সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৬৫

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত সংখ্যার পর) : হঁসি : তোমার হাসি শোনার আগে আমি মনে করতাম, শুধু মনে করতাম কেন, মনে মনে ভাবতাম, নবাব সিরাজউদ্দৌলা নাকি আলেয়াকে দেখে বলেছিল, এমন মিষ্টি হাঁসি তুমি কেমন করে হাঁস ? ভেবেছিলাম উহা নবাবের একটা নিছক আবেগ, আবেশ বা সাহিত্যিকের নিছক কল্পনা। আজ তোমার হাঁসি শুনে আমি চমকে উঠলাম, কে, কে, এমন করে হাঁসে ? আমার অতীত বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে গেল। সেদিন যখন তোমাকে এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে গেলাম, প্রথমে তোমাকে দেখে মনে হল অনন্ত যৌবনা উর্বশী তুমি। ভাদ্রের ভরা নদীর মত তোমার যৌবন। তেমনি ছলছল কলকল করে তোমার উচ্ছ্বাস ভওে নিয়ে চলছে। দু’টি ডাগর ডাগর আয়ত আঁখি যেন কত বুদ্ধিমত্তায় ছেয়ে আছে। তোমার বাগানে বর্ষার আগমনে কত ফুলের সমারোহ, তার চেয়ে আরো বেশি সমারোহ তোমার অঙ্গে অঙ্গে।
সেদিন মিলাদে তোমায় আনতে গিয়েছিলাম। কেন জানি গেটের দু’পাশে বনলতায় আমার শাড়ীটা আটকিয়ে গেল। কেন জানি গেটের দু’পাশে বেলি ফুলের কেয়ারী থেকে সুন্দর টাটকা তাজা ফুলের গন্ধ আমায় আনমনা করে তুলল। আমি জানি কেমন একটু ব্যাকুল হয়ে গেলাম। বসে থাকলাম তোমার ড্রইং রুমে, বিরাট প্রশস্ত ড্রইং রুম। তোমার কৃষ্টি ও কালচারের গৌরব বহন করে সাক্ষ্য দিচ্ছে, তুমি অনন্ত কালের অনন্ত সৌন্দর্য পিয়াসী। বিদেশীর একটা বড় ছবি দেখলাম। ছবিটা বড় ভাল লাগল। দেখে দেখে আমার যেন তৃপ্তি হল না। সেই সুদূর বিদেশে মনটা আমার গেল চলে। তুমি এলে একটি কুসুমকুঞ্জ, অপরূপ শোভায় মন্ডিত হয়ে। আনারের মত তোমার দু’খানি গাল, ডালিমের মত তোমার দু’খানি ঠোট। আবেগ আবেশ ভরা তোমার দু’টি আয়ত আঁখি। আমি যেন বিমুগ্ধ নেত্রে তোমার পানে চুরি চুরি করে দেখলাম।
মিলাদে তুমি সকলের সাথে হাসলে কথা বললে, এদিক ওদিক তাকালে হঠাৎ কি কোথায় শব্দ করে হেসে উঠলে। আমি যেন আমার পিছনে ফেলে আসা সুদীর্ঘ ১০ বছরের অতীতে চলে গেলাম। সেই ১০ বছর পূর্বে আমি খুলনায় সিরাজউদ্দৌলার ভূমিকায় এক মাস চেষ্টা করেছিলাম আলেয়ার মত মিষ্টি হাঁসি হাসবার জন্য। সে আলেয়ার মত হাসতে পেরেছিল কিনা আমি বলতে পারব না। তবে হেসেছিল, চেষ্টা করেছিল- পেরেছিল কিনা জানি না। খোদা যাকে পাঠায় পৃথিবীতে সুন্দরের অধিকারী করে মানুষের কৃত্রিমতা তার কাছে হাস্যস্পদ। আজ তোমার হাসি শুনে আমার কি মেন হয় জান ? এক গোছা বেলোয়ারী চুড়ি রিনিঝিনি করে বেজে উঠল তেমনি মিষ্টি মধুর যেন, আর শুনি, আরও শুনি। যেন তোমায় দেখে মনে হয় আরো দেখি, আরো দেখি। যখন দু’টো আয়ত চোখ দিয়ে তাকাও আমার মন বলে, আরও আরও চাও, আরো চাও। তুমি যে এত সুন্দর, তা তুমি নিজে জান না। জান না তুমি এত সুন্দর। সাগরের গভীরতা সাগর নিজে জানে না বলেই সাগরের এত গভীরতা।

 

(চলবে———-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।