সর্বশেষঃ

৪ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের পথে মুক্তিযোদ্ধাদের যাত্রা শুরু

এদিন থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের পথে মুক্তিযোদ্ধাদের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত হতে থাকে। এদিনে, ৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডার লে: কর্নেল সি আর দত্ত এবং জেড ফোর্সের মেজর জিয়া উদ্দিনের নেতৃত্বে সিলেটের কানাইঘাট দখলের পর এলাকায় শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করেন। ৩ নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী শমশের নগর বিমান বন্দর এবং আখাউড়া রেল স্টেশন দখল করে। ৮ নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী মেহেরপুর দখল করে যশোরের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। ১১ নং সেক্টরে যৌথ বাহিনী বড় ধরনের আক্রমণ চালিয়ে পাকিদের শক্ত ঘাটি কামালপুর বিওপি দখল করে। পাকবাহিনী দিনাজপুরের ফুলবাড়িয়া রেল স্টেশন দখলে রাখার সর্বাত্মক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পাকিস্তান নৌ-বাহিনীর সাবমেরিন পিএনএস গাজী বিশাখাপত্তম বন্দরের কাছে আক্রান্ত হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
ভারতীয় বিমান এবং নৌবাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো বার বার ঢাকা, চট্টগ্রাম, চালনা প্রভৃতি এলাকায় সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ চালায়। ঢাকা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি। এই ঘাঁটিতেই ছিল তাদের জঙ্গি বিমান। পাক বিমান বাহিনীতে ছিল দুই স্কোয়াড্রন (২৮টি) জঙ্গি বিমান। এক স্কোয়াড্রন চীনা মিগ-১৯ আর এক স্কোয়াড্রন মার্কিনী স্যাবার জেট। প্রথম রাতের আক্রমণেই পাকিস্তানের বিমান বহরের প্রায় অর্ধেক বিমান ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ভারত ও বাংলাদরশ বাহিনীর মিলিত প্রত্যাঘাত, ভারতীয় বিমানবাহিনীর আক্রমণ ও নৌবাহিনীর অবরোধের মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের চরিত্র এভাবে এদিন থেকেই আমূল পরিবতির্ত হয়।
এদিকে, রণাঙ্গনে যখন যুদ্ধ চলছিল তখন আরেক যুদ্ধ চলছিল জাতিসংঘে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের পক্ষে মার্কিন প্রতিনিধি সিনিয়র জর্জ বুশ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে দাবি করা হয়, এ মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে। ভারতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারও তখন চরম উৎকণ্ঠায়। ১৯৭১ সালের এদিনে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে লিখিত এক পত্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করেন। পত্রে তারা উল্লেখ করেন, আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিতে চাই যে, উভয় দেশের এই ভয়াবহ বিপদের সময় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ আপনাদের সঙ্গে রয়েছে।
পাকিদের দোসর স্বাধীনতা বিরোধীরা অবশ্য তখনো হাল ছাড়েনি। জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আবুল আলা মওদুদী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, প্রতিটি দেশপ্রেমিক মুসলমান প্রেসিডেন্টের পেছনে রয়েছে। দুই জামাতি শুয়রের এদিন দুপুরে ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে এক বেতার ভাষণে ভারতের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করে বলেন, আমরা অনেক সহ্য করেছি। এখন শত্রুর প্রতি চরম ধ্বংসাত্মক প্রত্যাঘাত হানার সময় এসেছে।
রাওয়ালপি-িতে একজন সরকারি মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তানের উভয় অংশে যুদ্ধ চলছে। পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় চাপ মোকাবিলা করা হচ্ছে। মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেবে বলে চীন ওয়াদা করেছে। চীনের অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চি পেং ফেই এ দিনে পাকিস্তানের ওপর ভারতীয় হামলার নিন্দা করে ইসলামাবাদকে দৃঢ় সমর্থন দেয়ার অঙ্গীকার করেন।

 

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।