সর্বশেষঃ

জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৫২

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন)

(গত সংখ্যার পর) : মহিলা সমিতির কাজকর্ম ততটা গতিশীল ছিল না। মেয়েদের ব্যাপারে হরেক রকম অসুবিধা তাদের থাকে। ছেলে-মেয়ে, রান্না-বান্না, স্বামী, ঘর-সংসার সব ঝামেলা মিটিয়ে তাদের সময় নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও রেশমী মিটিং এ আসে। ভাল লাগে বিচিত্র মহিলার সমাবেশ। এক ভদ্র মহিলার সাথে রেশমীর খুব আলাপ হল। ভদ্র মহিলার ৭টি মেয়ে। ভদ্রলোক উকিল, কাটনা পাড়ায় তার বাড়ী। বড় মেয়েটা স্কুলে পড়ে তার নাম আরজু। বড়টা ক্লাস টেনে, মেঝোটা ক্লাস নাইনে। তার নাম নাজু, নাজুর গায়ের রং খুব সুন্দর, টানাটানা চেহারা, দেখতে সুন্দরী। বড়টা সুন্দরী না হলেও স্বাস্থ্য চেহারা মন্দ নয়। আরজুর না কি বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের রাতেই বর তাকে দেখে পালিয়েছিল। মেয়েটাকে দেখলে বড় মায়া হয়। কত অসহায়, কত নিরূপায় এই বিংশ শতাব্দীর যুগেও আমাদের দেশের মেয়েরা।
সাজু সুন্দরী বলে সাজুর বিয়ে হল এক বড় ঠিকাদারের কাছে। বেশ স্বর্ণালংকার নিয়ে সাজুকে সাজিয়ে নিয়ে গেল। কিছুদিন হাসি-খুশিতে বিভিন্ন জায়গায় ঘরে বেড়াতে লাগল। কিছু দিন পর ছোট বোন নাজু তার বাড়ী বেড়াতে গেল। তার স্বামী রাতের অন্ধকারে নাজুকে নিয়ে পালিয়ে গেল। ঘরে পড়ে রইল বিবাহিতা স্ত্রী। নাজুর মা খবর পেয়ে থানায় খবর দেয়। তার নামে ওয়ারেন্ট যায়। তাকে নাজু সহ ধরে নিয় আসে। সাজু এ স্বামীর ঘর করতে অসম্মতি জানায়। নাজু, সাজু আরজু এ ৩টি মেয়েই ভদ্র মহিলার ঘরে পড়ে থাকে। ভদ্র মহিলা এখন শুধু নামাজ পড়ে এবং ঘরে পড়ে থাকেন। একটি ছেলে, ছেলেটা স্কুলে পড়ে। সাজু, নাজু, আরজু ওরা বাড়ী বসে মেট্রিক দেওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে। বর্তমান যুগে যে আবহাওয়া তাতে মেয়েদের আত্মনির্ভরশীল না হলে চলে না।
রেশমীর দোষ রেজার কাছে সব সময় লেগেই আছে। কথায় আছে, যারে দেখতে নারি তার বাঁকা। ছেলে-মেয়ে ৩টি আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠল। রেজা এখন রেশমীকে ছেলে-মেয়েদের সামনে মারে না। ঘরে ভিতরে দরজা বন্ধ করে বাচ্চাদের আড়ালে মারে। ছেলেটা-মেয়েটা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কাঁদে। রেশমী মার খেয়ে কতক্ষণ কাঁদে। তারপর চুপ করে থাকে। রেশমী বের হয়ে আসলে ছেলে-মেয়েরা তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। রেশমী ছেলে-মেয়েদের সোনামুখ দেখে সকল দুঃখ, বেদনা লাঞ্ছনা ভুলে যায়। এবার মার খেয়ে রেশমী শয্যাশায়ী হয়ে পড়ল। হাতে, কোমরে, মুখে নীল দাগ। ডাক্তার দেখতে এসে বলল, আপনার হাতে কিসের দাগ ? রেশমী বলল ছেলে দুটি লাঠি নিয়ে মারামারি করছিল। তার আঘাত লেগেছে। ডাক্তার বলল, এ হাসি কি বোকার না বুদ্ধিমানের রেশমী বুঝতে পারল না। রেশমী রবীন্দ্রনাতের দৃষ্টিদান গল্প পড়েছিল। মেয়েদের এত ছলনার প্রয়োজন, মা হয়ে কোলের ছলেকে ভুলিয়ে রাখতে হয়। স্ত্রী হয়ে স্বামীকে ভুলিয়ে রাখতে হয়। মেয়ে জন্ম লাভ করে এত ছলনার প্রয়াস।
রেশমী আস্তে আস্তে জানল সে আবারও অন্তঃসত্ত্বা। রেশমী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। যার নিজের গতির ঠিক নেই তার আবার সন্তান। এ সন্তানের কি হবে ? সে তো মানুষ হবে না। এদের রক্তের শিরায় শিরায় থাকবে অত্যাচারের লেলিহান শিখা। রেশমী প্রায় সময় শুয়ে থাকে। উঠতে ইচ্ছে করে না। ব্যথায় ব্যথায় শরীরের হাড়গুলো যে গুড়া হয়ে গেছে। ঝি-চাকরেরা এসে সহানুভূতি প্রকাশ করে। রেজা তখনো স্বেচ্ছায় কোন ডাক্তার ডেকে দেখায় না। রেশমী নিজেই ডাক্তার ডাকে-চিকিৎসা করায়। একটু ভাল হলে বাড়ী গিয়ে নিজের গয়না বিক্রি করে চিকিৎসা চালায়। বাবার বাড়ী থাকা অবস্থায় রেশমী শুনতে পায় রেজা জলপাইগুড়ি বদলী হয়েছে। রেশমী সাথে সাথে বগুড়ায় চলে আসে। বগুড়া থেকে বিদায়ের দিনে ওখানকার মহিলারা তাকে বিদায় পার্টি দিল। সঞ্চয়িতা-সঞ্চিতা, বিশ্বনবী এসব ভাল বই উপহার দিল। গলায় পরিয়ে দিল একটা বহু যতেœ দাঁথা মালা। (চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।