ভোলায় শেখ ফজলুল হক মনি’র ৮১তম জন্মবার্ষিকী পালিত
ভোলায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি’র ৮১তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। দিনটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার বিকেলে ভোলা পৌরসভা চত্বরে জেলা যুবলীগের আয়োজনে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ভোলা জেলা যুবলীগের সভাপতি ও পৌর মেয়ব মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা দোস্ত মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক আরজু, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজিবুল্লাহ নাজু, সাধারণ সম্পাদক শাহ্ আলী নেওয়াজ পলাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিশ্বর হাওলাদার, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন লিটন, সদর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মনির মিয়াজী, পৌর কাউন্সিলর মাইনুল ইসলাম শামীম, যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান, হিন্দু-বৈদ্ধ্য-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের আহবায়ক অবিনাশ নন্দীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। আলোচনা সভা শেষে দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৩৯ সালের ৪ ডিসেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে জন্মগ্রহন করেন তিনি। পিতা মরহুম শেখ নূরুল হক বঙ্গবন্ধুর নিকটতম আত্মীয় ও ভগ্নিপতি। মা শেখ আছিয়া বেগম বঙ্গবন্ধুর বড় বোন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঘাতকের বুলেটে নিহত হন শেখ মনি। তিনি ঢাকার নবকুমার ইন্সটিটিউট থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯৫৮ সালে তৎকালিন জগন্নাথ কলেজ (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন।
১৯৬০ সালে তিনি বরিশালের বিএম কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। শেখ মনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ এবং ১৯৬৩ সালে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন।
বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত সকল আন্দোলন সংগ্রামে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা একটি নাম শেখ ফজলুল হক মনি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালনের নিমিত্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে দেশের কল্যাণকামী যুবসমাজকে সাথে নিয়ে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন শেখ ফজলুল হক মনি এবং তিনি এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
১৯৬০ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত শেখ মনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি ছয় মাস কারাভোগ করেন। ১৯৬০-৬৩ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় তৎকালিন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের জোরালো আন্দোলনে বলিষ্ঠ হাতে নেতৃত্ব দেন শেখ মনি। ১৯৬২ সালে তৎকালিন পাকিস্তানী সামরিক স্বৈরাচার আইয়ুব খানের চাপিয়ে দেয়া শরীফ কমিশনের অগণতান্ত্রিক ও শিক্ষার্থী স্বার্থবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় তিনি গ্রেফতার হন এবং ছয় মাস কারাভোগ করেন।
বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা বাস্তবায়নে জোরালো ভূমিকা পালন করেন শেখ মনি। বঙ্গবন্ধু তখন কারাগারে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ৬ দফার পক্ষে সারাদেশ ব্যাপী হরতাল সফল করে তোলার ভুমিকায় ছিলেন শেখ মনি। ছয় দফা আন্দোলনে এ অগ্রণী ভূমিকা পালনের দায়ে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয় এবং তিনি কারারুদ্ধ হন। দীর্ঘ কারাবাস শেষে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর তিনি মুক্তি পান।
৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করলে দেশ মাতৃকার টানে বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন শেখ মনি। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের লক্ষ্যে দেশের মুক্তিকামী যুবকদের নিয়ে গড়ে তোলেন মুজিব বাহিনী। তিনি ছিলেন মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক। তিনি দৈনিক বাংলার বাণী, বাংলাদেশ টাইমস এবং বিনোদন পত্রিকা সাপ্তাহিক সিনেমার সম্পাদক ছিলেন।