বাংলাদেশ-ভারতের সঙ্গে সাত সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকল সই
শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও প্রটোকল সই সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এসব সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকল সই সম্পন্ন হয়। ভারতীয় হাইকমিশনার ও বাংলাদেশি কর্মকর্তারা এমওইউ ও প্রটোকল সই সম্পন্ন করেন। এসময় সীমান্তে হত্যা প্রত্যাশিত নয় বলে উল্লেখ করেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। এদিকে, দুই দেশের সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিতে বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান, বৈঠকে ৯টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে। শেষ মুহূর্তে বেশ কিছু এমওইউ চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। গত সন্ধ্যায় ঢাকা ও নয়াদিল্লির সূত্রগুলো বলেছে, চারটি এমওইউ সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকিগুলো আজকের বৈঠক শেষে সই না হলেও আগামী দিনে সই করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
জানা গেছে, বিজয় দিবসের ঠিক পরের দিনই এবার ভিন্ন এক আবহে বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শীর্ষ পর্যায়ে সফর বিনিময় কার্যত বন্ধ। গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল। কভিডের কারণে সেই অনুষ্ঠান কাটছাঁট করার পাশাপাশি স্থগিত হয় মোদির সেই সফর। এরই মধ্যে মুজিববর্ষ উদযাপনের সময়সীমা আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মুজিববর্ষ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর বা সুবর্ণ জয়ন্তীÍসব উদযাপন এখন একাকার। দেশ-বিদেশে এসব উৎসব উদযাপনে বাংলাদেশের সঙ্গী হবে ভারত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আজকের বৈঠক থেকে নরেন্দ্র মোদিকে আগামী বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশ সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হবে। এ ছাড়া ঠিক করা হবে মুজিববর্ষ, মুক্তিযুদ্ধ ও কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা।
জানা গেছে, আজ সই হতে পারে এমন সম্ভাব্য এমওইউগুলোর মধ্যে সীমান্ত এলাকায় হাতি সংরক্ষণ, বরিশাল পয়োনিষ্কাশন প্লান্ট, কমিউনিটি উন্নয়ন প্রকল্প ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য। বঙ্গবন্ধুর সম্মানে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ, বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল জাদুঘর, তথ্য-প্রযুক্তি, মহাকাশ খাতে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, পানি, সীমান্ত, বাণিজ্যসহ সব বড় ইস্যু তুলবে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীগুলোর পানিবণ্টন ইস্যু গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হবে। গঙ্গা ব্যারাজ ইস্যু তুলতে পারে ঢাকা। প্রস্তাবিত গঙ্গা-পদ্মা ব্যারাজ নিয়ে ১০ সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ ভারতকে আহ্বান জানাতে পারে। এই ব্যারাজ নিয়ে ভারতের আপত্তি আছে। বিষয়টি যৌথ কারিগরি কমিটির খতিয়ে দেখার কথা।
জানা গেছে, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ আগামী ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ওই চুক্তি নবায়নের জন্য বাংলাদেশ ভারতের কাছে আগাম আশ্বাস চাইতে পারে। এ ছাড়া মনু, মুহুরী, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার, ফেনী ও তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যু নিষ্পত্তিতে একটি কাঠামো তৈরি এবং আগামী মাসেই যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক করার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হতে পারে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের আশ্বাস বাস্তবায়ন দেখার অপেক্ষায় আছে ঢাকা। ভারত এ বিষয়ে কথা দিয়েছে।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ভারতের ঋণের আওতায় বাংলাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি নিয়ে ঢাকার হতাশা আছে। এটিও আজকের বৈঠকে উঠতে পারে। আসামে নাগরিক তালিকা হালনাগাদ করার বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পেতে পারে। খুলনার খানজাহান আলী বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক হাব (যোগাযোগের কেন্দ্র) হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে এয়ার কানেক্টিভিটি চালুর বিষয়ে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হতে পারে। এ ছাড়া খুলনা ও রাজশাহীর মধ্যে সীমান্তবর্তী বড় জেলাগুলোর সঙ্গে ভারতের বাস ও রেল যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
এদিকে, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি আজকের বৈঠক থেকেই চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটে রেল যোগাযোগ উদ্বোধন করবেন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর ওই রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ ও ভারত ৫৫ বছর পর রুটটি আবার চালু করছে। এবারের শীর্ষ বৈঠকে গুরুত্ব পাবে কভিড মোকাবেলায় ভারতের সহযোগিতা। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় ভারতের সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আজকের শীর্ষ বৈঠকেও বিষয়টি গুরুত্ব পেতে পারে। ভারত আগামী মাসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করবে। বাংলাদেশ আশা করছে, ভারত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রস্তাব আনবে। বরাবরের মতোই এবারের বৈঠকের এজেন্ডায়ও সীমান্তে হত্যা প্রসঙ্গটি রয়েছে।
এদিকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করতে ভারতীয় উদ্যোগ প্রত্যাশার কথা জানাবে বাংলাদেশ। মুজিবনগর-নদীয়া সড়ক আবার চালু ও অভিবাসন চেকপোস্ট স্থাপন নিয়েও আলোচনা হবে। তবে এটি উদ্বোধন হতে পারে আগামী বছর মার্চ মাসে। এ বিষয়ে ভারত ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।