সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৫৬

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

(গত সংখ্যার পর) : রেশমী বারবার রেজাকে মিনতি করতে লাগল, আমায় ছেড়ে দাও, আমায় ছেড়ে দাও, আমার বুকে ছোরা মের না। আমি চলে যাচ্ছি, আমি তোমার কিছু চাই না। আমায় ছেড়ে দাও। রেজা বলল, এই তোকে ছেড়ে দিচ্ছি। এই বলে রেশমীর বুকে ছোরা বসিয়ে দিল। রেশমী ভীষণ আর্তনাদ করে উঠল। রেজা আক্রোশের সাথে গোসলখানার শিকল খুলে রক্তাক্ত শরীরে রেরিয়ে এল। রেশমী কাতর আর্তনাদে ঘরটা কেঁপে উঠল। জালে তোলা মাছের মত ছটফট করতে লাগল। কাজের লোকগুলো থানায় গিয়ে খবর দিয়ে এল, সাহেব বিবি সাহেবাকে খুন করেছে।
রেজা বলল, রেশমীর বুকের রক্তে সমস্ত গোসলখানা ছেয়ে গেছে। রেশমী কাতর আর্তনাদে রেজার জ্ঞান ফিরে এল। রেশমী বলল, কে আছ আমাকে একটু পানি দাও। রেজা এবার নিজেই এগিয়ে গেল। রেশমী চিৎকার করে উঠল- না না আর মের না, আর মের না, আমি যাচ্ছি। রেজা হাটু গেড়ে রেশমীকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। আহ ! রেশমী বড় করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। হও করে এপাশ ওপাশ হতে লাগল। ছটফট করে যন্ত্রণায় কালো হয়ে গেল। রেজা তাড়াতাড়ি রিক্সা ডেকে রেশমীকে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেল। রেশমী আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেল। রেজাকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল, আমার মিঠু, ঝরা, সোহেল রইল। ওদের দেখ, আর আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম, বাঁচে পারলাম না।
ডাক্তাররা রেশমীকে সেলাইন দিতে লাগল। বড় ডাক্তারের সাথে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ও দুইজন সিপাহী ঘরে ঢুকে রেশমীর মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। পরমূহুর্তেই একজন ম্যাজিষ্ট্রেট এসে রেশমীর কাছে বসল। বলল, আপনাকে কে মেরেছে ? রেশমী বলল, কেউ মারে নি, আমি নিজেই মরে যাচ্ছি। ম্যাজিষ্ট্রেট বললেন, নিজেই মরে গেলেন ? রেশমী বলল, হ্যাঁ, আমি নিজেই মরে গেলাম। এই বলে রেশমী অজ্ঞান হয়ে পড়ল। ডাক্তাররা অক্সিজেন দিল, ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে এল। ডাক্তাররা রেজাকে বলল, বাঁচবে না তবুও আমরা সবাই চেষ্টা করছি। ছুরিটা হার্টে গিয়ে লেগেছে।

আর———আর———-বাচ্চা পেটে মিঠু, সোহেল, ঝরাকে সাথে করে রেজা আবার ঘরে ঢুকল। তখন রেশমী প্রায়ই শেষ হয়ে এসেছে। আর চোখ খুলে দেখল না। শুধু রেশমীর চোখ দিয়ে বড় বড় করে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল। শেষ রাতের তারার মত সে আস্তে আস্তে করে অসীম অনন্ত লোকে চলে গেল।

(চলবে————-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।