জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৫৩
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)
(গত সংখ্যার পর) : জগতের কত পাপ, কত অবহেলায় তাদের জন্ম তা মেয়েরা জানে না। জানেন সেই বিশ্ব বিধাতা। কেন তিনি মেয়ে সৃষ্টি করেছিলেন ? এত অবজ্ঞা, এত লাঞ্ছনা, এত অবহেলা, এত মারধর তাদের সহ্যূ করতে হচ্ছে। এক পর্যায়ে রেশমী ও রেজা ছেলে-মেয়ে সহ জলপাইগুড়ি পৌঁছে গেল। জলপাইগুড়ি এসে রেশমীর মন উড়ে গেল সেই পাহাড়ী ঝর্ণার কাছে। ছোট একটা বাসা পেল ওরা বাকালী হাউজের কাছে। ওদের বাসার কাছে থাকত দুটি হিন্দু পরিবার। একই বাড়ী। বাড়ীর মাঝখান দিয়ে পার্টিশন দেওয়া।
হিন্দু পরিবার দুটি বেশ ভাল ছিল। ভদ্র মহিলা দু’জনই রেশমীর বাসায় আসা-যাওয়া করত। রেজা সব সময় মফস্বলে যেত। রেশমী যাওয়ার জন্য জোর আপত্তি করলে বাধ্য হয়ে তাকে নিয়ে যেত। সেই শিবক ব্রীজ ভুটান পাহাড়ের খুব কাছে। দু’পাশে দু’টো পাহাড়। মাঝখানে পাহাড়ী নদী তিরতির করে বয়ে যাচ্ছে। একটা বড় ব্রীজ তার উপর দিয়ে গিয়ে তার গায়ে লেগেছে। দুটো বড় বাঘ ব্রীজের দু’ধারে হা করে দাঁড়িয়ে আছে। মিঠু ও সোহেল তা দেখে কেঁদে অস্থির। রেশমী বাচ্চাদেরকে বুঝাল, ঐটা পাথরের বাঘ, জ্যান্ত নয়। জলপাইগুড়ি থেকে শিরক যেতে সংকীর্ণ কংক্রীটের রাস্তা। দু’পাশ পাহাড়ী নদী। চলমান গাড়ী একটু গতি বাড়ালে শেষ। তবু যেন এ সব সুন্দর জিনিসের কাছে রেশমী মৃত্যুকে ভয় করে না। রেশমী লোক মুখে শুনেছে দার্জিলিং খুব সুন্দর। রেজার কাছে সে প্রায়ই বলত আমি দার্জিলিং যাব। এক সময় রেজা দার্জিলিং দেখার জন্য তারিখ ঠিক করে ফেলল। ৬ই বৈশাখ। বাড়ীর কাছে হিন্দু একটা মেয়ে নাম মৃদুলা, সে একজন গানের শিক্ষিকা, তাকেও সাথে নিল।
একদিন শুভক্ষণে শুভদিনে তারা দার্জিলিং রওয়ানা দিল। রেশমী ওদের সঙ্গে দলেবলে ট্রাকের ভিতর বস্তাবন্দি হয়ে দার্জিলিং গেল। দার্জিলিং-এর সৌন্দর্যকে রেশমী ভালভাবে উপভোগ করতে পারে নাই। রেজা পথে সব সৌন্দর্যই উপভোগ করছে। রেশমীর বয়স তখন আনুমানিক ২০ বছর। রেজা যদি বলত, রেশমী সামনে এসে বস, ওখানে কিছু দেখা যাবে না। তাহলে রেশমী আসত। স্বামীর প্রতি অত জোর করার সাহস রেশমীর তখন হয় নি।
দার্জিলিং নিয়ে রেশমীর পছন্দক্রমে অনেক কিছু কিনতে চাইল, কিন্তু রেজা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ছেলে-মেয়েদের রেজা কিছু কিনে দিল। রেশমীর জন্য কিছুই কিনল না। দার্জিলিং-এ তারা তাদের এক পরিচিত লোকের বাড়ী উঠল। রেশমী দার্জিলিংয়ের পরিবেশ ঘুরে ঘুরে দেখল কি সুন্দর। এ মনোরম পরিবেশ। বিশ্বের সকল সৌন্দর্য দিয়ে মহান আল্লাহ একে গড়েছেন। কাঁচের ও কাঠের ছবির মত লোকের ঘর বাড়ীগুলো। ঢেউ খেলানো পাহাড়ের চুড়ায় সবুজের সমারোহ। কপি, টমেটা, মটরসুটি কোথায় ভরে আছে। বৈশাখের এই খর রৌদ্রে এখানে দারুন শীতের আলোড়ন, ভাবতে বিস্ময় লাগে। রাস্তার বাঁকে বাঁকে উলকাটা ও উলের বই নিয়ে মেম সাহেবরা বসে আছে। উল সে কি রং-বেরংয়ের উল, চোখ যেন জুড়িয়ে যায়। কত সাইজের বাহারে বাহারে কাঁটা চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। না কিনলেও হাতে নিয়ে দেখতে ভাল লাগে।
(চলবে——-)