সর্বশেষঃ

বোরহানউদ্দিনে গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হলোনা নিহত হাসনাইন’র

আমার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, আমাকে ঢাকা, কক্সবাজার নিয়ে গুড়াবে আজ আমার বাবা কবরে একা শুয়ে আছে, আমাকে কে স্বপ্ন দেখাবে ? কে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে। আমি কোথা গেলে আমার বাবাকে বুকে জড়িয়ে নিবো ? কথাগুলো একজন সন্তান হারা পিতার আর্তনাদ, পৃথিবীতে যতগুলি কষ্ট আছে তার মধ্যে নিজ সন্তানের লাশ কাধে নেয়া সবচেয়ে বেদনাদায়ক। আর এই আর্তনাদগুলো ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনায় নিহত স্থানীয় কলেজ পড়–য়া সন্তান হাসনাইনের পিতা মো: বাচ্চু হাওলাদারের।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র হাসনাইনকে তাদের ঘরের কাছেই কবর দেয়া হয়েছে শেষ গোসলের জায়গাটা এখনো পরিষ্কার করা হয়নি, বাড়িতে আত্বীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশি বিষন্ন মুখে তাকিয়ে আছে।
নিহত হাসনাইনের ভাই জানান, আমরা ৮ ভাই ১ বোনের মধ্যে হাসনাইন ৭ম। সে বোরহানউদ্দিন হাফিজ ইব্রাহিম কলেজের মানবিক শাখায় দ্বাদশ শ্রেনীতে পড়ে। তার স্বপ্ন সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। আমার কাছে যখন পড়ার খরচ চাইতো আমি দিয়ে দিতাম। আমরা মেঘনা নদীর ভাঙ্গনে ভিটে মাটি হারা হয়ে বাটামারা ৭ নং ওয়ার্ডে বাড়ি করেছি।
আমি ঢাকায় ব্যবসা করি। আমাদের সব ভাই বোন গ্রাজুয়েট, শুধু সে দ্বাদশ শ্রেনীতে পড়তো। শুক্রবার সে আমাদের বাড়ির পার্শ্বে খানকায়ে বশিরিয়া মাহফিল শেষে বাড়ি ফেরার পথে ফরাজী বাড়ির দরজায় নসুর দোকানে ফ্লেক্সিলোড করতে দাড়িয়েছিলো তখনই দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে সেখানে উপস্থিত জনতা ও এলাকার লোকজনের সাথে আলাপ করলে জানা যায়, গ্যাস বেলুন বিক্রেতা নিরব হোসেন এর গ্রামের বাড়ি ভোলা লঞ্চঘাট এলাকায়। সে বোরহানউদ্দিন হাওলাদর মার্কেট আব্দুল রবের জামাই। ভোলার বিভিন্ন বাজারে বেলুনে গ্যাস ভরে বিক্রি করে। শুক্রবার সে ফরাজী বাড়ির দরজায় সিলিন্ডারে বিভিন্ন কেমিকেল ভরে গ্যাস তৈরি করে তা বেলুনে ভরে বিক্রি করে। ঘটনার দিন দেখেছি সিলিন্ডার অনেকবার গরম হয়ে গেছে এবং তাৎক্ষনিক সে পুকুর থেকে পানি নিয়ে এসে সিলিন্ডারে ঢেলে ঠান্ডা করতো।
রাতে যখন সে মাহফিলে বেলুন বিক্রি করে আবার এসে বেলুনে গ্যাস ভরতে ছিলো তখন আমরা হঠাৎ বোমের মতো শব্দ শুনতে পাই এবং দৌড়িয়ে নুস মিয়ার দোকানের কাছে গিয়ে দেখি বেলুন বিক্রেতার ছিন্নভিন্ন লাশ পড়ে আছে এবং অদুরে ফ্লেক্সি দোকানের সামনে তাদের এলাকার হাসনাইন মৃত অবস্থায় পড়ে আছে ও অনেকের চোখ মুখ আগুনে পুড়ে গেছে। তাৎক্ষনিক ১৫ জনের মতো আহতদের বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য স্থানীয়রা নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে দেখা যায় সিলিন্ডার বিষ্ফোরন হয়ে উপওে উঠে গিয়ে বিদ্যুতের তার দলা-মোছা হয়ে যায় এবং একজন প্রতিবেশির বারান্দার টিন ছিদ্র হয়ে নিচে পড়ে বড় গর্ত হয়ে যায়। এলাকাবাসি এ ধরনের ঝুঁকিপুর্ণ কাজের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবী জানায়।
এ ব্যপারে বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান দুর্ঘটনায় নিহত ২ জনের একজন বেলুন বিক্রেতা ও স্থানীয় একজন হাসনাইন তারা কেউ অভিযোগ না দেওয়াতে তাদের লাশ পরিবারের কাছে দাফনে জন্য হস্তান্তর করা হয়।

 

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।