বড় নেতার ছোট দল, ভাঙছে বার বার

বিপদ পিছু ছাড়ছে না ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে। দলটিতে বিভেদ-বিশৃঙ্খলা বেড়েই চলেছে। যদিও গত ১৯ ডিসেম্বর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, ‘গণফোরামে এখন আর কোন ভুল বোঝাবুঝি নেই। কিন্তু গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণফোরাম থেকে ড. রেজা কিবরিয়ার পদত্যাগ কোন্দলের নতুন মাত্রা যোগ করে। এর ওপর ৩ ফেব্রুয়ারি গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কবরে পৃথকভাবে মোশতাক আহমেদ ও মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর দলটির মধ্যে বিভেদ আরো সুস্পষ্ট হয়েছে।
জানতে চাইলে গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকের মৃত্যুবার্ষিকীতে উনার কবরে আমি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। পরে আর কেউ জানিয়েছেন কি তা আমি জানি না।
এদিকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভেঙে যায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। পরে গণফোরামের অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দল এবং পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের মধ্যেই কেন্দ্রীয় কমিটির বিলুপ্তি ঘোষণা করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিলেন ড. কামাল হোসেন। এসময় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিও ঘোষণা করে বিভক্ত গণফোরাম। একটি অংশ গত ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে। একই দিন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন অংশটি কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহ্বান করেছিলো। পরে বিভক্ত গণফোরামের ডাকা পাল্টাপাল্টি কাউন্সিল স্থগিত করা হয়। সারাদেশে কমিটি গঠনের কাজ শেষ করে জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। এই সম্মেলন আগামী এপ্রিল কিংবা মে মাসে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
কাউন্সিল স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, কাউন্সিল বন্ধ করা হয়েছে। আর ড. কামাল হোসেন সারাদেশে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা এখন সেই কাজটি করছি। এই কমিটি গঠন শেষে জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। এটা আগামী এপ্রিল কিংবা মে মাসে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণফোরামের আরেক শীর্ষ নেতা বলেন, কমিটি গঠনের বিষয়ে গত দুই মাস ধরে আমাদের ডেকে নিয়ে কথা বলেন ড. কামাল হোসেন। এই সময় উনি আমাদেরকে একটি কমিটিও দেখান। কিন্তু আমরা সেটা নাকচ করে দিই। পরে ড. কামাল হোসেনসহ ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটির প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। সেটা উনার টেবিলে আছে। কিন্তু সেই কমিটি এখনো পাশ হয়নি।
এদিকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণফোরামে যোগদানের ১৮ মাসের মাথায় দল ছাড়ার ঘোষণা দেন ড. রেজা কিবরিয়া। পদত্যাগপত্র দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। গণফোরাম ছাড়ার পর দেশে থাকলেও অন্য কোনো দলে যোগ দেয়ার কথা এখনো ভাবেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
গণফোরামে যোগ দেয়ার পর দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য করা হয়েছিল রেজা কিবরিয়াকে। পরে তাকে সাধারণ সম্পাদক করেন ড. কামাল হোসেন। এনিয়ে গণফোরামে দেখা দেয় বিভেদ, বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার। এক পর্যায়ে ভেঙেও যায় গণফোরাম। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি ড. কামাল হোসেন দুই পক্ষকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার উদ্যোগ নেন। এর মধ্যেই ড. রেজা কিবরিয়ার পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন।
আওয়ামী লীগে ১৯৯৬-২০০০ মেয়াদের সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আকস্মিকভাবে গণফোরামে যোগ দেন তিনি। ওই নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ভোটে অংশ নিয়েছিল গণফোরাম। সেই নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে হবিগঞ্জে প্রার্থীও হন তিনি।
ড. রেজা কিবরিয়ার পদত্যাগের বিষয়ে মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ড. কামাল হোসেন যেদিন বলেছেন যে, গণফোরামে এখন আর কোন ভুল বোঝাবুঝি নেই। ওই দিন থেকেই ড. রেজা কিবরিয়া দলে নেই। প্রসঙ্গত, গত ৪ মার্চ কেন্দ্রীয় কমিটির বিলুপ্তি ঘোষণা করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন ড. কামাল হোসেন। পরে ১২ মার্চ গণফোরামের ৭১ সদস্যের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন তিনি। যেখানে জায়গা হয়নি দলটির তিন পরিচিত মুখ অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এবং মোস্তফা মহসিন মন্টুর। পরে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভেঙে যায় গণফোরাম। গণফোরাম থেকে বেরিয়ে যাওয়া অংশের নেতৃত্ব দেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু।

সুত্র : বাংলাদেশ জার্নাল।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।