সর্বশেষঃ

হাজারো পর্যটকে মুখরিত, পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার দাবী

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মনপুরার দখিনা হাওয়া সী-বিচ

নীল আকাশ আর সমুদ্রের ঢেউয়ের মিলনমেলায় এ যেন এক অন্য রকম সমুদ্র সৈকত। এর একদিকে সারিসারি ম্যানগ্রোভ বনের সবুজের সমারোহ আর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নতুন জেগে ওঠা এক কিলোমিটার বালুকাময় সী-বিচ। হাজার হাজার পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠছে নতুন জেগে ওঠা সমুদ্র সৈকতটি ঘিরে। ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুর গ্রামের কোলঘেষে মাস ছয়েক আগে মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলে ঢেউয়ের তোড়ে গড়ে উঠেছে এই সমুদ্র সৈকতটি। স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছে ‘দখিনা হাওয়া সী-বিচ’।


এই ‘দখিনা হাওয়া’ সী-বিচকে ঘিরে মনপুরা দেশের অন্যতম ট্যুরিস্ট স্পট হিসাবে পরিচিতি লাভ করছে। প্রতিনিয়ত এই ট্যুরিস্ট স্পটে হাজার হাজার পর্যটক সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, হাইকোর্টের বিচারক, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা জজ, পুলিশ কমিশনার, ইউএনও সহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা সমুদ্র সৈকতটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলবেঁধে, অনেকে আবার ঢাকা-বরিশালগামী লঞ্চ রিজার্ভ করে এই সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন প্রতিনিয়ত।


দেশব্যাপি পরিচিতির মূল উদ্যোক্তা ঃ দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব অলি উল্লা কাজল ও তার সহধর্মিণী সাথী কাজলের একান্ত উদ্যোগে সী-বিচ’টি দেশব্যাপি পরিচিতি লাভ করেছে। তাদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে দক্ষিণা হাওয়া সী-বিচটির শোভা বর্ধনের কাজ শুরু করে। গত বছরের রোজার ঈদে থেকে এই সী-বিচের আনুষ্ঠানিকতা শুরু। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহ অন্যান্য মাধ্যমে পর্যটকদের আকর্ষণীয় করতে শুরু হয় প্রচার-প্রচারণা। এছাড়াও ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা সহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার জন্য স্থানীয় তরুন রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়।


কীভাবে যাবেন ঃ ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকেল ৫ টায় এমভি ফারহান ও সাড়ে ৫ টায় এফভি তাসরিফ লঞ্চে ডেকে ৩৫০ টাকা ও কেবিনে ১ হাজার দুইশত টাকায় সরাসরি মনপুরায় আসতে পারেন। এছাড়াও বরিশাল থেকে লঞ্চযোগে ভোলার ভেদুরিয়া হয়ে বাসযোগে তজুমুদ্দিন সী-ট্রাক ঘাট। সেখান থেকে লঞ্চ করে সন্ধ্যায় মনপুরায়। অপরদিকে ভোলার ভেদুরিয়া থেকে বাসযোগে চরফ্যাশন লঞ্চঘাট। সেখান থেকে লঞ্চ করে সরাসরি মনপুরার জনতা ঘাট হয়ে দখিনা হাওয়া সী-বিচে যেতে পারেন।


পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ঃ সী-বিচ সংলগ্ন থাকার ব্যবস্থা নেই। তবে উপজেলা শহরে জেলা পরিষদের চারতলা ও দুই তলা দুইটি ডাকবাংলো ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের রয়েছে একটি ডাকবাংলো। এছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে আধুনিক আবাসিক হোটেল। মনপুরা সদর থেকে অটোরিকশা ও ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল করে বিচে যাওয়া যায়। এখানকার খাবার হোটেলে শীতের হাঁস, তাজা ইলিশ, রুপসি মাছ, দধি পাওয়া যায়। এখানকার খাবারের দামও কম।


পর্যটকদের বক্তব্য ঃ মনপুরা দখিনা হাওয়া সী-বিচ’টি এ এক অন্য রকম সমুদ্র সৈকত। যেনো কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে আলাদা মনজুড়ানো। মনপুরাকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা এখন সময়ের দাবী বলে জানান ঘুরতে আসা পর্যটকরা।

জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য ঃ দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান অলি উল্লা কাজল জানান, স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে ‘দখিনা হাওয়া’ সী-বিচের শোভাবর্ধনের কাজ করে যাচ্ছি। সী-বিচটিকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষনা করার দাবী করেন তিনি।


এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান শেলিনা আকতার চৌধুরী বলেন, সী-বিচের শোভা বর্ধনের জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে।


প্রশাসনের বক্তব্য ঃ মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিঞা জানান, জেলা প্রশাসন থেকে গত সেপ্টেম্বরে ভোলার উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। সেখানে মনপুরা উপজেলাকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব রয়েছে। মনপুরায় পর্যটনের অপার সম্ভবনা রয়েছে বলে তিনি আরও জানান।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।