশনাকে সাগরিকার অংশে অভিনয় করার জন্য ডেকে পাঠালেন। রুশনা কিছুতেই রাজি হয় না। আমরা কলেজের মেয়েরা কয়েকজন মিলে ওকে ছেঁকে ধরলাম। আমরা বললাম, তুমি তো ভাল নাচ জান? ও বললো, জানি। তবে আপত্তি করচ কেন? রুশনা বলল, মা বোধহয় আপত্তি করবেন।
রুশনার এইরূপ আনুগত্যবোধ ও শালীন আচরণের জন্য বন্ধু-বান্ধবী সবাই রুশনাপ্রেমী ছিল। দীর্ঘ বছর পার হয়ে গেল রুশনার সাথে আমাদের দেখা নেই। তাকে আমি ভালবাসি। তাই তাঁর স্মৃতি আমার মনে পড়ে। প্রকৃত প্রেমে হচ্ছে অন্তরের অন্তস্থল থেকে কাউকে ভালবাসা। সুখে, দুঃখে, বিপদে ও বিশেষ মুহূর্তে ছায়া’র মত কারো সঙ্গী হয়ে এগিয়ে আসা।

(চলবে——–)।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।