ভোলার ১১ তারিখ ও ১২ তারিখের ইতিকথা

১১ তারিখ ও ১২ তারিখ, না এগুলো ক্যালেন্ডারের পাতায় কলাম ও সারিবদ্ধ কোনো মাসের তারিখ নয়। ১১ তারিখ ও ১২ তারিখ আসলে ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়ায় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত দুটি সুপরিচিত স্থানের নাম। ভোলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম চরকালী গ্রামের পর পর দুটি পৃথক স্থানের নাম এই ১১ তারিখ ও ১২ তারিখ।

নতুন কারো কাছে এই নামগুলো আশ্চর্যজনক ও অবাক করা একটি বিষয়। স্থান দুটির নাম শুনলে এই আশ্চর্যজনক নামকরণের অন্তরালের ইতিহাস জানতে কৌতূহলী হয়ে পরেন তারা।

সবুজ শ্যামল এই আদর্শ গ্রামের স্থান দুটির নামকরণের পিছনে রয়েছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। সেদিনের সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয়রা জানান, ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখ দিনটি ছিল বুধবার। সেদিন অবিভক্ত ঢাকার সাবেক সিটি মেয়র ও সাবেক মন্ত্রী ভোলার কৃতি সন্তান মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জুর নির্বাচনী জনসভা। সেই জনসভায় যোগ দিতে একই ইউনিয়নের নাজিউর রহমান এর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে অগ্রসর হয়। এসময় মিছিলে “১২ তারিখ বুধবার যুদ্ধ হবে আরেকবার” এমন স্লোগান দিতে থাকেন বিজেপি সমর্থকরা।

এমন সময় পথিমধ্যে হঠাৎ তাদের মিছিলে বাঁধা প্রদান করে ওই এলাকার আওয়ামী লীগের সমর্থকরা।  এসময় উভয় গ্রুপের মধ্যে বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় গ্রুপেরই বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। ঠিক যেখানে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে সেইদিনের (১২ সেপ্টেম্বর ২০০১) পর থেকে ওই স্থানটির নামকরণ হয়ে যায় ১২ তারিখ।

ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ মাকসুদুর রহমান জানান, সেইদিনের ঘটনায় স্থানীয় আ’লীগ নেতৃবৃন্দ মিছিলে বাঁধা প্রদান করলেও পরর্তীতে বহিরাগত কিছু বিএনপি নেতাকর্মির উস্কানিতে সেদিনের সেই ঘটনা ভয়াবহ রূপ নেয়। তবে ওই ঘটনার পর থেকে আমাদের এ এলাকার নামকরণের পিছনে বাস হেল্পারদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। তারা যাত্রী উঠানো ও নামানোর সময় ১২ তারিখ বলে ডাকাডাকি করতো তারপর থেকে এই জায়গার নাম উঠে গেলো ১২ তারিখ। তবে ১১ তারিখের তেমন কোনো কাহিনী নেই স্থান দুটি পর পর হওয়ায় একইভাবে বাস হেল্পাররাই ১১ তারিখের নামকরণ করেন।

ভেদুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোসলেউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, সেই ১২ তারিখের ঘটনার পর থেকে আমাদের এলাকার নামকরণ হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেই দিনটি আমাদের জন্য একটি বেদনার দিন ছিলো। সেই দিনের ঘটনায় বহিরাগত কিছু বিএনপি নেতাকর্মির হামলায় আমার বড় ভাই তসলিম পাটোয়ারী গুরুতর আহত হন, আমাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনায় আমাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মিথ্যা মামলাও করা হয়।

তিনি বলেন সব কিছুর পরও আমাদের এলাকা একটি শান্তিপূর্ণ এলাকা এখানে বিভিন্ন দলের বিভিন্ন মতের মানুষ একে অপরের সাথে সামাজিকভাবে বন্ধনে আবদ্ধ। ভোলার অভিভাবক সাবেক বানিজ্য মন্ত্রী আলহাজ্ব তোফায়েল আহমেদ এমপি মহোদয়ের একান্ত প্রচেষ্টায় আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ সহ সকল পর্যায়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আরো কিছু উন্নয়ন মূলক কাজ চলমান আছে।

উল্লেখ্য ১১ তারিখ ও ১২ তারিখ এলাকায় কৃষক, শ্রমিক, জেলে, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ পরস্পরের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ন ভাবে বসবাস করে আসছে। একে অপরের বিপদে আপদে ছুটে যান। এলাকার অধিকাংশ কৃষক পেশায় যুক্ত থাকায় এখাকার মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এই এলাকায় ৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬ টি মাদ্রাসা, ২ টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, ১৫  টি মসজিদ, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। জেলার একমাত্র কোল্ড স্টরেজটিও এই এলাকায় অবস্থিত।সবমিলিয়ে একটি আদর্শ গ্রাম ১১ তারিখ ও ১২ তারিখ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।