ভোলায় সিমের বাম্পার ফলন।। ভালো দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা

ভোলায় এবার সিমের ভালো ফলন হয়েছে। ভালো মূল্যে সিম বিক্রি করতে পেরে কৃষকদের মুখে হাশি ফুটেছে। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন সবজি চাষের বিস্তীর্ণ মাঠে সিম তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সবজি চাষীরা। এ বছর ফলন এবং দাম ভালো পাওয়ায় আগামীতেও রবি শস্য ও সবজি চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে কৃষকেরা।

ভোলা জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে চরসামাইয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে পূর্ব চরকালী গ্রেমের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে হয়েছে সবজি চাষ। জেলার অধিকাংশ সবজির চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে এই এলাকার সবজি।

ইতোমধ্যেই সিম, বেগুন, লাউ বাজারজাত শুরু করেছে কৃষকরা। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে নতুন টমেটো বাজারজাত করতে পারবেন বলে কৃষকেরা মনে করছেন। এ বছর সিমের উপযুক্ত দাম পাওয়ায় কৃষকেরা সিম চাষের প্রতি আগ্রহ একটু বেশি দেখাচ্ছে।

চরসামাইয়া ইউনিয়নের সবজি চাষী ইব্রাহিম জানান, এ বছর প্রায় ৩ একর জমির মধ্যে সিমের আবাদ করেছেন। গত ২৫ দিন থেকে তিনি সিম বাজারে বিক্রি করতে পারছেন। মাঠ থেকেই সবজি ব্যবসায়ী তার নিকট থেকে ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে ক্রয় করে নিয়ে যান সিম।

তিনি জানান, প্রতিদিন ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার সিম বিক্রি করছেন। তিনি ৩ একর জমিতে সিম আবাদ করতে ৩ লাখ টাকা খরচ করেছেন। তবে ইতিমধ্যেই ৯০ হাজার টাকার সিম বিক্রি করেছেন। এসময় আরও কয়েক মাস সিম বিক্রি করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।

একই এলাকার আবদুর রহমান জানান, ধানের চেয়ে সবজি চাষে বেশি লাভ হয় তাই কৃষকেরা সবজি বেশি চাষ করে। এক একর জমিতে ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকার সিম বিক্রি হয় বলেও জানান তিনি।

অপর কৃষক রুবেল জানান, আগাম জাতের সিম আবাদ করেছি। এ পর্যন্ত ৫০শতক জমির সিম বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার টাকার। তবে আরও ৫০ হাজার টাকার সিম বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি। পাশাপাশি তিনি লাউ ও টমেটো আবাদ করেছেন আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে তিনি টমেটো বাজারজাত করতে পারবেন।

এছাড়াও একই এলাকার মামুন ২ একর, মফিজ ২ একর, কামাল ৩ একর ও মনির দেড় একর জমিতে নল ডোক, কাতলা(সাদা) ও লাল জাতের সিম আবাদ করেছেন। সিমের পাশাপাশি কেউ কেউ আবার লাউ, করল্লা, বরবটি, বেগুন ও টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছেন। প্রত্যেকের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। ফসলে কোনো রকম রোগ বা ভাইরাস আক্রমন না করলে সিম চাষের মাধ্যমে লাভবান হতে পারবেন এমনটা প্রত্যাশা সবজি চাষিদের।

এদিকে ভালো ফলনে খুশি হলেও সরকারি ভাবে কৃষকদেন জন্য বরাদ্দকৃত সার বা বীজ কিছুই পাচ্ছেন না প্রকৃত কৃষকরা। এমন অভিযোগ তুলে কৃষকরা জানান আমাদের ফসলে বিভিন্ন ধরণের রোগ দেখা দিয়েছে, কুয়াশার কারণে সিমের ফুল ঝরে যাচ্ছে কিন্তু কৃষি অফিস থেকে কোনো লোক এসে আমাদের সঠিক পরামর্শ দিচ্ছে না। আমরা নিজেরাই ফসলের সমস্যার কথা বলে দোকান থেকে ঔষদ এনে ফসলি গাছে ছিটচ্ছি।

চরসামাইয়া ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সেলিম বলেন আমি নিয়মিত কৃষকদের মাঠ পরিদর্শন করি। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ৩ জন করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও এই ইউনিয়নে আমি ছাড়া আর কেউ নেই তাই অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে আমার একাই সম্পূর্ণ ইউনিয়ন সামাল দিতে হয় তাই হয়তো প্রতিদিন সব ওয়ার্ডে যাওয়া সম্ভব হয় না। কৃষকদের চাষাবাদে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদানের জন্য আমি ইউনিয়নে ১৫টি কৃষক মাঠ স্কুল ক্লাস নিয়েছি। প্রত্যেক কৃষকের নিকট আমার ফোন নম্বর আছে তারা আমার সাথে যোগাযোগ না করেই দোকান থেকে বিভিন্ন ঔষধ এনে ফসলে ব্যবহার করে।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবছর জেলায় মোট ১৬১৫ হেক্টর জমিতে সিমের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় ২৬০ হেক্টর, দৌলতখান উপজেলায় ২৮০ হেক্টর, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ২২০ হেক্টর, তজুমদ্দিন উপজেলায় ৫৫ হেক্টর, লালমোহন উপজেলায় ৬৫ হেক্টর চরফ্যাশন উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর ও মনপুরা উপজেলায় ৮৫ হেক্টর জমিতে সিমের আবাদ করেছেন সবজি চাষরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপপরিচালক মোঃ রাশেদ হাসনাত জানান, গতবছর জেলায় ১৩৫০ হেক্টর জমিতে সিমের আবাদ হয়েছে এবং হেক্টর প্রতি সিমের ফলন হয়েছে ২১ মেট্রিক টন। তবে এবছর জেলায় মোট ১৬১৫ হেক্টর জমিতে সিমের আবাদ হয়েছে ফলনও তুলনামূলক ভাবে গতবারের চেয়ে ভালো হয়েছে। সিম যেহেতু উঁচু জায়গায় চাষ করা হয় তাই কোনো ক্ষতি হয়নি। কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন তবে কৃষকরা যদি এভাবে শেষ সময় পর্যন্ত ভালো দাম পায় তাহলে আশা করা যাচ্ছে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং সিম চাষে আরও আগ্রহী হবে। কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা জেলার বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়ন গুলোতে নিয়মিত চাষাবাদের মাঠ পরিদর্শন করছেন এবং কৃষকদের সঠিক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।