সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৫৭

ড. তাইবুন নাহার রশিদ (কবিরত্ন)

(গত সংখ্যার পর) : (আমি যদি মেঘ হতাম) হেমন্তের প্রাণ চঞ্চল ¯িœগ্ধ প্রভাত। আলতারাঙ্গা সূর্যের সোনালী আভা গাছের পাতা সোনা গলিয়ে দিয়েছে। নীড় ছাড়া পাখিরা হালকা ডানা মেয়ে নীল আকাশের বুক চিড়ে উগে চলছে অজানার সন্ধানে। আকাশের গায়ে হালকা মেঘের আস্তরন। ব্যাকুল হয়ে উঠলে আমার মন। ভাবলাম আহা ! যদি মেঘ হতে পারতাম। তাহলে আমিও শিশির সিক্ত প্রভাতে নীল আকাশে ছড়িয়ে দিতাম আমার রঙ্গিন পাখা দু’টি নীলের ছায়ায়। সাদা সাদা খন্ড খন্ড মেঘের বলাকা উড়ে ভেসে যাচ্ছে আকাশ আর সাগর যেখানে চুম্বনাবদ্ধ। আমি ওদের সাথে কল্পনার রথে চড়ে উড়ে চললাম ¯িœগ্ধ সুন্দর প্রভাতে সূর্যারাগের উপর দিয়ে। দেখলাম সেখানে নিষ্পাপ সমুদ্রের ছায়া। আমিও এ ছায়ার মাঝে মেঘ হয়ে কুয়াশার জাল ছিন্ন করে। হেমন্তের সকালকে রাঙ্গিয়ে দিলাম রঙ্গিন আবির দিয়ে।
সোনার থালার মত হয়ে সকালের সূর্য উঠে আসল পূর্ব আকাশের কোনে। সকালের ¯িœগ্ধ সুন্দর চোখ জুড়ান সরষে ফুলে ক্ষেতে আমার মুগ্ধ করল। নীচে হলুদ উপরে নীল। রাম ধনুর সাতটি রং এ আমায় মোহমুগ্ধ করে তুলল। স্মৃতির খাতায় পুরনো পাতাগুলোর গুঞ্জরিত হলো জানায় বিলাস। উড়ে চললাম দূর হতে দূরান্তরে। হালকা মেঘের মাঝে আমার হালকা ছোট কবুতরের মত শরীর নিয়ে। সমস্ত তুচ্ছ মানবিক আশা, নিরাশা, মান-অভিমান শুদ্ধ আকাশের প্রশান্ত ধারায় কোথায় ধুে মুছে গেল। মাটির ক্ষুদ্র সীমানা ছাড়িয়ে অসীম অনন্ত লোকে হারিয়ে গিয়ে ধন্য হলো মন, মধুর হলো অনুভব, স্বর্গীয় হলো চেতনা। মনে হলো কে যেন আমায় ডাকছে। মনে হচ্ছে কার চিরন্তন বিরহে তার মধ্যে আকুল কান্না যোগাচ্ছে। কি যে এক অনির্বচনীয় বংশী ধ্বনি। এই বিরহের শেষ নেই। এ বিরহ সীমাহীন যেন জন্মান্তরের।
ধীরে ধীরে নিশির ডাকে আচ্ছন্ন মোহগ্রস্তের মত পাতলা পাতলা মেঘ ভর করে কোথায় উড়ে চলছে জানি না। নিরুদ্দেশ অজানা পথিকের মত এ গমন। কত পথ, কত দেশত কত বিশাল এদে সেই ভ্রমন পরিধি তা মহান ¯্রষ্টার অধিক জানেন।
ঝংকার লাগল শরীরের অঙ্গে অঙ্গে জীবন মরণে। আপনা হতে সুর এলো আমার কণ্ঠে। সে সুর ঘুমন্ত নির্ঝরের বুকে কোন অজানা গুহা থেকে আলোক আশিষের মত ঝরে পড়ে। সুরের মায়া পরশে নদীর অতন্দ্র স্বপ্নে আকাশের সূর্য যেন ভাল করে উঠতে তুলে গেল। যদি তার কড়া তেজে শুনতে না পায় এমন গান। আমিও যেন শুনতে পেলাম কে যেন আমায় বলছে সে অনন্ত প্রতিভা তোমার মাঝে রয়েছে তার অপমৃত্যু ঘটতে দিও না; কিছুতেই না।
তুমি শিল্পী, ঘর তোমার জন্য নয়, তোমার জন্যে নগর, তোমার সবটুকু পৃথিবী। শুধু ঘরের প্রদীপ হয়ে জ্বলবার জন্য তোমার জন্ম হয় নি। জন্ম হয়েছে সুরের আকাশে ধ্রুবতারা হবার জন্য। আমি যেন চিৎকার করে উঠলাম কে কে তুমি ? আমার সামনে থেকে সরে যাও। এ অসম্ভব। আমার পক্ষে এমন কথা চিন্তা করা অন্যায়, অপরাধ। আমায় অলিক স্বপ্নের প্রলোভন দেখিও না। আমি যে ঘরের মেয়ে। (চলবে———)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।